Editorial

মোদীর কারসাজিতে বদনাম স্টেট ব্যাঙ্কের

সম্পাদকীয় বিভাগ


নির্বাচনী বন্ডের নামে ধান্ধার ধনতন্ত্রের রূপকাররা রাজনীতির সঙ্গে কর্পোরেটের গোপন ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনেই শুধু ব্যাকুল হয়ে ওঠেনি তাকে বৈধতা দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হিসাব বহির্ভূত কালো টাকাকে নির্বাচনী বন্ডের  অচ্ছাদনে সাফাই করে ফের কর্পোরেট পুঁজিতে রূপান্তরিত হবার সুযোগ করে দিয়েছে। এত জটিল পরিকল্পনা শুধুমাত্র রাজনীতিকদের মস্তিষ্ক থেকে বেরোতে পারে না। এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত আছে ধুরন্ধর কর্পোরেট কর্তাদের মাথাও। তারাই শাসক দলের নেতাদের মগজ ধোলাই করে তাদের স্বার্থে নেতাদের কাজে লাগিয়েছে। নির্বাচনী বন্ড তাই মোদী সরকারকৃত কর্পোরেট প্রকল্প। কর্পোরেট পুঁজির নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিজেপি যে আগাপাশতলা একটি কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থবাহী দল সেটা তিন দশক আগেই প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছিল। ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও-র নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার যখন ভারতে প্রথম নব্য উদার অর্থনীতি তথা খোলাবাজার অর্থনীতি চালু করে তখন বিজেপি আক্ষেপ করে বলেছিল এটা আসলে বিজেপি’র নীতি কংগ্রেস ছিনতাই করে নিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই নরসিমা রাও-কেই এবছর মোদী সরকার মরণোত্তর ‘ভারত রত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
নির্বাচনী বন্ড কর্পোরেট রাজনীতির সাঙাত তন্ত্রের আদর্শ উদাহরণ। এই বন্ডের আড়ালে উভয় পক্ষের মধ্যে হয়েছে আদানপ্রদানের চুক্তি। কর্পোরেটের উচ্চ মুনাফার স্বার্থে সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে। বিনিময়ে কর্পোরেট ভোটে জিতে ক্ষমতা দখলের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করবে। এই বোঝাপড়া যাতে গোপন থাকে এবং অর্থ লেনদেনের তথ্যও যাতে প্রকাশ না হতে পারে তার জন্যই নির্বাচনী বন্ডের ব্যবস্থা। টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলের নীতি ও আদর্শ কেনার এবং সরকারের নীতিতে সেটাকে প্রতিফলিত করার ব্যবস্থাই নির্বাচনী বন্ড। বলা যায় আরএসএস’র প্রশ্রয়ে মোদী-শাহরা বিজেপি-কে কর্পোরেট পুঁজির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। বলা যায় বিজেপি’র স্বার্থ ও কর্পোরেট স্বার্থ একাকার হয়ে গেছে।
কর্পোরেট-রাজনীতিক সাঙাততন্ত্রের অধীনে সংঘটিত এই অতিকায় আর্থিক দুর্নীতি রূপায়ণে ব্যবহার করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে। সরকারের যাবতীয় কলঙ্কের ভাগীদার করা হয়েছে দেশের কোটি কোটি মানুষের আমানতের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানটিকে। স্টেট ব্যাঙ্ক শুধু দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক নয়, জাতীয় সম্পদও। ভারতে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শীর্ষে থাকা এই ব্যাঙ্কের সুনাম ও গৌরবকে ভূলুণ্ঠিত করেছে মোদী সরকার। দলীয় স্বার্থ ও বেসরকারি কর্পোরেটের স্বার্থ সিদ্ধি করতে গিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের সম্মানহানি করেছে, মানুষের বিশ্বাস ও ভরসার জায়গাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর পেছনেও যে কর্পোরেট স্বার্থের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই বলা যাবে না। কর্পোরেট চায় ভারতের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র পুরোপুরি বেসরকারি হাতে চলে যাক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মধ্যে সকলের সামনে উজ্জ্বল অবস্থান স্টেট ব্যাঙ্কের। সেই স্টেট ব্যাঙ্কের বদনাম করে তার বিশ্বাসযোগ্য হারানোর ব্যবস্থা করলে সহজেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জায়গা দখলে নিতে পারবে বেসরকারি ব্যাঙ্ক। নির্বাচনী বন্ড দুর্নীতির সঙ্গে এই প্রশ্নটিকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

Comments :0

Login to leave a comment