Sandeshkhali

তৃণমূল নেতাকে তাড়া করা গ্রাম বলল, ‘মমতা, অভিষেককে চাই না’

রাজ্য

প্রবীর দাস: বসিরহাট, 
 

গ্রামের গর্জন শুনিয়ে দিচ্ছে সন্দেশখালি। তৃণমূল নেতাকে তাড়া করা মহিলারা চিৎকার করে বলছেন, ‘মমতাদিকে চাই না। অভিষেককে চাই না। শাহজাহানদের শাস্তি চাই।’
ঘটনাস্থল বেড়মজুর। থানা— সেই সন্দেশখালি।
রবিবার সকাল থেকে তৃণমূলের বেড়মজুর অঞ্চল সভাপতি অজিত মাইতিকে ধাওয়া করেন গ্রামবাসীরা। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। শনিবারই অজিত মাইতিকে সিরাজউদ্দিনের বদলে অঞ্চল সভাপতি করেছিল তৃণমূল। শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিন এখন এলাকা ছাড়া। রবিবার অজিতকে তাড়া করেন গ্রামবাসীরা। ছুটতে ছুটতে অজিত সিভিক ভলান্টিয়ার বিপ্লব দাসের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ঘরের দরজায় ভিতর থেকে তালা দিয়ে দেন। স্নান সেরে এসে বিপ্লব দাসের বাবা গৌর দাস এসে দেখেন দরজা বন্ধ। ভিতরে লুকিয়ে তৃণমূলের ডাকসাইটে নেতা। গৌর দাসের বাড়ি ঘিরে ফেলে গ্রামবাসীরা। ভিতরে তৃণমূল নেতা তখন ঠকঠক করে কাঁপছেন, কাকুতি মিনতি করছেন। তৃণমূল নেতাকে উদ্ধার করতে পুলিশ পৌঁছায়। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা পুলিশকে মহিলারা বলতে থাকেন, ‘‘আপনারা এতদিন কোথায় ছিলেন? বারেবারে আপনাদের কাছে গিয়েছি। একটি বারের জন্য আমাদের দিকে ফিরে তাকাননি। আর এখন এসেছেন শাহজাহান, সিরাজউদ্দিন, অজিত মাইতিদের রক্ষা করতে?’’
অজিত মাইতি ঘরের ভিতর থেকেই সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন,‘‘আমার একটাই অন্যায়, তৃণমূল দলটা করেছি। সিরাজউদ্দিন একটা পচা আলু, দুর্নীতিগ্রস্ত। আমি ওদের সঙ্গে থেকে পচে গেছি।’’
এই ঘটনার সময়েই তৃণমূলের নেতা, সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানান যে, অজিতকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অজিত মাইতি তা শুনে বলেন,‘‘আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব।’’ 
অজিত জানিয়েছেন,‘‘আমি ২০১৯-এ বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসি। সিরাজউদ্দিন আমাকে মেরে ধরে তৃণমূলে নিয়ে এসেছিল।’’
বেড়মজুরে সাংবাদিকরা গ্রামবাসীদের প্রশ্ন করেন যে, আপনারা কী চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এখানে আসুন। অভিষেক ব্যানার্জি আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে...গ্রামবাসীরা সমস্বরে বলেন,‘‘আমরা মমতাদিকে চাই না, অভিষেককে চাই না। ওনারা তো শাহজাহানের পাশেই ছিলেন। আমরা শাহজাহানের শাস্তি চাই।’’ 
এদিন শাহজাহানের গ্রেপ্তারের দাবিতে পোস্টার দেখা যায় সন্দেশখালির খুলনায়। এদিন গৌর দাসের বাড়ি থেকেই প্রায় সাড়ে ৪ঘণ্টা পরে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
রবিবার বেড়মজুর -২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছারিপাড়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসুরা আসেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে। তাঁরা গ্রামে ঢুকতেই ‘গো ব্যাক পার্থ ভৌমিক, গো ব্যাক সুজিত বসু’ স্লোগান দেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের হাতে ছিল পোস্টার প্ল্যা কার্ড। তাতেও লেখা ‘গো ব্যাক পার্থ ভৌমিক, গো ব্যাক সুজিত বসু’। কেন আপনারা মন্ত্রীদের গো ব্যাক বলছেন? তারা আপনাদের যাবতীয় অভিযোগ শুনতে এসেছেন। সব সমস্যার সমাধান করবেন বলছেন। জমি ফিরিয়ে দেবেন বলছেন। এই প্রশ্নের উত্তরে গ্রামবাসীদের একজন চন্দনা দাস বলেন,‘‘আমরা তৃণমূল করি। তাও আমাদের উপর দিনের পর দিন অত্যাচার হয়েছে। আমাদের স্বামীরা বাইরে কাজ করেন। কেন তাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে? আমরা বাড়ি থাকতে পারছি না। আমাদের কোনও মান ইজ্জত রাখেনি। ওনারা এতদিন কোথায় ছিলেন? এমএলএ সুকুমার মাহাতো এতদিন কোথায় ছিলেন? একদিনের জন্য হলেও খোঁজ নিয়েছেন, আমরা কেমন আছি?’’ 
এদিন কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্যোপাধ্যায়, সৌম্য আইচ রায় সহ অন্যান্য কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা সন্দেশখালির নির্যাতিতা মানুষের পাশে দাঁড়াতে রওনা দিতেই হাড়োয়ার ঘোষপুরে বাসন্তী হাইরোডে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পুলিশের সাথে কংগ্রেস কর্মীদের খণ্ডযুদ্ধ যুদ্ধ বেধে যায়। 
বেড়মজুরের ঝুপখালি ও কাছারিপাড়া উত্তপ্ত হওয়ার পিছনে সেখানকার গ্রামবাসীদের প্ররোচনা দিয়েছেন আইএসএফ নেত্রী আয়েশা বিবি— এই অভিযোগে মিনাখাঁর মঠবাড়ির বাসিন্দা আয়েশা বিবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিবার তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে আনার সময় আদালতের বাইরে আয়েশা বিবির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় আইএসএফের কর্মী সমর্থকরা। আয়েশা বিবিকে বিচারক ৩দিন পুলিশি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment