Siliguri Rally

সারা দেশের মতো বিক্ষোভ শিলিগুড়িতেও, বিশাল শ্রমিক-কৃষক মিছিল

রাজ্য জেলা

ছবি রাজু ভট্টাচার্য।

অনিন্দিতা দত্ত - শিলিগুড়ি


সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষার দাবি জানিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মানুষ মারা, জনস্বার্থ বিরোধী নীতি, সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুররা শিলিগুড়িতে ‘কৃষক শ্রমিক মহাপড়াও’ কর্মসূচিতে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হলেন। মিছিল থেকে আগামীদিনে আরো শক্তিশালী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দেওয়া হলো। মঙ্গলবার দুপুরে শ্রমজীবি মানুষদের লড়াই আন্দোলনের এক উজ্জ্বল মুখ হয়ে উঠেছিলো শহর শিলিগুড়ি। মহানন্দা নদীর সেতু থেকে শুরু করে গোটা হিলকার্ট রোড জুড়ে লাল পতাকা উড়েছে। দুপুরের পর উত্তরের বিভিন্ন জেলাগুলি থেকে আগত শ্রমজীবি মানুষদের দখলে চলে যায় শহরের রাজপথ। শুরু হয় মোদী সরকারের দেশ বিরোধী নীতির প্রতিবাদে সারা উত্তরবঙ্গের ‘কৃষক শ্রমিক মহাপড়াও’ মিছিল। মহানন্দা সেতু থেকে শিলিগুড়ি মুখ্য ডাকঘর পর্যন্ত ছাপিয়ে গেছে মানুষ। 
বেশ কিছু বাগান ও ডুয়ার্সের অনেক বাগানের চা শ্রমিকরাই এদিন হাজির ছিলেন। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন, কর্মচারী ফেডারেশন এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চার যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে দুপুরে মহানন্দা সেতুর সামনে থেকে মিছিল শুরু হয় শ্রমজীবি মানুষদের। হিলকার্ট রোড ধরে মিছিল এগিয়ে চলে সামনের দিকে। মিছিল থেকে আওয়াজ উঠে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারী শূন্যপদ পূরণ করার। মিছিল বার বার সোচ্চারিত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্র ও দেশের সম্পদ বিক্রির বিরুদ্ধে, জমির অধিকার ও ন্যায্য মজুরি আদায়ের দাবিতে। মিছিলের সমাপ্তি হয় শিলিগুড়ি মুখ্য ডাকঘরের সামনে। এদিন মিছিল শুরুর আগে মহানন্দা নদীর তীরে এবং মিছিলের সমাপ্তির পরে মুখ্য ডাকঘরের সামনে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি জিয়াউল আলম বলেছেন, অভিজ্ঞতায় শ্রমজীবি মানুষ বুঝেছেন কেন্দ্রের বর্তমান সরকার মুষ্টিমেয় ধনী ও কর্পোরেটরের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই দেখছে না। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ ছড়ানোর সৃষ্টি করছে। প্রায় দশ বছর হতে চলা আরএসএস-বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন মোদী শাসনে দেশের শ্রমিক কৃষক ও সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মোদী সরকারের নীতিতে দেশের সব অংশের মানুষই আক্রান্ত। তাই দেশের নানা প্রান্তে রাজপথে একের পর এক আছড়ে পড়ছে প্রতিবাদী আন্দোলন। 
কৃষক ও খেতমজুর আন্দোলনের নেতা তমসের আলি বলেন, সারা দেশের শ্রমিক বিরোধী নীতির দরুন দেশের অর্থনীতি ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রের সরকার সাম্প্রদায়িকতা ও ঘৃনার রাজনীতির বীজ বপন করতে ব্যস্ত। শ্রমিক কর্মচারীদের দাবিদাওয়া, শূন্যপদ পূরণ করা সমস্ত ক্ষেত্রে মোদী সরকার ব্যর্থ। একটার পর একটা আইন পার্লামেন্ট পাশ করে আদিবাসী ও উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের জমির অধিকার নসাৎ করে দিতে চাইছে সরকার। কৃষক ও চা শ্রমিকদের জমির অধিকার থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। 
সিআইটিইউ দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, রাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। চাকরির দাবিতে যোগ্য প্রার্থীরা রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে। মোদী সরকারের সময়কালে এক অসহনীয় বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলছে যুব সমাজ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারী শূন্যপদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সরকার শ্রম আইনের সুযোগ সুবিধা এবং কল্যানমূলক প্রকল্পগুলি ছাঁটাই করছে কর্পোরেট মালিকদের স্বার্থে। দেশের শ্রমজীবি মানুষের ওপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার। 
এদিনের বিক্ষোভ সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি গৌতম ঘোষ, চা শ্রমিক আন্দোলনের নেতা বিকাশ মাহালি, ইউটিইউসি’র নির্মল চন্দ্র দাস, এআইসিসিটিইউ’র অভিজিৎ মজুমদার, অল ইন্ডিয়া এগ্রিকালচার ওয়ার্কাস ইউনিয়নের তরফে কৌশিক ভট্টচার্য, আইএনটিইউসি’র দিলীপ দাস, এআইটিইউসি’র পার্থ মৈত্র, টিইউসিসি‘র রানা ঘোষ, ১২ই জুলাই কমিটির মৃত্যুঞ্জয় সরকার প্রমুখ। এদিনের মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ব্যাঙ্ক, বীমা, এলআইসি, পেনশনার্স সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এদিন বিক্ষোভ সভা চলাকালীন প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দাবিদাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মুখ্য ডাকঘরের জেনারেল পোষ্ট মাস্টারের হাতে তুলে দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সমন পাঠক, তমসের আলি, সুষমা লাকড়া, দেবাশীষ রায়, নন্দা সেন, পার্থ ভৌমিক ও তাপস গোস্বামী।

Comments :0

Login to leave a comment