ইভিএম’র ব্যালট ইউনিটে জমা পড়া ভোটের সঙ্গে একশো শতাংশ ভিভিপ্যাট গুনে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আরজি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার এই রায় দিয়ে দুই বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপঙ্কর দত্তকে নিয়ে গঠিত শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ ইভিএম’র কার্যপদ্ধতির বিষয়ে ভরসা রেখেছে সেই নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের উপরেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও যে কমিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানোর অকাট্য প্রমাণ সহ অভিযোগ পেয়েও কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। এই মামলার শুনানিতে কমিশন একশো শতাংশ ভিভিপ্যাট গোনার বিরোধিতা করে যা যা বলেছিল, এদিন রায়ে তারই প্রতিধ্বনি শুনিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ইভিএম পুরোপুরি নিরাপদ। ইভিএম-এ কারচুপি করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই সঙ্গেই বেঞ্চ আগের ব্যালট পেপারে ভোটের ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার আরজিও নাকচ করে দিয়েছে।
ইভিএম’র ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে সমস্ত ভিভিপ্যাট গুনে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আরজি নিয়ে একশোর বেশি মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। এখন ভোট গণনার সময়ে নমুনা হিসাবে প্রতিটি বিধানসভা আসনের যে কোনও পাঁচটি বুথ বেছে নিয়ে সেখানে ইভিএম’র ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটে নথিভুক্ত ভোট মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু ফল ঘোষণা হয় শুধু ইভিএম’র ব্যালট ইউনিটে সংরক্ষিত ভোটের ভিত্তিতে। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়ের ফলে এই ব্যবস্থাই বজায় থাকছে। রায়ে শীর্ষ আদালত একথাও বলেছে যে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র পিছু ৫টি বুথের ইভিএম’র সব ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ব্যালট ইউনিটের সব ভোট মিলিয়ে দেখার ক্ষেত্রে মাত্র ১টিতে বৈসাদৃশ্য দেখা গিয়েছিল। অন্ধ্র প্রদেশের কাড়াপা লোকসভা আসনের অন্তর্গত মিদুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসার ভোট শুরুর আগের মক পোল বা মহড়া ভোটের ডেটা মুছতে ভুলে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইভিএম’র ব্যালট ইউনিট ও ভিভিপ্যাটের হিসাব মেলেনি।
এদিন দুই বিচারপতি আলাদা আলাদা রায় দিয়েছেন, তবে দু’জনেই একই রায় দিয়েছেন। বিচারপতি দত্ত অবশ্য তাঁর রায়ে মামলার আবেদনকারীদের কড়া সমালোচনাও করেছেন। তাঁর মতে, ইভিএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তা সত্ত্বেও এই মামলায় ইভিএম সম্পর্কে যা যা সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতিকে খর্ব ও দুর্বল করার একটা পরিকল্পিত উদ্যোগ চলছে। এমন চেষ্টাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করা দরকার। তিনি নির্বাচন কমিশনের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে, ভোটদাতাদের মনে অহেতুক সন্দেহ তৈরি করে ইভিএম’র মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থাকে খাটো করার উদ্দেশ্যেই কাগজের ব্যালট পেপারে ফিরে যাওয়ার আরজি জানানো হয়েছিল। এদিন রায়ে কমিশন দু’টি বিশেষ ব্যবস্থাও নিতে বলেছে কমিশনকে। একটি হলো, ভোটের ফল ঘোষণার পরে ইভিএম’র সঙ্গে তার সিম্বল লোডিং ইউনিটকে সিল করে অন্তত ৪৫ দিন স্ট্রং রুমে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আরেকটি হলো, ভোটের ফল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীরা চাইলে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জমা দিয়ে ইভিএম’র মাইক্রো কন্ট্রোলারকে পুনঃপরীক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন। ইভিএম প্রস্তুতকারক সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা তা পুনরায় পরীক্ষা করতে পারবেন। তাতে ইভিএম-এ কারচুপি ধরা পড়লে ওই জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাবেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী প্রার্থীরা।
এদিন এই রায়ের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি’র নেতারা কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কটাক্ষ শুরু করেন। মোদী বলেন, এই রায় কংগ্রেসের গালে বিরাট থাপ্পড়। মামলায় কংগ্রেস অবশ্য কোথাও ছিলই না। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এদিন তা উল্লেখ করেই বলেছেন, এই মামলায় প্রত্যক্ষভাবে তো নয়ই, পরোক্ষেও কংগ্রেস যুক্ত ছিল না। তবে আরও বেশি ভিভিপ্যাট গুনে ভোটের ফল ঘোষণার দাবিকে সামনে রেখে কংগ্রেস রাজনৈতিক প্রচার চালিয়ে যাবে, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর মানুষের আস্থা আরও বাড়ে।
Supreme Court
সব ভিভিপ্যাট গুনে ভোটের ফল নয়, রায় সুপ্রিম কোর্টের
×
Comments :0