CAA movement

দেশজুড়েই তুমুল বিরোধিতা

জাতীয়

কেরালার পর তামিলনাডু। পিনারাই বিজয়নের পর এম কে স্ট্যালিনও জানিয়ে দিলেন, বিভাজনের আইন সিএএ কার্যকরী হবে না তাঁর রাজ্য তামিলনাডুতে। শুধু তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রীই নন, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও। তাঁর দাবি, ভোটের কথা মাথায় রেখেই বিজেপি এই আইন চালু করেছে। প্রশাসনিক স্তরে এই বিরোধিতার পাশাপাশি আইনি পথে শুরু হয়েছে। এই আইন চালুর উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্টে গেছে ডিওয়াইএফআই। সিএএ অসাংবিধানিক বলে মামলা করতে চলেছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও। এর পাশাপাশি বৈষম্যমূলক এই আইনের প্রতিবাদে পথে নেমে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। 
সোমবার আইন চালুর বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর-পূর্বের আসাম ও দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু-কেরালায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। তবে কোথাও কোনও সংঘর্ষ বা গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায়নি। সোমবার রাতেই চেন্নাইতে এর বিরুদ্ধে মোমবাতি মিছিল হয়েছে। সোমবারের পর এদিনও রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে কেরালায়। ২০১৯-এ আইন পাশের সময় যেখানে যেখানে বিক্ষোভ হয়েছিল, এবার আগে থেকে রাজধানী দিল্লির সেইসব জায়গা নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেছিল দিল্লি পুলিশ। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গেটের সামনে ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখায়। অবিলম্বে এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে জোরালো বিক্ষোভ দেখান ছাত্ররা। একই সঙ্গে চার বছর আগে সিএএ বিরোধী অন্দোলনের সময় আটক ছাত্রদের সকলকেই মুক্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে। তেমনই এদিন এক বিক্ষোভ হয় দিল্লি ইউনিভার্সিটিতেও। পুলিশ সেখান থেকে ৫৫জন পড়ুয়াকে আটক করেছে। 
কেন এই বিরোধিতা? সীতারাম ইয়েচুরি থেকে জয়রাম রমেশ, স্ট্যালিন থেকে মেহবুবা মুফতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) যে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তা নিয়ে অকপট। সকলের মতেই, নাগরিকত্বের ধারণায় ধর্মীয় পরিচিতি যুক্ত করায় সংবিধানের ১৪ নং ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে। মুসলিমদের বাদ দেওয়া কেবল বৈষম্যই নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার মূল ভাবনার বিরোধী। সেই বিতর্কিত সিএএ’ই পশ্চিমবঙ্গ বা আসামের মতো রাজ্যে বিজেপি’র অন্যতম একটা হাতিয়ার। গত লোকসভা ভোট ও বিধানসভা ভোটেও এই অস্ত্রে শাণ দিয়ে ভোটে নেমেছিল বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল তার পালটা অবস্থান নিয়ে আসলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকেই তীব্র করেছে। 
ভোটের মুখে হিসেব কষেই এই মেরুকরণ তীব্র করতেই চালু হলো সিএএ। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, আইন পাশ হয়েছে ২০১৯-এর ডিসেম্বরে। আর তা চালু করতে ৪ বছর ৩ মাস সময় নিল ওরা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কথায়, লোকসভা ভোটের ঠিক আগে বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার এ হলো মরিয়া চেষ্টা। এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের কথায় লোকসভা ভোট ঘোষণার ঠিক আগে এমন ঘোষণা সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ।
আসলে বিরোধীদের সন্দিহান প্রস্তাবিত এনআরসি-র সঙ্গে জুড়ে এই আইন আসলে ২০ কোটি ভারতীয় মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করা হবে। মানবাধিকার গোষ্ঠী ও মুসলিম সংগঠনগুলির সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যে সিএএ’কে কাজে লাগিয়ে মুসলিমদের এনআরসি থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হবে।  
এই তুমুল বিরোধিতার মুখে এখন অমিত শাহ দাবি করছেন, রাহুল-খাড়গেরা সব মিথ্যা কথা বলছেন। একসময়ে ‘ক্রোনোলজি’ বোঝানো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দাবি, সিএএ’র কারণে কারও নাগরিকত্ব যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই শাহ খোলসা করলেন না, এনআরসি’র পর কী হবে?

Comments :0

Login to leave a comment