অরিজিৎ মন্ডল
কৃষকরা চেয়েছেন ক্ষতিপূরণ। চেয়েছেন বাসস্থান। সেই দাবিতে টানা লড়ে গিয়েছেন উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নয়ডা থেকে গাজিয়াবাদের কৃষকরা। আদিত্যনাথের বিভাজনের রাজনীতিকে রুখে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন হাইওয়ে। সেই আন্দোলনের নেতা রূপেশ ভার্মা বলছেন, বাম আন্দোলন এবং সিপিআই(এম)’র স্বাধীন বিকাশ কৃষক আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে আরও।
টানা ২৭ দিন জেলে ছিলেন রূপেশ ভার্মা, সারা ভারত কৃষকসভার গৌতমবুদ্ধ নগর জেলা সভাপতি। জেলে ছিলেন তাঁর সঙ্গে আরও ১০৮ কৃষককর্মী। সিপিআই(এম) ২৪ তম পার্টি কংগ্রেস নিয়ে জানিয়েছেন তাঁর বক্তব্য।
উল্লেখ্য, সিপিআই(এম) এবং বাম আন্দোলনের স্বাধীন শক্তির বিকাশেরত লক্ষ্য জানানো হয়েছে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক পর্যালোচনা রিপোর্টেও।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে গ্রেটার নয়টা এলাকায় কৃষক আন্দোলনে শুরু হয়। গত ২ ডিসেম্বর কৃষকরা দিল্লির উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে রওনা হন। পুলিশ প্রথমেই তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান। পরে ফের ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। এখানেই পুলিশ বলে আপনারা এখানেই বসে অবস্থান বিক্ষোভ করুন। আমরা ৩-৪ দিনের মধ্যেই আপনাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি কথা বলাবো। অবস্থান করার পরের দিনই অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্ব সহ অন্যান্যদের।
রূপেশ ভার্মা জানাচ্ছেন, "অবস্থান ক্ষেত্র থেকেই মোট ১৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু পরের দিন পুলিশ ছাড়তে তাদের বাধ্য হয়। তাঁরা ফের আরও বেশি সংখ্যায় জমায়েত করে ওই অবস্থানেই তারা ফিরে যান। কিন্তু আবার সেই দিন রাতেই ফের তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২৭ দিন তাঁদেরকে জেলে আটকে রাখে। শুধু তাই নয় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কৃষক, গ্রামের মহিলাদেরও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর যাতে অবস্থান-বিক্ষোভ না হয় তার জন্য পুলিশ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করে। এমনকি গ্রামের কৃষক নেতাদেরও ফোন করে করে পুলিশ ধমক দিতে থাকে।
ধৃত ১০৮ জন কৃষকের ওপর খুনের চেষ্টা ধারা, অবৈধ রাস্তা বন্ধের চেষ্টা সহ ইত্যাদি ধারায় তাদের উপর পুলিশি কার্যক্রম শুরু করে। জেলের মধ্যেও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে পুলিশ। জেলেই প্রতিবাদ হলে তা বন্ধ হয়। রূপেশ জানাচ্ছেন, স্থানীয় জেলা প্রশাসন জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে আন্দোলনকারী কৃষকদের জেলের মধ্যেও দমন পীড়ন চালাও।
তিনি বলছেন, যে আন্দোলন আমরা তৈরি করেছিলাম তাই এক বৃহৎ রূপ নেয়। এবার প্রশাসন কপালে চিন্তা হয় যে এই আন্দোলন যদি আরো বাড়তে থাকে তাহলে সমস্যা তৈরি হতে পারে ওই এলাকায়। তাই যে কোনভাবেই আন্দোলনকে রক্ষার জন্য প্রশাসন উদ্ধত হয়। পুলিশ দিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু রূপেশ জানাচ্ছেন আমরা কৃষকদের সাথে প্রতিনিয়ত কথা বলছি তাদের ভয়ের পরিবেশ কাটিয়ে তাদেরকে ফের আন্দোলনমুখী এবং লড়াইয়ের ময়দানে নামানোর চেষ্টা করছি। এখনই বৃহৎ আন্দোলন তৈরি করতে আমাদের একটু সময় লাগবে কিন্তু আমরা সব রকমেরই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলছেন, আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে কৃষকদের মধ্যে গিয়ে তাদেরকে আবার আন্দোলনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।
উত্তর প্রদেশের শিল্প দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের সমস্ত দাবি মেনে নিতে এখনই রাজি নয়। তাই আমরা এখনো লড়াই সংগ্রাম করার পথেই রয়েছি।
উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রদায়িক বিভাজন কৃষক আন্দোলনের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলছে?
তা নিয়ে বলতে গিয়ে রূপেশ ভার্মা জানাচ্ছেন, আমাদের আন্দোলনে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ছাপ ফেলতে পারেনি। গ্রামের কৃষক বা গ্রামের সাধারণ মানুষকে এইভাবে ভাগ করা যায়নি। বরং এই আন্দোলন সকলকে জুড়ে নিয়েছে।
Comments :0