Post editorial Ganashakti strike in Bengal

ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে ১০ মার্চের ধর্মঘট

সম্পাদকীয় বিভাগ

Post editorial Ganashakti strike in Bengal

সন্দীপন রায়
আমাদের রাজ্যে প্রায় পাঁচ-দশক পর একটা অন্যরকম ধর্মঘটের মুখোমুখি আমরা। আগামী ১০ মার্চ রাজ্য কোষাগার থেকে বেতনপ্রাপ্ত কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা এই ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছেন। মুষ্টিমেয় কিছু উচ্ছিষ্টভোগী, শাসকের অনুগত কর্মচারী শিক্ষক ছাড়া এই ধর্মঘটের ডাকে সবাই শামিল হয়েছেন। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি, পঞ্চায়েত যৌথ কমিটি, এবিটিএ, এবিপিটিএ সহ অনেকগুলি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ও শহীদ মিনারে অবস্থানরত কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের অপর মঞ্চটি একত্রে এই ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছে। রাজ্যে স্বৈরাচার-বিরোধী, স্বৈরাচারী শাসকের অন্যায়, জুলুমবাজির বিরোধী সমস্ত শক্তি আজ একত্রিত হয়েছেন যা এরাজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আজকের দিনের যৌথ আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বস্তরের কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত যৌথ আন্দোলনের জন্য যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, এই ধর্মঘট তারই প্রতিফলন। ১৯৫৬ সালে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির মিছিল সমাবেশকে কেন্দ্র করে আক্রমণ, কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় অনেককে সাসপেন্ড করা, পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের ১৬ মে’র ধর্মঘট, ১৯৭০ সালে ২৬, ২৭, ২৮ আগস্ট তিনদিনব্যাপী লাগাতার ধর্মঘট, ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল সারাভারত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বানে সর্বভারতীয় ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে এরাজ্যেও যে ধর্মঘট হয়েছিল, তার জন্য কর্মচারী আন্দোলনের ‍নেতৃস্থানীয়দের অসম্ভব আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাজ্যব্যাপী সংগঠিত কর্মচারী আন্দোলন ক্রমেই সংগ্রামী মেজাজ ধারণ করে। তার পরবর্তীতে এরাজ্যে অনেক ধর্মঘট করেছেন কর্মচারী, শিক্ষকরা, কিন্তু তা মূলত সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটের অনুসারি হিসাবে। ২০১১ সালে রাজ্যে পটপরিবর্তনের পর প্রথম ধর্মঘট ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১২, যে ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বর্তমান রাজ্য সরকারের স্বরূপ ধরা পড়েছিল। মুখোশের আড়ালে বীভৎস সেই মুখ প্রকাশ পেয়েছিল। আর ২০১৩-র ২০-২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর পর অনেকগুলো ধর্মঘট হলেও, সব’কটি ধর্মঘটই সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে  শিল্প ধর্মঘট বা সাধারণ ধর্মঘটের অনুসারি হিসাবে সংগঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ৫২ বছর পর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্মঘটে শামিল হতে চলেছেন রাজ্য কোষাগার থেকে বেতনপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী-শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।


সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে সচেতন সংগঠন, নাগরিকরা সমর্থন জানিয়েছেন এই ধর্মঘটকে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে হলেও, গত ১১ বছরে এরাজ্যে ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে এতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। ভয় ভেঙে চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন কর্মচারী, শিক্ষকরা, নেতৃত্ব।
কেন এই ধর্মঘট?
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে, বিভিন্ন পদে, বিদ্যালয়ে— সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ৬ লক্ষের কর্মসংস্থান করতে পারে রাজ্য সরকার। কিন্তু করছে না। বিনিময়ে চা, চপ, মুড়িভাজার দোকান বা ব্যবসা করার  নিদান দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ সময়কালে পঞ্চায়েত, পৌরসভা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এজেন্সি মারফত বা অন্য কোনও উপায়ে বেশকিছু অস্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক, অনিয়মিত কর্মচারী কাজে নিয়োজিত হয়েছেন, যাঁদের কোনও ভূত-ভবিষ্যৎ নেই। এমনভাবে নিয়োগ করা হয়েছে, যাতে তাঁরা প্রমাণ করতে না পারেন, তাঁরা নির্দিষ্ট ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। এর সঙ্গে রয়েছে ২০১১ সালের আগে নিয়োজিত অনেক অস্থায়ী কর্মী, যাঁদের জন্য তৎকালীন সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল এবং নির্দেশনামা প্রকাশ করেছিল। এই সময় বর্তমান সরকার আর একটা কাজ করেছেন, বিভিন্ন দপ্তরে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের স্বল্প বেতনে (৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা) কাজে লাগিয়েছে। নব্য উদার-অর্থনীতির পথ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী  একাজ করেছেন। নিয়োগ যদি স্থায়ীপদে হয়, তাহলে তার জন্য যে দায়বদ্ধতা, তা তাঁর সরকার গ্রহণ করবে না। আর যেটুকু নিয়োগ হচ্ছে, তার জন্য চাই পর্যাপ্ত ‘কাটমানি’।  শিক্ষাকর্তার বাড়ি থেকে চাকরিপ্রার্থী বেকার যুবক-যুবতীর বাড়ির দলিল পাওয়া যায়। তাই এই ধর্মঘটের গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম অনিয়মিত কর্মচারীর নিয়মিতকরণ, অনিয়মিত শিক্ষকের  নিয়মিতকরণ ও স্বচ্ছভাবে শূন্যপদ পূরণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী এরাজ্যর ‘এগিয়ে বাংলা’ শুধুই অনুদান-নির্ভর। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে দেশে যখন গড়-মজুরি দৈনিক ৩৪৮ টাকা, তখন এরাজ্যে সেটা ৩০৫ টাকা আর কেরালায় গড় দৈনিক মজুরি ৭০১ টাকা। এরাজ্যের মেয়েরা পান ২৫৬ টাকা, যখন দেশের গড় ২৭৮ টাকা। মমতা ব্যানার্জির সরকার এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।

মহার্ঘ ভাতার দাবি অনিয়মিত কর্মচারী, শিক্ষকের নিয়মিতকরণ, স্বচ্ছভাবে শূন্যপদে নিয়োগ, রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বিভাজনের রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে— এই গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলিকে সাথে রেখেই যে দাবিতে রা‍‌জ্যের স্থায়ী কর্মচারী এবং শিক্ষকরা ক্রমশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, তা হচ্ছে বকেয়া সহ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবি। এই সময়কালে স্যাট, মহামান্য কলকাতা উচ্চ আদালতের একাধিকবার রায় এবং সর্বশেষ রাজ্যের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে কর্মচারীর ন্যায্য অধিকারকে পরাস্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া রাজ্যের কর্মচারী ও শিক্ষকদের মূলত এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। সরকার একদিকে কোর্টে দাবি করছে কোনও মহার্ঘ ভাতা বাকি নেই, আবার রাজ্য বাজটের দিন তিন শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেবে বলে ঘোষণা করছেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকেই বলতে হবে কোন্‌টা ঠিক, মহার্ঘ ভাতা বাকি আছে  না নেই? মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন শিলিগুড়ির প্রশাসনিক সভা থেকে যে, তিনি এই তিন বছরে মহার্ঘ ভাতা বাবদ ১ লক্ষ ৬১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। এক অভূতপূর্ব আজগুবি অঙ্ক! ষষ্ঠ পে-কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ১ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাবদ রাজ্যের ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অঙ্কের হিসাবে তাকে ২.৫৭ দিয়ে গুণ করলে তিন শতাংশ হিসাবে মাসে ৭৫ কোটি টাকা X ২.৫৭= ১৯২.৭৫ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এরাজ্যের কর্মচারী, শিক্ষক, পেনশনাররা ৩ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ ৫,০১১ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু সেই স্থানে ১ লক্ষ ৬১ হাজার কোটি? মুখ্যমন্ত্রী সবসময়ই অঙ্কের এই বিভ্রান্তি ঘটিয়ে থাকেন পরিকল্পিতভাবেই। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন না যে কথা, তা হচ্ছে এবারের রাজ্য বাজেটে ২০১১-১২ সালের যে প্রকৃত খরচের হিসাব দেখানো হয়েছে, তার থেকে এটা স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার বিগত সময়কালে বেতন ও পেনশন খাতের ২৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা খরচ করতে পারেননি। সেই টাকা গেল কোথায়? ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার  আগে বকেয়া দুই কিস্তি মহার্ঘ ভাতার মধ্যে এক কিস্তি মহার্ঘ ভাতার টাকা ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজটে রেখে গিয়েছিল, সেই টাকা কোথায় গেল? ২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া ছিল ১২ কিস্তি মহার্ঘ ভাতা। দিয়েছেন ৫ কিস্তি। বকেয়ার জন্য মামলা বিচারাধীন। ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট শেষবারের জন্য শুনবেন বা রায় দেবেন। ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই থেকে বকেয়া ১৩ কিস্তি মহার্ঘভাতা। তার মধ্যে দিয়েছেন মাত্র ২ কিস্তি, তাও সর্বভারতীয় ক্রেতা মূল্য সূচক না মেনেই।

