Siliguri House Wife Beaten

ফের শসক দলের সালিশি সভায় মারধর, অপমানে আত্মঘাতী গৃহবধূ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ মহিলাদের

রাজ্য

আত্মঘাতী গৃহবধূর বাড়িতে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ

চোপড়ার ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে পঞ্চায়েতের সালিশী সভায় ডেকে এনে মারধোর করা হলো গৃহবধূকে। লজ্জায়, অপমানে বিষ পান করে আত্মঘাতী হলেন মহিলা। চোপড়াকান্ডের ছায়া নামিয়ে আনা হলো শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ১নম্বর অঞ্চলের বকরাভিটা এলাকায়। পুলিশ প্রশাসন থাকা সত্ত্বেও কেন একের পর এক ঘটনায় সালিশী সভায় তৃণমূলীরা আইন ও শাসনের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে। তাহলে পুলিশের ভূমিকা কি। ফুলবাড়ি ১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গৃহবধূ আত্মহত্যার ঘটনায় আরো একবার সেই প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠতে শুরু করেছে। 
অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা মালতি রায়ের স্বামী শম্ভু রায়ের কথাতেই সালিশী সভা বসানো হয়েছিলো। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে নিখোঁজ থাকার আটদিন পরে বাড়ি ফিরতেই পঞ্চায়েতের সালিশী সভায় মহিলা ও তার স্বামীকে বেধরক মারধোর করার অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, সবিতা বর্মন নামে মহিলা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে কোন এক যুবকের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সন্ধান না মেলায় নিখোঁজ গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত বিষয়ে এজাহার দায়ের করা হয়। এরপর শুরু হয় পুলিশের তল্লাশি। এরই মাঝে সবিতা বর্মন তার স্বামী তাপস বর্মনকে ফোনে জানায় যে কোন এক জায়গায় বিপদের মধ্যে রয়েছে সে। বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বলে গৃহবধূ তার স্বামীকে। আত্মঘাতী গৃহবধূর স্বামী তাপস বর্মনের অভিযোগ, স্ত্রীর ফোন পেয়ে ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে নিজের বাড়িতে বউকে আনিনি। 
ওই এলাকার কিছুটা দূরেই স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে রেখে এসেছিলেন স্বামী। ফুলবাড়ি বকরাভিটায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসতেই পঞ্চায়েত সদস্যা সহ এলাকার কিছু মানুষ পরিবারের কাছে দাবি জানায় যে পঞ্চায়েতের সালিশী সভায় গৃহবধূকে তাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে। ‘অল্প ডোজ’ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সেই মতো গৃহবধূ সবিতা বর্মনকে সালিশী সভায় হাজির করা হলে পঞ্চায়েত অফিসে সকলের সামনে স্বামী স্ত্রীকে এক সাথে ব্যাপক মারধোর করা হয়। স্থানীয় তৃণমুল নেত্রী স্বপ্না অধিকারী, টুম্পা রায় সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মারধোর করার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, মারধোর করা হয় পরিবারের অন্যদেরও। বাবার বাড়ি ওই এলাকাতে থাকাতে সালিশী সভাতে গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। দিদিকে মারের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে মার খেতে হয়েছে ভাইকেও। অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্যা মালতি রায়ের স্বামী শম্ভু বর্মনের কথাতেই সালিশী সভাতে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলো স্বামী। আর সেই সালিশী সভাতেই স্বামী স্ত্রীকে স্থানীয় মহিলারা মারধোর করা হয়। সব কিছু মানিয়ে নিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ফের সংসার করতে চাইলেও সালিসী সভার মাতব্বররা তাতে সায় দেয়নি। স্বামীকে হুমকী দেওয়া হয় আত্মঘাতী গৃহবধূ সবিতা বর্মনকে যেন কোনভাবেই ঘরে তোলা না হয়। শনিবার রাতের এই অপমান সহ্য করতে না পেরে ঘটনার পরে বাড়ি ফিরে অ্যাসিড জাতীয় কিছু খেয়ে গৃহবধূ সবিতা বর্মন আত্মহত্যা করেন। 
আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল ও পরবর্তীতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে গৃহবধূকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রবিবার ময়নাতদন্তের পরে গৃহবধূর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। দিদির আত্মহত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে নিউ জলপাইগুড়ি থানায় গৃহবধূর ভাই লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে। ভাইয়ের অভিযোগ, আত্মহত্যার আগেই মেরে দিদিকে আধ মরা করে দিয়েছিলো ওরা। প্রত্যেক অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে মৃতের পরিবার। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাগর রায়, শিবানী রায়, স্বপ্না অধিকারী ও ব্রজেন অধিকারী নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। 
মঙ্গলবার সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল আত্মঘাতী গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সাথে দেখা করেন। পরিবারের পাশে থেকে সমস্ত ধরনের আইনী সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, দিলীপ সিং, জয় চক্রবর্তী, দিবস চৌবে, রত্না চৌবে, দেবাশীষ অধিকারী, অনিমেষ সরকার, কাজল পাল, সাগর শর্মা প্রমুখ। 
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দকে কাছে পেয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারটি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আমাদের ঘরের বউ নিখোঁজ ছিলো। সেবিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। খুঁজে বের করে ফিরিয়েও এনেছিলাম। কিন্তু সংসার করা হলো না। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এদিন সিপিআআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, তৃণমূল নেতারা প্রশাসক হয়ে উঠেছে। একের পর এক বর্বর ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। সমস্ত ঘটনার পেছনে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গৃহবধূকে পঞ্চায়েতের সালিশী সভায় ডেকে মারধোর করে আত্মহত্যার প্ররোচনায় সৃষ্টি করেছে স্থানীয় তৃণমূলীরা। তৃণমূলীরাই খুন করেছে সবিতাকে। অবিলম্বে ঘটনায় অভিযুক্ত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। ফুলবাড়ির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন শিলিগুড়িতে একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে।
চোপড়ার লক্ষীপুরের দীঘল গাও গ্রামে যুগলকে মারধরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন মহিলারা। সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পাকুড়তলা মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী জবাব চাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে এদিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। চোপড়া কান্ডের ছায়া পড়েছে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ১নম্বর অঞ্চলের বকরাভিটা এলাকায়। একই সঙ্গে এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালীন ফুলবাড়িতে পঞ্চায়েতের সালিশী সভায় ডেকে এনে মারধোর করা গৃহবধূর আত্মঘাতী হবার ঘটনারও ধিক্কার জানানো হয়। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে যুক্ত তৃণমূলী নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। দীর্ঘসময় ধরে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন মহিলা নেত্রী তানিয়া দে, মুনমুন ভৌমিক, সাগরিকা চক্রবর্তী, আরতী সাহা, সুনীতা দাস সহ অন্যান্যরা।

Comments :0

Login to leave a comment