Md Salim

দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের মেলবন্ধনে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে রাজ্যে

রাজ্য

দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মেলবন্ধনে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে পশ্চিমবঙ্গে। মিনাখাঁয় বোমা বিস্ফোরণে শিশুমৃত্যুর প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, দুর্নীতি দুষ্কৃতী নেটওয়ার্কে লুট হচ্ছে রাজ্যে। আইনের শাসন থাকলে কোনও সভ্য দেশে এভাবে বেআইনি বন্দুক বোমা মজুত রাখা যায়? প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, এমনকি দশ বছরের শিশুও মারা যাচ্ছে, পুলিশ এবং পুলিশ মন্ত্রী কত অপদার্থ হলে এমন হতে পারে! 
বৃহস্পতিবার রানিগঞ্জে সিপিআই(এম)’র পশ্চিম বর্ধমান জেলা দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করেন মহম্মদ সেলিম। পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আভাস রায়চৌধুরি, জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, বংশপোপাল চৌধুরি সহ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। উত্তর চব্বিশ পরগনার মিনাখাঁয় মজুত বোমা ফেটে দশ বছরের শিশুর মৃত্যু সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, বগটুইতে প্রাণ গেছে, মিনাখাঁতে প্রাণ গেছে, আমতাতে প্রাণ গেছে, সাধারণ মানুষ প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন। এটা কোনও সভ্য সমাজে হতে পারে! বগটুইয়ে তৃণমূল যখন তৃণমূলের কর্মীদের পুড়িয়ে মারল, অনুব্রতকে সাক্ষী রেখে ডিজি এসপি-দের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যত বেআইনি অস্ত্র ও অস্ত্র কারখানা আছে, যত বোমা মজুত আছে, সব উদ্ধার করতে হবে। উনি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও  বেআইনি বোমা অস্ত্রে মানুষ মারা যাচ্ছে। বাসন্তীতে যখন বোমা কারখানায় বিস্ফোরণ হলো, পুলিশ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করল। আমতাতেও ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছিল। মিনাখাঁর ঘটনাও চাপা পড়ে যেত, আমাদের বামপন্থী কর্মীরা রাতেই গ্রামে যোগাযোগ করে সকালে সেখানে পৌঁছেছেন,সাংবাদিকরা সত্যিটাকে বের করেন, তখন জানা যাচ্ছে আসল রহস্য কী। পঞ্চায়েত নির্বাচন সামনে বলে বোমা মজুত করতে হবে? পুলিশ এবং পুলিশ মন্ত্রী কত অপদার্থ হলে এমন হতে পারে!
দুর্নীতির তদন্তে ন্যায়বিচার আদায়ের জন্য মানুষের সচেতন লড়াই জারি রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সেলিম সাংবাদিকদের বলেছেন, সবটা তো ইডি- সিবিআই দিয়ে কুলোবে না, মানুষকেও নামতে হবে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ২০১৪ সাল থেকে দুর্নীতির নানা অভিযোগ চেপে বসে থেকেছে। এখন আদালতের নির্দেশে তদন্ত করাতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি ও নাগপুরের সমঝোতা অনুসারে দিল্লি থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মতো ইডি এবং সিবিআই-কে নিয়ন্ত্রণ করছে, তদন্ত স্লো করছে। এখন গ্রাম জাগছে, পদযাত্রায় চোর তাড়াও আওয়াজ উঠেছে। কাজেই মানুষ ইডি সিবিআই’কেও স্বস্তিতে থাকতে দেবে না। তাই বারবার আদালতে গিয়ে তদন্ত স্লো করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলছি, আদালতের নির্দেশমতো নিচুতলা থেকে উঁচুতলা পর্যন্ত কারা ক্ষীরমালাই খেয়েছে তা বের করতে হবে।  
তিনি বলেন, আদালতে গিয়ে যুবরাজ শ্যালিকার জন্য স্বস্তি চেয়েছেন। বিজেপি এবং আরএসএস-কে ধরে মুখ্যমন্ত্রী ভাইপোকে কয়লাকাণ্ডের থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা করছেন। যুব তৃণমূলের নেতা বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে প্রতিদিন অনুব্রতর নতুন সম্পত্তি বের হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে লটারি কেলেঙ্কারি! এটা একটা দুর্নীতির সাম্রাজ্য। আগেই রাজ্যের পুলিশ ও তদন্ত এজেন্সিগুলির দুর্নীতি ধরা উচিত ছিল। কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণে, পশ্চিম থেকে পূর্বে, রাজ্যজুড়ে  দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন চলেছে নেটওয়ার্ক তৈরি করে। অন্যদিকে প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। 
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিলাদিত্যকে মাওবাদী বলে গ্রেপ্তার করানোর ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছিল শিলাদিত্য সারের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন বলে। তখন সারের দাম কিলো প্রতি ২৮ টাকা ছিল। এখন চল্লিশ টাকার ওপরে ব্ল্যাকে বিক্রি হচ্ছে। 
অথচ জঙ্গলমহলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে আদিবাসীদের আপনজন বলে প্রচার করছেন। সাংবাদিকদের এই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, উনি আপনজন? উত্তরবঙ্গে গিয়ে তো হাতে গ্লাভস পরে আদিবাসীদের হাত ধরে নেচেছিলেন। অখিল গিরি যে মন্তব্য করেছে তারপরে তো ওঁকে কান ধরে মন্ত্রীসভা থেকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল। আদিবাসী হোক বা যে কোনও গরিব মানুষ তাঁরা কেন মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করবেন? আলু পাতার সময় সারের দাম আকাশে, ধানকাটার সময়ে ধান কেনার ব্যবস্থা নেই, এলাকায় কাজ না পেয়ে অন্য জায়গায় যেতে হচ্ছে আদিবাসীদের। বীরসা মুণ্ডার বিকৃত মূর্তি উদ্বোধন করে, কিংবা নাচাগানায় এই মানুষদের ভোলানো যাবে না, তারা মমতা-মোদী দুই সরকারের অপদার্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। 
খুব শীঘ্রই এরাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের যে প্রচার বিজেপি চালিয়ে যাচ্ছে তাকে উড়িয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, যেভাবে প্রতিদিন বিজেপি ক্ষয়ে যাচ্ছে, নেতানেত্রীরা তৃণমূলে যাচ্ছেন, তাতে ওঁদের নেতারা বুঝে গেছেন যে ক্ষমতার লোভে যারা তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে ভিড়েছিল, ক্ষমতা না পেলে তাঁরা আবার ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাওয়ার মতো তৃণমূলে ফিরে যাবে। তাই পুজোর পরে কিছু ঘটবে, বড়দিনের পরে কিছু ঘটবে, এসব লোভ দেখিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের দল বাঁচানোর চেষ্টা।

Comments :0

Login to leave a comment