RAIL MODI SELFIE POINT

যাত্রী সুরক্ষা-স্বাচ্ছন্দ্য নয়, মোদীর সেলফি পয়েন্টই রেলের নজরে!

জাতীয়

একদিকে ট্রেনে বসার জায়গা নেই। আরেকদিকে রেলের সেলফি পয়েন্ট করার ধুম!

ট্রেনে নিত্যদিনের ঝঞ্ঝাট লেগেই রয়েছে। ডেইলি প্যাসেঞ্জার থেকে দূরপাল্লার ট্রেন, অবস্থা একই। রয়েছে দুর্ঘটনা। তবে কমতি নেই রেল স্টেশনে নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে। 
কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘সেলফি পয়েন্ট’। মোদীর ত্রিমাত্রিক বা ‘থ্রি-ডি’ ছবি লাগানো বিশেষ সজ্জা। বস্তুত কাটআউট। সেখানে দাঁড়িয়ে সেলিফি নিলেই হবে, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সেলফি!
সোশাল মিডিয়ায় এমনই সেলফি ছড়িয়ে দেওয়ার সংগঠিত উদ্যোগও স্পষ্ট। ভোটের আগে সরকারি টাকায়, সরকারি পরিকাঠামোয় বিজেপি’র একমাত্র মুখকে তুলে ধরা হচ্ছে। 
সংবাদ ওয়েবসাইট ‘দ্যা ওয়্যার’ তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন জমা করেছিল রেলের সেন্ট্রাল জোনে। কেবল এই একটি ডিভিশনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে স্থায়ী সেলফি পয়েন্ট করতে খরচ হয়েছে ১.২৫ কোটি। অস্থায়ী সেলফি পয়েন্টের জন্য খরচ আরও ৪০ লক্ষ। রেলের এমন ১৯টি জোন রয়েছে। সেলফি পয়েন্টের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। 
সরকারি সব প্রচারে প্রধানমন্ত্রীর মুখের এমন প্রচার মনে করাবে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। প্রতিটি সরকারি অনুষ্ঠানে ‘অনুপ্রেরণা’ মনে করিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ! 
এর আগে মোদীকে ‘বিশ্বগুরু’ প্রচারে নেমে প্রতিটি সরকারি ওয়েবসাইটে ‘জি-২০’ গোষ্ঠীর দিল্লি বৈঠকের ছবি ছিল। এখনও রয়েছে সেই বৈঠকের জন্য তৈরি বিশেষ প্রতীক। বিধানসভা ভোটের প্রচারে সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যেই ‘আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে শীর্ষে নেওয়ার’ প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। 
যাত্রী তো বটেই, বিভিন্ন অংশ প্রশ্ন তুলছেন রেলের হাল হকিকতে। প্রশ্ন উঠছে যাত্রী সুরক্ষায়। এ বছরের জুনে ওডিশার বালেশ্বরে বাহানাগা স্টেশনের সামনে তিন ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০। আহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে। সিগনালিং ব্যবস্থার ত্রুটির জন্য তলার স্তরের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কেবল। অথচ সরকারি এবং সম্পর্কিত রিপোর্টে যাত্রী সুরক্ষায় গাফিলতির সঙ্কেত ছিল। শীর্ষ স্তরে ব্যবস্থা হয়নি। 
২০২২’র জানুয়ারিতে আলিপুরদুয়ারে বিকানের-গুয়াহাটি একস্প্রেস বেলাইন হয়। তখন কেন্দ্র বলেছিল দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেঈয়া হয়ে। হয়নি। কয়েকমাস আগেই বিহারের বক্সারে বেলাইন হয় আরেকটি ট্রেন। এমন চলছেই। 
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, টাকা খরচ কোথায় আগে হবে সেই অগ্রাধিকারের গোলমাল তো আছেই। রেলের ঘাড়ে চড়ে প্রচার চলছে মোদীর। প্রশ্ন হলো যাত্রী সুরক্ষায় রেল কতটা ভাবিত, তা নিয়েও। এই অংশের বক্তব্য, কেবল দুর্ঘটনা নয়। যাত্রীর তুলনায় ট্রেন কম। জেনারেল বগিতে, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক যাতায়াতের ট্রেনে, অবস্থা অমানবিক। তবে রেলের অগ্রাধিকারের তালিকায় যাত্রী সুরক্ষা বা স্বাচ্ছন্দ্য কোনোটিই নেই বিশেষ।

Comments :0

Login to leave a comment