অমিত কুমার দেব- কোচবিহার
সোমবার একটি মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে একই বাড়ি থেকে উদ্ধার হল আরও একটি পচাগলা মৃতদেহ। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার ১নং ব্লকের ডাউয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বৈশ্যপাড়া এলাকায়। এই ঘটনা হার মানাবে কোনো সিনেমার চিত্রনাট্যকেও! বাবাকে হত্যা করে ঘরের শোকেসে বন্ধ করে রাখার পাশাপাশি দীর্ঘ প্রায় একমাস আগে নিজের পিসতুতো দাদাকে হত্যা করে বাড়ির ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখার মত দুঃসাহসিক কান্ড ঘটিয়েছেন এই বৈশ্য পাড়া এলাকার বাসিন্দা ৩০ বছরের যুবক প্রণব কুমার বৈশ্য, অভিযোগ এমনই। মৃতদের নাম বিজয় বৈশ্য(৬০) এবং গোপাল রায়(৪৫)। এই বিজয় বৈশ্য অভিযুক্ত প্রণব কুমার বৈশ্যর বাবা এবং গোপাল রায় তার পিসতুতো দাদা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার সকালে এক মাছ বিক্রেতা এই বৈশ্য বাড়িতে এসে বাড়ির লোকের খোঁজ করলে বারান্দায় একটি চিঠি পান এবং এই চিঠিতে নাকি প্রণব কুমার বৈশ্যের বয়ানেই লেখা ছিল যে তিনি বাবাকে নিয়ে চেন্নাই যাচ্ছেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এই মাছ বিক্রেতা লক্ষ্য করেন বাড়িতে ঢোকার পথে বেশ কিছু জায়গায় রক্তের ফোঁটা পড়ে রয়েছে। এতেই সন্দেহ হয় তার এবং এরপরই চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন তিনি। এই ঘটনায় সন্দেহ জাগে প্রতিবেশীদের মনে। তৎক্ষণাৎ তারা খবর দেন কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশকে। আর এরপরই পুলিশবাহিনী আসে এই বৈশ্য বাড়িতে। তারা এই বাড়ির ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করতেই ঘরের এক শোকেস থেকে কম্বলে মুড়িয়ে রাখা বিজয় বৈশ্যের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
এরপর বাড়ির ভেতরের আনাচে-কানাচে তল্লাশি চালাতে গিয়ে পুলিশের চোখে পড়ে তাদের বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকের মুখটি সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করা থাকলেও তা মসৃন নয়, কোনরকমে সিমেন্ট দিয়ে মুখটি বন্ধ করা হয়েছে। এরপরই সন্দেহ বাড়তে থাকে পুলিশের। তড়িঘড়ি এই সেপটিক ট্যাঙ্কটি খোলার ব্যবস্থা করা হয়। আর এই সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলার সাথে সাথেই দেখা যায়, সেপটিক ট্যাংকের অভ্যন্তরে প্লাস্টিকে মোড়া কোন বস্তু রয়েছে। এরপর এই প্লাস্টিকে মোড়া বস্তুটি ওপরে তোলার পর, তা খুললেই দেখা যায় একটি মানুষের পচাগলা মৃতদেহ। স্থানীয়রা এই মৃতদেহ দেখেই জানান এটা প্রণবের পিসতুতো দাদা গোপাল রায়ের। যিনি প্রায় এক মাস যাবৎ নিখোঁজ। কোতোয়ালি থানায় তার নিখোঁজ ডায়েরি করেন স্বয়ং এই প্রণবই। একই বাড়িতে দু দুটি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এরপর চাঞ্চল্য ছাড়া গোটা এলাকায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের পাশাপাশি কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।
পুলিশি নজরদারিতে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়া বৈশ্য বাড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ শুধু নিজের বাবাকেই নয় তার পিসতুতো দাদাকেও ঠান্ডা মাথায় খুন করে এই সেপটিক ট্যাংকে ভরে রেখেছিলেন প্রণব কুমার বৈশ্য। তারা আরও জানান, প্রতিনিয়ত নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকেন প্রণব। প্রায় প্রতিদিনই বাবাকে মারধর করতেন তিনি। প্রতিবাদ করতে এলে তাদের ওপর ধাঁরালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করতেও তিনি উদ্যত হয়েছেন বেশ কয়েকবার। তাই প্রতিবেশীরাও তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, এই প্রণব কুমার বৈশ্যের পিসির বাড়ি তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৪০০ মিটারের মধ্যে। এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন তিনি। সম্প্রতি এক নার্সিংহোমে প্রণবের মার মৃত্যুর পর বাবা আর ছেলেই থাকতেন বাড়িতে। গত অক্টোবর মাসে দুদিনের জ্বরে প্রণবদের বাড়িতেই মৃত্যু হয় তার পিসির। আর পিসির মৃত্যুর খবর প্রতিবেশীদের দেন এই প্রণবই। এরপরই থেকে নিখোঁজ তার পিসতুতো দাদা গোপাল। এদিনের এই দুটি মৃতদেহ উদ্ধারের পর প্রতিবেশীদের সন্দেহ তার পিসিকেও খুন করে থাকতে পারেন এই প্রণব। এই ঘটনায় ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়েছে বৈশ্য পাড়ায়। প্রতিবেশীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রণবের মতো একজন হত্যাকারীর চরমশাস্তি চান তারা।
দুটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। ঘটনাস্থল থেকে একটি লোহার রড ও একটি হাত দাঁ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত প্রণব কুমার বৈশ্য অধরা।
এই প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
Comments :0