পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ ও কাজ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করে বলেছেন, অযথা মিথ্যা প্রচার, নির্লজ্জের মতো খেউড় না করে কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে দুই সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। মানুষ জানতে পারবে এরাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কত টাকা এসেছে, কত টাকা খরচ হয়েছে, কত বকেয়া আছে, কত ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট আছে। তৃণমূল এবং বিজেপি’র হিম্মৎ থাকলে শ্বেতপত্রের মাধ্যমে মানুষকে সব তথ্য জানানোর ব্যবস্থা করুক।
একশো দিনের কাজ সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা মোদী সরকার দিচ্ছে না বলে তৃণমূল অভিযোগ করছে। এদিনই ঝাড়গ্রামে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি নিজে গিয়ে টাকা চেয়েছিলাম। এবার কি পায়ে ধরতে হবে?’ এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী আগে বলেছিলেন কোমরে দড়ি পরাবেন, এখন বলছেন পায়ে ধরবেন, এসব কথাবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সাজে? বাংলার মানুষের সম্মান আছে, বাংলার মানুষ হক আদায় করতে জানে। আমরা বামপন্থীরা মানুষকে নিয়ে হক আদায়ের লড়াই গড়ে তুলবো। কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপি দুই পক্ষ মিলে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে মিথ্যাচার করে চলেছে। ওরা বলছে কাজ হয়নি, তাই টাকা দেবে না, আর এরা বলছে টাকা দিচ্ছে না বলে গ্রামবাসীদের একশো দিনের কাজের মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষকে সত্যিটা জানাতে দুই সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক, তারপরে আমরা বামপন্থীরা লড়াই করে হক আদায় করে নেবো। মুখ্যমন্ত্রীকে কারোর পা ধরতেও যেতে হবে না, কারোর বাড়িতে বাসন মাজতেও যেতে হবে না। এসব কথা বলে বাংলার সম্মান নষ্ট করবেন না।
একদিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে কাজ না করে তৃণমূলের লুট, অন্যদিকে সব জেনেও বিজেপি সরকারের কোনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, কেন কেন্দ্রীয় সরকারের টিম এসে কাজ কতটা হয়েছে তার পর্যবেক্ষণ করছে না? বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন তো প্রায়ই আসতো। এখন সিএজি রিপোর্টে টাকা নয়ছয়ের উল্লেখ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে আছে কেন? এই জন্যই আমরা বলছি দুই পক্ষের যত ঝগড়া বিবাদ সব ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে যা বার্তা পাঠানোর পাঠিয়েছেন, নাগপুরের সিগন্যাল পেলেই কেন্দ্রের টাকাও এসে যাবে, তারপরে রাজ্যে পঞ্চায়েতের নির্বাচন করবে।
ঝাড়গ্রামের শিলদায় এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ঘিরে গ্রামের মহিলারা বিক্ষোভ দেখিয়ে তাঁদের পানীয় জলের অভাবের কথা বলেছেন। সেলিম বলেছেন, নীল সাদার উন্নয়ন নাকি জল নেই, কোনটা সত্যিকারের বাস্তবতা? মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ওঁরা বিক্ষোভ না দেখালে তাঁদের সমস্যার কথা মিডিয়াতে আসে না কেন? জঙ্গলমহলের উন্নতির জন্য বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন আমরা লড়াই করে কেন্দ্রের থেকে বিশেষ যোজনা আদায় করে এনেছিলাম, কিন্তু আজও সেখানকার মানুষের সমস্যার সমাধান হয়নি কেন? শুধু মমতা ব্যানার্জি নয়, মোদীও দায়ী এর জন্য।
রাজ্যে বেআইনি অস্ত্রের হদিশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আমরা বামপন্থীরা মানুষের দাবি আদায়ের লড়াইয়ের জন্য মানুষকে জড়ো করছি, আর তৃণমূল-বিজেপি বোমা বন্দুক ত্রিশূল জড়ো করছে। বগটুইয়ের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী ক্যামেরার সামনে পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন অস্ত্র উদ্ধারের। কিন্তু তিনি এবং তাঁর পুলিশ এতই অপদার্থ যে এখনও অস্ত্রের রমরমা দেখা যাচ্ছে। পুলিশ তৃণমূল এবং বিজেপি’র নেতাদের গাড়ি সার্চ করলে বেআইনি অস্ত্র পাওয়া যাবে। বোমা বন্দুক ইতিহাস গড়বে না, মানুষই ইতিহাস গড়বে। গতবার পঞ্চায়েতের নির্বাচনে তৃণমূল যেভাবে জিতেছে এবারও সেভাবে জিতবে ভাবলে ভুল ভাবছে। এবার অত সহজ হবে না।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে মূল সুবিধাভোগী শিরোমনিকে সামনে আনার দাবি করে সেলিম বলেছেন, চিট ফান্ড, নারদ ঘুষকাণ্ডের মতো নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তও ম্যানেজ করে বাঁচার চেষ্টা করছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী নাগপুর থেকে শুরু করে রাজ্যপাল, প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা এর শেষ দেখতে চাই। যখন মার্কস বাড়লো কীভাবে তার তদন্ত হচ্ছে তখন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন তিনি এসে চাকরির পরীক্ষায় মার্কস বাড়িয়ে দিতে বলেছিলেন। এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতির অবসানের জন্যই আমাদের লড়াই।
Comments :0