Probandha — SOURAV DUTTA / MUKTADHARA / 22 November

প্রবন্ধ — শতবর্ষের আলোকে "আবোল তাবোল"--নতুন সময়, নতুন প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতা / মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

Probandha  SOURAV DUTTA  MUKTADHARA  22 November

মুক্তধারা

প্রবন্ধ

শতবর্ষের আলোকে "আবোল তাবোল"--নতুন সময়, নতুন প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতা

সৌ র ভ  দ ত্ত

 

"আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা/স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়/আয়রে পাগল আবোল তাবোল/মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়"–ছড়ার ছন্দে বর্ণিল,বিভোর শৈশবের কথামালা  শতবর্ষে পদার্পণ করল সুকুমার রায়ের 'আবোল-তাবোল'।উদ্ভটত্ব না ননসেন্স ভার্সের এক আমোঘ গ্রন্থ এটি।পারিবারিক ননসেন্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুকুমার রায়।লুইস ক্যারল,এডওয়ার্ড লিয়ার,বন্ধু সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পদ্য তাকে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছিল আবোল-তাবোল রচনায় ।এক প্রকার রাষ্ট্রিক অবক্ষয়,পরাধীনতার গ্লানি,যুদ্ধের দামামা ও বিশ্বজোড়া অচলাবস্থার বিশেষ প্রেক্ষিতকে চিহ্নিত করেছে গ্রন্থ।যে গ্রন্থের ভিতরে বাঙালির শৈশবের জিয়ন কাঠিকে লুকিয়ে রেখেগেছেন  সুকুমার রায়।প্রকাশের শতবর্ষ পরে ও এর গুরুত্ব অপরিসীম।১৯২৩ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর  ইউ রায় এন্ড সন্স থেকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় কৌতূকমিশ্রিত, ব্যঙ্গক্তিমূলক, বর্ণনাত্মকও হেঁয়ালির চটুলতায় আবোল তাবোল-এর ছড়াগুলি মণিমুক্তো ছড়ানো ও সজীব প্রাণবন্ত।ছেলেবেলায় ঘুমপাড়ানো সময় মা,মাসি,পিসিরা আমাদের পিঠ চাপড়ে ঘুমপাড়াত হাসির রাজা সুকুমার রায়ের–'হুকোমুখো হ্যাংলা বাড়ি তার বাংলা','হাঁস ছিল সজারু(ব্যাকরণ মানি না) হয়ে গেল হাঁসজারু','প্যাঁচা কয় প্যাচানি' প্রভৃতি একাধিক মজাদার ছড়া শুনিয়ে।

আকাশকুসুম কল্পনার মোড়কে নির্মিত হয়েছে হাস্যরস উৎপাদকারী –'হুঁকোমুখোহ্যাংলা','কুমড়োপটাশ','বোম্বাগড়ের রাজা','হাঁসজারু','ট্যাঁশগরু','বকচ্ছপ','ভীষ্মলোচন শর্মা','বাপুরাম সাপুড়ে' প্রভৃতি একাধিক কিম্ভূতকিমাকার চরিত্র।এই সমস্ত অতি উদ্ভট চরিত্র ও নতুন শব্দ সংযোজন এর ক্ষেত্রে তিনি বন্ধু সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সাহায্য নিয়েছিলেন। "আর যেখানে যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার,/কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেওনা খবরদার !"--আবোল তাবোল এর প্রতিটি ছন্দস্পন্দময় ছড়া শিশু মনের অন্তঃস্থলে ঢুকে গেছে।আমাদের আশেপাশেও এই কাকুকুতু বুড়োদের অভাব নেই।সুকুমার রায় তার ছড়াগুলিকে বেছে নিয়েছিলেন সমাজ সচেতনতার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে।পরাবাস্তবের ছায়া থাকলেও সময় বিশেষে আবোল-তাবোল এ অঙ্কিত চরিত্রগুলি বেশ জীবন্ত হয়ে ওঠে।আজ মুঠোফোনের সীমাহীন হাতছানি,টেলিভিশনে ছোটাভীম,ডোরেমন প্রভৃতি কার্টুন চরিত্র শিশুমনে প্রভাব ফেললেও সুকুমার রায়ের আবোল-তাবোল এর স্যাটায়ারধর্মী ছড়াগুলি শিশু মনস্তত্ত্বে সদা জাগরুক।

Comments :0

Login to leave a comment