Salim

চোরের জন্য গলা ফাটালেও সাংসদের জন্য নীরব মমতা

রাজ্য

রেশন দুর্নীতিতে বামাল ধরা পড়া মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী গলা ফাটাচ্ছেন, অথচ নিজের দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে বিজেপি বেআইনীভাবে হেনস্তা করলেও মুখ্যমন্ত্রী চুপ কেন? বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, মহুয়া মৈত্র আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, তাই আরএসএস বিজেপি’কে তুষ্ট করতে মুখ্যমন্ত্রী দূরে সরে থাকছেন। অথচ চোর ডাকাতরা ধরা পড়লে তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, কারণ মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়েছেন এলাকায় এলাকায় লুট চালানোর জন্য। 
আগের দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নবান্নে বসে রেশন দুর্নীতির জন্য ‘বামফ্রন্টের ৩৪ বছর’কে দায়ী করেছেন। এদিন সেলিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী যেমন সব দুর্দশার জন্য নেহরুর আমল দেখতে পান, মুখ্যমন্ত্রীও তেমনই চুরি ধরা পড়লেই জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমল দেখতে পান। সরকারে এসেই শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তিনি শিশুদের বাম আমলে জন্মানোর ‘অপরাধ’ দেখতে পেয়েছিলেন। চিটফাণ্ডের টাকায় কেনা একদল মিডিয়া হুক্কাহুয়া করার মতো এগুলিই প্রচার করে। কোনো দুর্নীতির খবর এই মিডিয়া প্রকাশ করে না। 
সেলিম প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারে এসেই মমতা ব্যানার্জি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাম আমলের তদন্ত করতে একগুচ্ছ কমিশন গঠন করেছিলেন। রেশন দুর্নীতির জন্য কমিশন করেননি কেন? বাম আমলের খাদ্যমন্ত্রীকে নিজের দলে নিয়ে পুরস্কৃত করেছেন কেন? ভুয়ো ভোটার, ভুয়ো রেশন কার্ড, ভুয়ো ভ্যাকসিন কোনো ক্ষেত্রেই সরকার নিজের থেকে ব্যবস্থা নেয়নি। তৃণমূলের যে কোনো পার্টি অফিসে গেলে গোছা গোছা রেশন কার্ড জবকার্ড পাওয়া যাবে। আসল কথা পিসি-ভাইপো’র ব্র্যান্ডকে সামনে রেখে লুট চালানোর জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া হয়েছে এলাকায় এলাকায়। চাকরি, খাদ্য, ওষুধ, বালি, কয়লা সব কিছু লুটে খাওয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এই মাতব্বর তালেবরদের। শর্ত একটাই ৭৫ ভাগ পাঠাতে হবে কালীঘাটে। এই কালো টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে, তারপর আবার মরিশাসের মতো কোনো রুটে শেল কোম্পানির নামে রাজ্যে ফিরে আসছে। চিটফাণ্ডের সময় থেকে দুর্নীতিতে ভুক্তভোগী সর্বস্বান্ত মানুষরা অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছেন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কোনো তদন্ত করাননি। তৃণমূল নেতাদের কোনো লুট, দুর্নীতি, পাচার কাণ্ডে কেন্দ্রীয় সরকারও কোনো বাধা দেয়নি। দিল্লিতে আপ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আবগারি মামলা চালাচ্ছে ইডি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আবগারি দুর্নীতিতে তদন্ত করছে না কেন? এরাজ্যে প্রতি বোতলে ছিপি লাগাতে কালীঘাটে টাকা জমা দিতে হয়। সেই জন্যই করোনার সময় রেশন বন্ধ থাকলেও মদের দোকান খোলা ছিল। ডিজিটাল রেশন কার্ড করিয়ে দেওয়ার নামেও দুর্নীতি হয়েছে, কার্ডের নাম বদল করা হয়েছে। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরে জমির রেজিস্ট্রেশন স্থানীয় স্তরে হতো। এখন সব নবান্নে নিয়ে এসে বেসরকারী সংস্থাকে দিয়ে করানো হচ্ছে, জমির রেকর্ড বদলে দেওয়া হচ্ছে। 
তৃণমূল এবং বিজেপি’র এই বোঝাপড়ায় দুর্নীতি ধামাচাপা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, নারদ স্টিং অপারেশনে তৃণমূল সাংসদ এবং বর্তমান বিজেপি নেতাদের হাতে হাতে টাকা নিতে দেখা গেলেও তখন সংসদের এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান আদবানি ভিডিও ফুটেজের সিডিও নিতে চাননি। সাংসদদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। অথচ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই তড়িঘড়ি এথিক্স কমিটিতে ডেকে পাঠানো হলো। আমি তাঁর পক্ষ নিচ্ছি না, কিন্তু তিনি সংসদীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য টাকা নিয়েছিলেন কিনা তা জানার জন্য প্রশ্ন করার বদলে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হলো। কে কী খায়, কী পোশাক পরে, এসব দেখা সংসদের কাজ? সংসদের নীতি পুলিশী করার এক্তিয়ার নেই। এটা আরএসএস এবং তালিবানীরা করে। সংসদীয় কমিটি রিপোর্ট জমা দেয় সংসদে, তার আগেই মহুয়া মৈত্র সম্পর্কে যাবতীয় অভিযোগ, চিঠি সব প্রকাশ্যে এলো কী করে!
মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় ‘সবুজ বিপ্লব’ করেছেন বলে যে দাবি করেছেন সেই সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, সবুজ বিপ্লব নয়, তৃণমূল রাজ্যে গাছ জঙ্গল সাফ করে সবুজ উজাড় করে দিয়েছে। জলাভূমি ভরাট করে বেচে দিয়েছে। এমনকি রাজ্যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শব্দের যে সীমা আদালত বেঁধে দিয়েছিল তাও মুখ্যমন্ত্রী শিথিল করে দিয়েছেন। সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধংস করেছেন সব হাসপাতালের প্রশাসনকে দলীয় হাতে দখল করে, ধ্বংস করে। বামফ্রন্ট সরকার চিকিৎসা শিক্ষায় পূর্ব ভারতের প্রথম স্নাতকোত্তর পঠনপাঠানের ব্যবস্থা করেছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। এখন মমতা ব্যানার্জি তাঁর পায়ের চিকিৎসা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের দোষারোপ করছেন। চিকিৎসকদের দোষ? যে ডাক্তারকে মুখ্যমন্ত্রী দোষারোপ করেছেন তিনি দেশের স্বনামধন্য অর্থোপেডিক চিকিৎসক।
স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিপিআই(এম) মানুষকে নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করছে বলে জানিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি কায়েম রাখতে দুষ্কৃতীতন্ত্র গড়ে তোলা হয়েছে। দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চাইছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার। এই জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবাদীদের ইউএপিএ ধারায় গ্রেপ্তার করছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগাতে চেষ্টা করছেন। দুই দলই বিরোধীশূন্য দেখতে চায়। এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে মানুষকে রাস্তায় নামাতে হবে। বামপন্থীরা যাতে তা না করতে পারে তার জন্য মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা করছে। আমরা বামপন্থীরা মানুষকে একজোট করে রাস্তায় নামাতে চাইছি, তাহলে দুর্নীতি দুষ্কৃতীর প্রাসাদ টলে যাবে।

Comments :0

Login to leave a comment