এই রাজ্য সরকার দিল্লির বঙ্গভবনে কর্মরত কর্মচারীদের বা তামিলনাড়ুতে কর্মরত এরাজ্যের কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ৩৮ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিচ্ছেন, অথচ এরাজ্যে কর্মরত কর্মচারীরা পাচ্ছেন মাত্র ৩ শতাংশ!  এক মন্ত্রী বলছেন, চলে যান রাজ্যের চাকরি ছেড়ে, কেন্দ্রের চাকরি করুন। স্মরণ করাতেই হবে, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন, তখন ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ধর্মতলার সমাবেশে বা ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি সোনারপুরের সমাবেশ থেকে আওয়াজ তুলেছিলেন—‘যে সরকারের ক্ষমতায় কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দিতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।’ আজ তবে রাজ্য ছেড়ে কার যাওয়ার কথা—হাকিম সাহেব? যে চেয়ারম্যান অভিরূপবাবু বা আইএএস আমলারা রাজ্যের কর্মচারীরা যাতে কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা না পায়, তার জন্য লড়ছেন, তাঁরা কিন্তু কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা গ্রহণ করছেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভা ছিল দেশের মধ্যে সর্বাধিক কম বেতন গ্রহণ করা মন্ত্রীসভা, যে মন্ত্রীসভায় মুখ্যমন্ত্রী নিতেন ১২ হাজার টাকা, অন্যান্য মন্ত্রীরা নিতেন ৯০০০ টাকা। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী পে-কমিশনে ধার্য একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর থেকে কম বেতন নিতেন নীতিগত, আদর্শগত কারণে। আর আজ পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় মুখ্যমন্ত্রী দেশের মধ্যে সর্বোচ্চহারে বেতনপ্রাপ্ত, সপ্তম স্থানে অবস্থানরত মন্ত্রীসভা। ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী ৩৭ হাজার টাকা, ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা গ্রহণ করছেন। অন্যান্য মন্ত্রীরা ৩১,০০০ টাকা, ৮১ হাজার টাকা হয়ে আজ ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকা বেতন গ্রহণ করছেন। কোনও পে-কমিশন, বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ ছাড়াই। লজ্জা করছে না ববিবাবু? আসলে ক্ষমতায় আসার আগে কর্মচারী-দরদি, শ্রমজীবী দরদি, কৃষক-দরদি বন্ধু সাজার দরকার ছিল। যেমনটা রামায়ণে সীতাকে অপহরণ করার জন্য রাবণকে ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়েছিল।

