Siliguri Town Railway Station

অবহেলায় গৌরব হারাচ্ছে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন

রাজ্য

প্রকৃত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুকছে শিলিগুড়ি শহরের ঐতিহাসিক স্টেশন পুরোনো টাউন স্টেশন। ভেঙে পড়া পরিকাঠামো নিয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্টেশনটি। শিলিগুড়ি পুরোনো টাউন স্টেশনকে পুনরুজ্জীবিত করতে রেলের কোনরকম উদ্যোগ নেই। 
জবরদখলকারীদের দখলে চলে গেছে স্টেশনের একাংশ। স্টেশনের আশপাশে বস্তি গড়ে উঠেছে। দিন রাত স্টেশনে চড়ে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল। শুধু তাই নয়, একেবারে একটা নোংরা পরিবেশে স্টেশন এলাকা জুড়ে আস্তানা গেড়েছে শুয়োরের দল। প্রকাশ্যেই প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে বাইক, সাইকেল, ভ্যান চলছে। চারিদিকে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রেললাইনের ওপরেই বস্তা, প্লাস্টিক বিছিয়ে দিয়ে জিনিসপত্র রোদে শুকনো করতে দেওয়া হচ্ছে। আবার বাঁশ গেড়ে টানানো দড়িতে ঝুলছে জামা কাপড়। আলু পেঁয়াজের বস্তা পড়ে রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার জায়গায় অনেকে বসে তাস খেলছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। অভিযোগ, সন্ধ্যা নামতেই অসামাজিক কাজকর্ম শুরু হয়ে যায় স্টেশন চত্বরে। যার দরুন ঐতিহাসিক টাউন স্টেশনের গৌরব হারিয়ে গেছে। 
শতবর্ষ পুরোনো শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন অতীত শিলিগুড়ি স্টেশন নামে পরিচিত ছিলো। ঐতিহাসিক এই স্টেশনে একসময় গান্ধীজি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, বাঘাযতীন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পুন্যলতা চক্রবর্তী, আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, শিবনাথ শাস্ত্রী, শরৎচন্দ্র বসু নেমেছেন। এই স্টেশন থেকেই দার্জিলিঙের পথে টয়ট্রেন ছুটতো। আর এই স্টেশনকে ঘিরে তৎকালীন শহরের উত্তরোত্তর বিকাশ ঘটেছিলো। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, শিলিগুড়ি মুখ্য ডাকঘর, শিলিগুড়ি কোর্ট, ট্রেজারি বিল্ডিং, স্কুল, কলেজ সেই সময়কালেই গড়ে উঠেছিলো শিলিগুড়ি স্টেশনের চারপাশ জুড়েই। এছাড়াও গড়ে উঠেছিলো শিলিগুড়ি আদালতের ঠিক উল্টো দিকে চারটি ঘরের সুদৃশ ডাকবাংলো। সেই ডাকবাংলো এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। বাকি সব কিছুর অস্তিত্ব থাকলেও যাকে কেন্দ্র করে এই শিলিগুড়ির শহরের বিকাশ ঘটেছিলো সেই শিলিগুড়ির পুরোনো টাউন স্টেশনই আজ জেল্লা হারিয়ে ফেলেছে। স্টেশন চত্বর এখন ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
পুরোনো স্টেশনের গৌরবময় ইতিহাস শুধুমাত্র বইয়ের পাতাতেই লিপিবদ্ধ রয়ে গেছে। পুরাতন এই শিলিগুড়ি স্টেশনকে ঘিরে স্মৃতি যেন এখনও জ্বলজ্বল করছে শহরের প্রবীণদের চোখে। শহরের প্রবীণদের কথায়, হেরিটেজ রক্ষার কোন আন্তরিক প্রয়াস নেই। হেরিটেজ ঘোষণাই সার। শিলিগুড়ির প্রাচীণ এই রেল স্টেশনটি দিন দিন লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যাচ্ছে। পড়ে রয়েছে শুধুই কাঠামো। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন একমাত্র স্টেশন যে স্টেশনটির পুরোটাই পরিচালিত হয় মহিলাদের দ্বারা। রেলদপ্তরের সদিচ্ছায় শিলিগুড়ি পুরোনো টাউন স্টেশন কি তার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে ? বর্তমানে এই প্রশ্ন উঠেছে শহরের বিভিন্ন মহলে।

Comments :0

Login to leave a comment