অনিন্দ্য হাজরা
শনিবার বিকেল ৪টের কিছু আগে। কলকাতার নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্ত্বরে এসে দাঁড়াল বালি রুটের একটি বাস। বাস ভর্তি করে এসেছেন টোটো শ্রমিকরা। এদিন বিকেল ৪টে থেকে অ্যাকাডেমিতে ছিল জয়রাজ ভট্টাচার্য নির্দেশিত,উৎপল দত্ত রচিত তিতুমীর নাটকের শো। প্রযোজনা করে থিয়েটার ফর্মেশন পরিবর্তক। সেই উপলক্ষেই অ্যাকাডেমিতে ভিড় জমান কলকাতা শহর এবং লাগোয়া অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ।
নাটকের নির্দেশক জয়রাজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পিপল্স থিয়েটার বা শ্রমজীবী মানুষের থিয়েটার হিসেবে তিতুমীর রচনা করেছিলেন উৎপল দত্ত। আজকে সেই অংশের মানুষ ভিড় জমিয়েছেন নাটক দেখতে। এটাই সার্থকতা।’’
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, অ্যাকাডেমিতে সাধরণত সন্ধ্যাবেলা থেকে নাটক শুরু হয়। কিন্তু দূরবর্তী জেলাগুলির শ্রমজীবী মানুষের যাতে বাড়ি ফিরতে সমস্যা না হয়, তাই বিকেল ৪টে থেকে এদিন নাটক শুরু হয়।
নাটক শুরুর আগে জয়রাজ ভট্টাচার্য প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে এই নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। তিতুমীর শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যের কথা বলে। দিল্লির কৃষক আন্দোলনেও একই বার্তা উঠে এসেছে। সেই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করছি আমরা।’’
নাটক শেষের পরে উদ্যোক্তাদের তরফে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে অর্থ সংগ্রহের ডাক দেওয়া হয়। নাটকের কলাকুশলী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকরা সাধ্যমত সাহায্য করেন।
এদিন নাটকের কলাকুশলীদের সংবর্ধনা জানান বালি-বেলুড় অঞ্চলের টোটো এবং চটকল শ্রমিকরা।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে চরম দুর্দশার মুখোমুখি হতে হয় গ্রামীণ জনতাকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দোসরের ভূমিকা পালন করে দেশি ব্যবসায়ী থেকে নব্য জমিদার হয়ে ওঠা অংশ। তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই বা ‘জেহাদ’ ঘোষণা করেন নারকেলবেড়িয়ার কৃষক মীর নিসার আলি বা তিতুমীর। হিন্দু, মুসলিম উভয় অংশের কৃষকদের নিয়ে ২৪ পরগণার বিস্তীর্ণ অঞ্চল থেকে ইংরেজ শাসন উৎখাৎ করেন তিতুমীর। এর পালটা তিতুমীরের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক প্রচারে মদত যোগায় ব্রিটিশ প্রশাসন। গ্রাম বাংলার হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেনা কোম্পানি প্রশাসন।
কিন্তু তারপরেও লড়াই চালিয়ে যান তিতুমীর। ১৮৩১ সালের ১৮ নভেম্বর নারকেলবেড়িয়ায় তাঁর বাঁশের কেল্লা কামানের গোলায় গুঁড়িয়ে দেয় ইংরেজ সেনাবাহিনী। প্রাণ হারান তিতুমীর। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে কয়েক হাজার কৃষককে হত্যা করে কোম্পানির সেনা।
সেই ঘটনাকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করে ১৯৭৮ সালে তিতুমীর নাটক রচনা করেন উৎপল দত্ত।
প্রসঙ্গত, হিন্দু মুসলিম শ্রমজীবীর ঐক্যের কথা বলায় দিল্লির ন্যশনাল স্কুল অফ ড্রামা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথমে অনুমতি দিয়েও এই নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়।
Comments :0