সামাজিক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
একটা প্রচার মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসকের স্তাবকেরা প্রায়শই করে থাকেন যে, এই হারে মহার্ঘ ভাতা দিলে রাজ্যের সামাজিক প্রকল্পগুলি মুখ থুবড়ে পড়বে। আগেই আলোচনা করেছি, সরকার বেতন খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে পারছে না, অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে, পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দিতে সরকার বলছে লাগবে ২৪ হাজার কোটি টাকা। তার থেকে ‍‌বেশি পরিমাণ টাকা এই খাতে উদ্বৃত্ত সরকারের কাছে। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প নামে রাজ্য সরকার যে যে প্রকল্প চালাচ্ছেন, দেশের প্রায়‌ সব’কটি রাজ্যে এমন প্রকল্প চলে। ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি  রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেয় তথ্য অনুযায়ী দেশের সামাজিক প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি খরচ করে যে রাজ্যগুলি— তাদের  মধ্যে প্রথম পাঁচটি রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান নেই। প্রথম পাঁচটি রাজ্য হলো— কেরালা, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ। এরা সকলেই তাদের রাজ্য কর্মচারীদের ৩১ থেকে ৩৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিয়ে  থাকে। আবার অন্যদিক থেকে দেখলে যে রাজ্যগুলি সবচেয়ে বেশি ঋণ করেছে, যেমন পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ সহ আরও কয়েকটি রাজ্য, তারা কিন্তু তাদের রাজ্যের কর্মচা‍‌রীদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে। ফলে সামাজিক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যে গল্প হাজির করা হচ্ছে, তা নিতান্তই গল্প এবং মিথ্যা রটনা। সাধারণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে।

এখানে আরও একটি তথ্য দেওয়া দরকার। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০২০-২১ সালের আর্থিক বছরের অর্থ দপ্তরের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, সিএজি। গত ২৫ মার্চ, ২০২২ এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টে সিএজি দেখিয়েছে এবং প্রশ্ন তুলেছে যে, বিগত পাঁচ বছরে রাজ্যের কোষাগার থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী পরিচালিত এনজিওগুলিকে। ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে ঐ আর্থিক বছরে  সর্বোচ্চ ২৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও ১০,৮৫৯ কোটি টাকা অন্যান্য খাতে। মজার বিষয়, এনজিও-কে দেওয়া টাকার হিসাব অডিট করতে পারে না সিএজি। একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েত,  পৌরসভার মাধ্যমে উন্নয়নের খাতে অর্থবরাদ্দ কমেছে। এর থেকে স্পষ্ট বিপুল পরিমাণ টাকা রাজ্য কোষাগার থেকে এনজিও’র মাধ্যমে সরিয়ে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন নেতা-মন্ত্রীরা। আজ রাজ্যের মন্ত্রীরা জেলে যাচ্ছেন, আসছেন। সর্বত্র দুর্নীতি আর দুর্নীতি। দুর্নীতির পীঠস্থান এখন পশ্চিমবঙ্গ। সারা দেশের মধ্যে এক নম্বর স্থান অধিকার করেছে।


সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে ১০ মার্চ ধর্মঘট মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে ঐদিন অফিস, আদালত, বিদ্যালয় স্তব্ধ হবে। কোনোরকম স্বৈরাচারের কাছে মাথা নত আর করবেন না রাজ্যের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শ্রমিক-কর্মচারীরা। সার্ভিস কন্ডাক্ট রুলের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ১৯৫৬, ’৬৮, ’৭০-এর দশকে বরখাস্ত হওয়া কর্মচারীরা ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বা ১৯৬৭, ১৯৬৯-এর যুক্তফ্রন্টের সময় চাকরি সহ হারিয়ে যাওয়া সব কিছু ফেরত পেয়েছেন। ১৯৮১ সালে বামফ্রন্ট সরকার কর্মচারীদের স্বার্থে রুল তৈরি করে গেছেন যার ফলে কর্মচারীর ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, ধর্মঘটের অধিকার আইন সিদ্ধ। মমতা ব্যানার্জির সরকার অনেক চেষ্টা করেও তা পরিবর্তন করতে পারেনি। বিরোধী নেত্রী হিসাবে মাত্র ৭৩বার রাজ্যে বন্‌ধ আহ্বান করেছেন যিনি, তিনি আজ বকধার্মিক সেজেছেন। ওনার সরকারের ঐ বেতনকাটা আর মূল্যহীন ‘ডায়াস নন’-এর নির্দেশনামা বা যে কোনও ধরনের অন্যায় অনৈতিক ফতোয়াকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েই ১০ মার্চ ইতিহাস গড়বে এ রাজ্যের মধ্যবিত্ত শ্রমিক-কর্মচারী-শিক্ষকদের আন্দোলন।

Comments :0

Login to leave a comment