MUKTADHARA | STORY — UPEKHIT SHARMA — 11 MARCH 2024

মুক্তধারা | গল্প — লখীর রূপকথা | উপেক্ষিৎশর্মা — ১১ মার্চ ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  STORY    UPEKHIT SHARMA  11 MARCH 2024

মুক্তধারা | গল্প

লখীর রূপকথা
উপেক্ষিৎশর্মা

কচি পেয়ারা পাতার গন্ধে, পাকা নিম ফলের তিতকুটে স্বাদে আর শাল গাছের গুঁড়িতে গজিয়ে ওঠা উইঢিবি ভাঙতে ভাঙতে ফুরফুরে সারল্য মেখে বেড়ে উঠছিল লখী। এভাবেই বেঁচে থাকতে চেয়েছিল ও। কিন্তু...
কিন্তু তেরোতেই লখী ঋতুমতী। আস্তে আস্তে বুকের ওপর ভারী ঝঞ্ঝাট। মায়ের দীর্ঘশ্বাস আর বাবার কপালে ভাঁজ। আর… 
আর লখীর সামনে দোদুল্যমান মাদক আকাশ। দূরে রাজপুত্তুরের হাট খোলা বুকের খাঁচা।  কৈশোরের টগবগানি। লাগাম ছেঁড়ার দুর্মদ উদ্দীপনা। সেই উন্মাদনায় ললিপপ লোভনীয় আদুরে ডাক। সাড়া দিতে সময় নেয়নি লখী। লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে দুহাত জাপটে ধরে উড়ে যেতে চেয়েছিল রাজপুত্তুরের পক্ষীরাজ পালঙ্কে। সেই আনন্দের শিহরনে কখন যেন কচি পেয়ারা পাতার আমুদে গন্ধ আর টুসটুসে নিমফলের তিতকুটে স্বাদ আস্তে আস্তে অভিশপ্ত রূপকথা হয়ে গেল। আর, আর উইঢিবি ভেঙে বেরিয়ে এল বিষধর ফণা। লখীর মনে মস্তিষ্কে আনচান ভাব। সারা শরীরে যেন জোয়ার নেমে এল। এই জৈবনিক উজ্জ্বলতা আড়াল করার আর কোনো জো রইল না। শুরু হল পাড়াপড়শির ফিসফিসানি আর ঘরের মধ্যে গুমসানি। অগত্যা ওর বাবা লখীকে জিজ্ঞেস করল,
_ হঁ রে, ছেল্যাট’ কে বটে? মাথা নীচু করে লখী বলল,
_উ গাঁয়ের সুবোধবাবুর বেটা।
_ ই বাবা! উ তো শুনেছি দুবাই এ থাকে? জরির কাজ করে। উ তো চলে গেলছে।
_আমাকে কিছু বলে নাই। 
_মর ইবার। বুঝ ঠ্যালা। মেইয়া ফুরফুর করে উড়ছে। কুনো বাঁধবাঁধন নাই।  লাজসরম নাই। বাবার রাগের আর ক্ষোভের আগুনে ঝলসে খাক হয়ে যাচ্ছে লখীর ফুরুফুরে শৈশব আর টুসটুসে যৌবনের স্বাভাবিক সত্তা। অবশেষে নেমে এল বাবার ফরমান,
_লখী, আজ থিকে ইদিক- উদিক কুথাও যাবিক নাই। গেলছিস কি থাবড়ায় গাল লাল করে দিব। ই আমার এক কথা। মুনে রাখিস। মা-এর মনে উথালপাতাল অনিশ্চয়তা। আসন্ন দিনগুলোর ভাবনায় প্রায় হতচেতন। তাও স্নেহকাতর মা বলল_বিটি, ঘরের কাজে মন লাগা  দিকি। ই বয়েসে মন বড় বিকলায়।
উয়াকে সামহালতে হবেক। আমার সাথে সাথে কাজে হাত লাগা।মন ঠিক হঙে যাবেক।

মন ঠিক হচ্ছে না লখীর মা-এর।হতভম্ব ভাবটা কাটছে না কিছুতেই। মন ঠিক হচ্ছে না লখীরও। কিছুতেই না।
কেন-না ও বুঝতে পারছে না 
এটা ওর কাছে আনন্দের না
দুঃখের । উচাটন মন আর সোনার সিংহাসনের স্বপ্ন মাখা চোখে বেরিয়ে পড়ল লখী 'উ গাঁয়ের সুবোধবাবুর বেটা'-র নিশ্চিত আশ্রয়ের খোঁজে।
দুঃখ আর আনন্দকে দুপাশে রেখে আলপথ ধরে হেঁটে চলেছে লখী। সামনে দূর দিগন্তে ধূসর আকাশ আর সবুজ তেপান্তরে রূপকথার হাতছানি। পেছনে মা-বাবার 
অস্পষ্ট জলছবি আর অস্ফুট
আর্তনাদ, লখীইইই....

Comments :0

Login to leave a comment