খরচের হিসাবেও দেশের গরিব, মধ্যবিত্তর দুর্দশার ছবি।
আয় কমেছে। তাই বাজার খরচে লাগাম টেনেছে গ্রাম, শহর। বেড়েছে চিকিৎসার খরচও। জ্বালানি তেলের দেদার দাম বৃদ্ধিতে মোদী-শাসনে যাতায়াত খরচ বেড়েছে অনেকটা। ধনী আর গরিবের বৈষম্যও স্পষ্ট হয়েছে ব্যয়ের বহরে।
দেশের পরিবারগুলির মাসিক খরচের উপর সমীক্ষা করেছে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান এবং তথ্য মন্ত্রক। সেখানে রাজ্য ভিত্তিক অবস্থাও আছে। আছে গ্রাম এবং শহরের আলাদা আলাদা হিসাব। আছে বিগত বছরগুলির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনাও। দেশে গ্রামীণ পরিবারগুলির গড় মাসিক খরচ ৩৮৬০ টাকা। শহরাঞ্চলের পরিবারগুলির গড় মাসিক খরচ ৬৫২১ টাকা। আয় সবচেয়ে কম আদিবাসীদের— গ্রামে ৩০৯৮টাকা এবং শহরবাসী আদিবাসী পরিবারের ৬৫২১ টাকা।
গ্রামে কিংবা শহরে বৈষম্যের ছবিও উঠে এসেছে খরচের এই সমীক্ষায়। দেশের দরিদ্রতম ৫% গ্রামবাসী পরিবার মাসে গড়ে খরচ করেন মাত্র ১৪৪১ টাকা। শহরের যাঁরা সবচেয়ে গরিব সেই ৫%-র এই ক্ষেত্রে খরচ ২০৮৭ টাকা। অন্যদিকে গ্রামের ধনী ৫% মাসে খরচ করে দরিদ্রতমদের প্রায় ৮ গুণ — গড়ে ১০,৫৮১ টাকা। শহরে সেই ধনীদের শীর্ষে থাকা ৫% খরচ করে গ্রামের ধনীদের প্রায় দ্বিগুণ— গড়ে ২০,৮৪৬টাকা।
খরচ হয় খাদ্যশস্য, দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের মতো খাবার কেনায়। পাশাপাশি সিগারেট, বিড়ি, জুতো, পড়াশোনা, চিকিৎসা, হাসপাতালে চিকিৎসা, জ্বালানি, পোশাক সহ নানা বিষয়ের খরচও হিসাবে ধরা হয়।
কৃষি ক্ষেত্রের তুলনায় অকৃষি ক্ষেত্রে যুক্তদের মাসিক খরচ সামান্য হলেও বেশি। যেমন, কৃষিতে দৈনিক মজুরিতে নিয়মিত কাজ করেন এমন গ্রামবাসী পরিবার গড়ে মাসে খরচ করেন ৩৬৯২ টাকা। অকৃষি ক্ষেত্রে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়মিত কাজ করা গ্রামীণ পরিবারের মাসে খরচ ৪৬০৬ টাকা। রাজ্যের অর্থ দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যের পরিবারগুলির আয় কম, তাই খরচ কম।’’
খরচের মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ দেশের পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে আছে। দেখা যাচ্ছে রাজ্যের গ্রামীণ মাসিক খরচ ৩৪০৭ টাকা। উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্য প্রদেশ সহ দেশের মাত্র ৫টি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পিছনে। আর রাজ্যের শহরাঞ্চলে পরিবারগুলির মাসে খরচ ৫৪২৬ টাকা। এই ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশ সহ ৭টি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পিছনে। দুটি ক্ষেত্রেই কেরালা রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বেশিরভাগ রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে।
সমীক্ষা জানাচ্ছে, মোদী-শাসনে খাবার সামগ্রী কেনায় খরচ কমেছে। ২০০৯-১০ সালে খাবারের জন্য গ্রামীণ পরিবার খরচ করত মোট খরচের ৫৬.৯৮%। তা এখন হয়েছে ৪৬.৩৮%। এই ক্ষেত্রে সর্বাধিক খরচ কমেছে খাদ্যশস্য কেনায়। ২০০৯-১০ সালে গ্রামীণ পরিবারগুলি মোট খরচের ১৩.৭১% খরচ করত খাদ্যশস্য কিনতে। তা কমে হয়েছে ৪.৮৯%। অর্থাৎ মূলত জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার ফল এটি। রেশনে কম দামে চাল, গম দেওয়ার প্রভাব পড়েছে খরচে। যদিও দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের ক্ষেত্রে খরচ প্রায় একই রেখেছে গ্রামীণ পরিবারগুলি। যদিও প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়েছে। ফলে কেনার পরিমাণ কমেছে। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচ ২০০৯-১০ সালে ছিল ৫%-র কিছু বেশি। তা এখন প্রায় ৮%-এ পৌঁছেছে। মারাত্মক বেড়েছে যাতায়াত খরচ। ২০০৯-১০ সালে গ্রামীণ পরিবারগুলির মোট ব্যয়ের ৩.৪৫% খরচ হতো যাতায়াতে। তা এখন হয়েছে ৭.৫৫%। মূলত পেট্রোল-ডিজেলের মতো জ্বালানির দাম লাগাতার বেড়ে চলার কারণেই যাতায়াত খরচ এতটা বেড়েছে।
দেশের শহরাঞ্চলের পরিবারগুলির খরচের চিত্র বলছে, খাদ্যশস্য কেনায় খরচ সেখানেও কমেছে। কিন্তু সবজিতে বেশি কাটছাঁট করেছেন নাগরিকরা। এমনকি ডিম, মাছ, মাংস, দুধের মতো পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার খরচও তাঁরা ২০০৯-১০ সালের হারেই বেঁধে রেখেছেন। দেখা যাচ্ছে, ২০০৯-১০ সালে শহরের পরিবারগুলি মাসে তাদের খরচের ৫.৬৭% খরচ করত সবজি কেনায়। তা কমে হয়েছে ৩.৮%। সবজির দাম এর মধ্যে মোদী সরকার কমাতে পারেনি। আবার সবজি চাষিদের জীবনেও ইতিবাচক কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। ফলে সবজি চাষিদের যন্ত্রণা বেড়েছে যেমন, তেমনই সবজি কেনা কমিয়েছেন নাগরিকরা।
গ্রামে কিংবা শহরে মদ, গুটখা, সিগারেট সহ নেশাদ্রব্যের জন্য খরচ বেড়েছে। মদের বিক্রি থেকে রাজ্য সরকারগুলি অনেক রাজস্ব পায়। পশ্চিমবঙ্গে মমতা শাসনে মদ বিক্রি ঢালাও বেড়েছে।
CONSUMER EXPENDITURE BENGAL
পরিবারের মাসিক খরচেও পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে
×
Comments :0