শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তথ্য গোপন করছে এসএসসি। শুক্রবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক সরাসরি এসএসসি’র চেয়ারম্যানকে বলেছেন,‘‘আপনারা কী লুকোতে চাইছেন।’’ আদালতকে তথ্য দিচ্ছেন না কেন? আগে বিচারপতি বসাক বলেছিলেন, এসএসসি এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে একরকম কথা বলেছে আর কলকাতা হাইকোর্টে অন্যরকম কথা বলছে।
এদিন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিসন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলাকালীন সময়েই এসএসসি’র আইনজীবী সুতনু পাত্র বলেছেন, আমি আর আইনজীবী হিসাবে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকবো না। এসএসসি’র আইনজীবী হিসাবে আর দায়িত্ব পালন করবো না। আইনজীবী পাত্র বলেন, এই এজলাস খুবই ছোট, এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় না। নোট নেওয়া যায় না। আইনজীবীর এই প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি বসাক তাঁকে বলেন। ‘‘ আমার ঘরটা ছোট, এসএসসি’র মত বড় বড় বাড়ি আমাদের নেই, এসএসসি একটা বাড়ি থেকে চাকরির সুপারিশ পত্র পাঠায়, আর একটা বাড়ি থেকে প্রার্থীদের এসএমএস পাঠায়।’’বিচারপতি বলেন, আপনি এসএসসি’র দায়িত্ব ছাড়বেন তা এখানে বলে লাভ কী, এসএসসি’র বোর্ড সদস্যদের কাছে বলবেন।
এদিন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিসন বেঞ্চ এসএসসি’র চেয়ারম্যান সহ বোর্ড সদস্যদের আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশের পরই চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এবং দুজন বোর্ড সদস্য আদালতে হাজির হয়েছিলেন। বিচারপতি বসাক চেয়ারম্যানকে বলেন সিবিআই তার হলফনামায় ওএমআর শিটের দায়িত্বের প্রসঙ্গে ‘ডেটা স্ক্যানটেক’ নামে একটি সংস্থার নাম জানিয়েছে। এই সংস্থা ওএমআর শিটের বরাত দেবার প্রসঙ্গে আপনি কী জানেন? চেয়ারম্যান মজুমদার আদালতকে জানান, এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।
বিচারপতি এদিন বলেন, সিবিআই একমাস আগে হলফনামা জমা দিয়ে এই সংস্থার নাম বলেছে, আপনার কাছে সেই হলফনামা একমাস রয়েছে, সেটা একবার দেখার সময় পেলেন না। চেয়ারম্যান বলেন, আমাকে একটু সময় দিন আমি জানাবো, বিচারপতি আগামী সোমবার শুনানির সময় এই প্রসঙ্গ জানতে চেয়েছেন। উল্লেখ্য ওএমআর জালিয়াতির ক্ষেত্র এনওয়াইএসএ (নাইসা) নামে একটি সংস্থার নাম আগেই জড়িয়েছে। সিবিআই তার হলফনামায় ডেটা স্যাএানটেকের নামটি তাদের হলফনামায় জানিয়ে বলেছে কীভাব ওএমআর জালিয়াতি হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য লক্মীর্ টুঙ্গা, সেতাবউদ্দিন সহ বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির এই মামলার শুনানি চলছে। এদিন আবেদনকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস সামিম বলেন, আদালত গুরুত্বদিয়ে এই মামলার শুনানি গ্রহণ করলেও এসএসসি এই মামলা নষ্ট করে দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-সি পদে শিক্ষা কর্মী নিয়োগ এবং নবম দশমের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলার শুনানি গ্রহণ করছে এই ডিভিসন বেঞ্চ। গত ১৮ ডিসেম্বর আদালত কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছিল কী কী কারনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুপারিশ বাতিল বা নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কেন নিয়োগ সুপারিশ বাতিল করেছে এসএসসি। বিচারপতি বসাক বলেছিলেন, এই নিয়োগ সুপারিশ বাতিলের কারনগুলি আদালতকে জানতে অসুবিধা কোথায়। ডিভিসন বেঞ্চ এদিন নির্দেশ দিয়েছে কিছু গোপন না করে এসএসসিকে আদালতে ফের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। দুদিনের মধ্যে এই রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। এনিয়ে চারবার ডিভিসন বেঞ্চ এসএসসির কাছে রিপোর্ট তলব করলো। আগে যে রিপোর্ট আদালতে জমা পড়েছে তা দেখে সন্তুষ্ট হয় নি ডিভিসন বেঞ্চ। বিচারপতি বসাক সরাসরি বলেছিলেন, চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে এসএসসি কী কী বিষয়ের ওপর নজর দিয়েছে তা রিপোর্ট আকারে আদালতে নির্দিষ্ট ভাবে জমা দেওয়া হচ্ছে না কেন। এখানে কিছু কী লুকোনোর চেষ্টা হচ্ছে। এসএসসি অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কী কী অনিয়মের ফলে এসএসসি চাকরির সুপারিশ বাতিল করেছে তা জানাতে হবে। এদিন কমিশনে আইনজীবী আদালতকে জানান, সিবিআই’র তদন্ত এবং আদালতের নির্দেশ এই চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে বিবেচিত। এর আগে আদালত এসএসসিকে পরামর্শ দিয়েছিল, কমিশন তার সদস্যদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করে আলোচনায় বসে ঠিক করুক কী ভাবে নিয়োগ তারা বাতিল করেছে। উল্লেখ্য নবম দশমে ৯৫২জন এবং গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-সি পদে বেশ শিক্ষা কর্মীর নিয়োগ বাতিল হবার পরই বেশ কয়েক জন শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই মামলায় এসএসসিও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। গত ৯নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ সংক্রান্ত এই সমস্ত মামলা কলকাতা হাইকোর্টে ফিরিয়ে দিয়েছে। হাইকোর্ট বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে এই মামলার শুনানি গ্রহণ করেছে।
SSC HIGH COURT
এসএসসি চেয়ারম্যান হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে
×
Comments :0