Editorial on sfi dyfi

মারের মুখে জেদি লড়াই

সম্পাদকীয় বিভাগ

ডিওয়াইএফআই’র ডাকে উত্তরকন্যা অভিযানের মিছিলে বর্বর আক্রমণ চালিয়েছে পুলিশ। সম্পূর্ণ একতরফা আক্রমণ, যেন মারবে বলেই প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল পুলিশকে। এই কর্মসূচি কোনও অঘোষিত কর্মসূচি ছিল না, একমাসের বেশি সময় ধরে এই কর্মসূচির প্রচার চলেছে। সভা হয়েছে, পথসভা হয়েছে, দেওয়াল লেখা হয়েছে, মিছিল হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র প্রচার হয়েছে। কোনও বেআইনি ঘোষিত কর্মসূচি নয়। তাহলেও এই আক্রমণ কেন? 
বৃহস্পতিবারের এই মিছিলে শিলিগুড়িতে সমবেত হয়েছিলেন যুবরা। মিছিল হয়েছে বিশাল। দু’শো-পাঁচশো জনের মিছিল নয়, হাজার হাজার যুবক-যুবতীর স্রোতের মতো মিছিল। স্বচ্ছভাবে নিয়োগ, কাজের দাবি, চা বাগানের যুবকদের সমস্যা, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের দাবিতে এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন উত্তর প্রান্তের সমস্ত জনজাতির তরুণ প্রজন্ম। বিভাজনের রাজনীতির ছক ভেঙে দিয়ে এই মিছিল জীবন-জীবিকার মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরেছিল। 
মিছিল যখন উত্তরকন্যার দিকে যাচ্ছিল, তখন মাঝপথে পুলিশের পাঁচিল এই মিছিলকে আটকায়। পুলিশ মিছিলের পথরোধ করবে, এই ঘটনাও তেমন অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়া, কোনও ব্যারিকেড ভাঙার ঘটনা ছাড়াই শুরুতেই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। নির্মমভাবে লাঠি চালানো শুরু হয়। কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। নির্বিচারে আক্রমণ করে পুলিশ। মিছিলের নেতৃত্বকে আটকে রেখে দিয়ে পরে গ্রেপ্তারও করা হয়। আহতদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়নি, এমনকি আটক করে আনার পরে মারাত্মক জখম যুবকর্মীদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়নি। জল দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে অত্যাচারের নির্দেশ না থাকলে পুলিশ এতটা বেপরোয়া হলো কেন? 
কাহিনি এখানে শেষ হতে দেননি যুবরা। মার খেয়েও রাস্তা আগলে পড়েছিলেন দীর্ঘক্ষণ। সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও থেকে দেখা গেছে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পরে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে নেতৃত্বের আহ্বান, ‘কেউ যাবে না, এখান থেকে কমরেডরা লাশ হয়ে বেরোবে’। তীব্র জেদ, সাহস নিয়ে নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন তাঁরা। 
পুলিশ লাঠি-কাঁদানে গ্যাসে একটি মিছিল আটকে দিতে পারে, কিন্তু যুবদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলি বাতাসে ভেসে বেড়াবেই। বছরের পর বছর এই রাজ্যে কোনও নতুন শিল্প-কলকারখানা নেই। গ্রামে রেগার কাজে এমন চুরি হয়েছে যে কাজই বন্ধ হবার উপক্রম। চাকরি চুরি করা হয়েছে, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পৌরকর্মীদের পদ। গ্রাম-শহর থেকে হাজার হাজার যুবক পরিযায়ী হয়ে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। শাসক দলের নেতাদের অবৈধ সম্পত্তির রমরমা, সাধারণ মানুষ ভুখাপেট হয়ে যাচ্ছেন। 
প্রতিবাদ আগেও হয়েছে, আরও হবে, ঝাঁঝ বাড়ছে। এই লড়াইয়ে সামনে রয়েছেন বামপন্থীরাই। রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনে নতুন প্রাণসঞ্চার করেছে ছাত্র-যুবরা। সাজানো ‘বাইনারি’ না, রাস্তায় নেমে তারা ক্রমশ দুর্নীতি আর মিথ্যাচারের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা শাসনের ভিত নড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এই প্রতি-আক্রমণ, এই প্রতিহিংসার নির্লজ্জ প্রদর্শনী।

 

Comments :0

Login to leave a comment