EDITORIAL

সবচেয়ে সস্তা টাকা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial

২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপি নেতারা মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময় মূল্য নিয়ে নিত্য মশকরা করতেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে অত্যন্ত কদর্যভাবে বিদ্রুপ করতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগচ্ছে টাকার মূল্য। ১৯১৪ সালে টাকায় ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৬২ টাকা। সেবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী প্রচারের ঝড় তুলে বলেছিলেন তারা যদি ক্ষমতায় আসেন তাহলে প্রতি ডলারের মূল্য ৪০ টাকায় নামিয়ে আনবেন। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটকে হারিয়ে বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন জোট জয়ী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ভোটের আগে টাকার মূল্য নিয়ে যার মুখে খই ফুটত প্রধানমন্ত্রী হবার পর গত ৯ বছরে একবারের জন্য টাকার মূল্য নিয়ে টু শব্দটিও করেননি। কয়েকদিন আগে লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের দীর্ঘ ভাষণে অর্থনীতি নিয়ে বিস্তর রঙিন ফানুস উড়িয়েছেন। অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মত যথারীতি টাকার মূল্য নিয়ে কোনও কথা বলেননি। তাঁর ভাষণের পর ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্য এক লাফে ৮৩.১৫ টাকা ছুঁয়ে সর্বকালীন রেকর্ড সৃষ্টি করতে চলেছে।
টাকার বিনিময় মূল্য কোনও নেতা বা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না, তা সে তিনি যত ক্ষমতাসীনই হোন না কেন। ৫৬ ইঞ্চির ছাতিওয়ালা মনে করেন তিনি চাইলে সবকিছু করতে পারেন। তাই আলটপকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছেন ডলারের ‍বিনিময় মূল্য ৪০ টাকায় নামাবেন। ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছর শাসন করে যখন দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচনে লড়ছেন তখন টাকার মূল্য নিয়ে তাঁর রা নেই। অথচ তখন ডলার মূল্য ৬২ টাকা থেকে ৭০ টাকা হয়ে গেছে মোদীর পাঁচ বছরের শাসনে। এবার আবার তৃতীয়বারের জন্য নির্বাচনের মুখোমুখি এসে দেখা যাচ্ছে ডলার মূল্য ৮৩ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালের ৬২ টাকা থেকে ৪০ টাকায় নামানোর গল্প শুনিয়ে এক টাকাও কমাতে না পারলেও দক্ষতার সঙ্গে বাড়িয়েছেন। এই মুহূর্তে বিশ্বের দুর্বলতর মুদ্রার মধ্যে ভারতের টাকা অন্যতম। টাকাকে দুর্বল করা নরেন্দ্র মোদীর কীর্তির মধ্যে একটি। তিনি দাবি করেন বি‍‌শ্বে ভারত নাকি দারুণ শক্তিশালী হয়েছে তার কল্যাণে। যার টাকার মূল্যই ধসে পড়ছে সে কেমন শক্তিশালী বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
অর্থনীতির বিপদ সঙ্কেত হিসাবে যে যে বিষয়গুলিকে মান্যতা দেওয়া হয় মুদ্রা মূল্য তার মধ্যে একটা। বিদেশি মুদ্রা তথা ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য কমা মানে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে তার প্রতিক্রিয়া গুরুতর রূপ নিতে পারে। দেশ থেকে বিদেশি লগ্নিকারীরা লগ্নি তুলে নিতে পারে। আমদানি ব্যয়সাধ্য হতে পারে। বি‍‌শেষ করে তেল আমদানি করতে গিয়ে হাঁড়ি উপুড় হয়ে যেতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন জলের দরে রাশিয়ার তেল মিলছে। তা না হলে তেল কিনতেই অর্থনীতির নাভিশ্বাস উঠে যেত। এখন উচ্চ খাদ্যমূল্যের রাশ টানতে তোড়জোড় চলছে রাশিয়া থেকে সস্তায় গম কেনার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গম কিনতে হলে বিপুল টাকা খরচ হয়ে যাবে। দেশে দাম কমার বদলে আরও বাড়বে। অর্থনীতির গতিকেও পেছনে টানবে। তাই সব কিছু আড়াল করে তিনি শুধু স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াচ্ছেন।


 

Comments :0

Login to leave a comment