Teesta Migrant Birds

তিস্তার বুকে আসছে না পরিযায়ী পাখিরা, চিন্তিত পরিবেশ কর্মীরা

জেলা

তিস্তায় মাছের মড়কের পর মুখ ফেরালো পরিযায়ী পাখিরাও।

দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি

শীত মানেই পরিযায়ী পাখির অবাধ আগমন। প্রতি বছরই উত্তর তথা জলপাইগুড়ি জেলার নদী-বিল সবখানেই দেখা মেলে এই নতুন অতিথিদের। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে অজানা- অচেনা বিদেশি পাখিদের কিচিরমিচির আরও মন ভরিয়ে দেয়। তাই এ সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পাখিদের কোলাহল শুনতে ও দেখতে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। 
কিন্তু এবার দেখা গেল অন্য চিত্র। অন্যান্য বারের মতো জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীতে আর দেখা মিলছে না পরিযায়ী পাখিদের। আর এতেই মন খারাপ জলপাইগুড়িবাসীর। তিস্তা ছেড়ে অতিথিরা বাসা বেঁধেছে নতুন ঠিকানায়। কিন্তু কেন? 


পরিবেশবিদরা বলছেন, সিকিমের হড়পা বানের প্রভাবে তিস্তায় বেড়েছে ঘোলা জল সহ রাসায়ানিক। তাই ঠিকানা বদলে পরিযায়ী পাখিদের এখন নতুন ঠিকানা ময়নাগুড়ি ধূপগুড়ি ব্লকের সীমানা দিয়ে বয়ে চলা জলঢাকা নদী। প্রতি বছর শীতের শুরুতে প্রচুর পরিযায়ী পাখি দলেদলে পাড়ি দিতে শুরু করে তিস্তা নদীর বুকে। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সেটা চলে। 
কিন্তু এ বছর তিস্তা নদীতে সেই অর্থে পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না বলে দাবি পরিবেশ প্রেমীদের। তিস্তায় না এসে এখন জলঢাকা নদীর বিভিন্ন তীরে সেই সমস্ত পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর তাতেই চিন্তিত পরিবেশপ্রেমীরা।  পরিবেশ কর্মীরা সিকিমের হড়পা বানকে দায়ী করেছেন।
জলপাইগুড়ি বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য ড: রাজা রাউত বলেন, ‘‘এই সময়ে প্রতিবছর বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি তিস্তার বুকে আসত। কিন্তু এ বছর দেখা যাচ্ছে যে তিস্তায় সেই সংখ্যায় পাখি আসছে না। ঠিকানা বদলে সেই সমস্ত পরিযায়ী পাখি এখন জলঢাকা নদীতে ঠাঁই নিচ্ছে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষী বিশেষজ্ঞ শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা বিগত ১০ বছর ধরে তিস্তা এবং তার সংলগ্ন নদী গুলিতে পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে কাজ করে থাকি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কয়েক বছর থেকে ধীরে ধীরে পাখিদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর পিছনে তিস্তা নদীর দূষণকে দায়ী করা যায়। তাই আমাদের সকলকে তিস্তা নদীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে।’’


এদিকে পরিবেশ কর্মীদের দাবি, সিকিমের বিধ্বংসী বন্যার ফলে তিস্তার নদীতে বেড়েছে রাসায়নিকের প্রভাব। তিস্তার জলে কমছে অক্সিজেনের মাত্রা। তিস্তায় মরা মাছের ভেসে ওঠার ঘটনাও ঘটেছে। উপরন্তু, হড়পা বানের প্রভাবে এ বছর তিস্তা জল অনেকটাই ঘোলাটে। এই সমস্ত কারণে তিস্তা নদী থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। ফলে আগামীতে তিস্তার গাজোলডোবায় কত সংখ্যায় পরিযায়ী পাখি দেখতে পাবেন পাখি প্রেমীরা, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment