তিস্তা নদীর আগ্রাসনের শিকার মাল ব্লকের টটগাও বস্তির জলের ট্যাঙ্ক, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও বাড়িঘর। অন্যদিকে ময়নাগুড়িতে বাড়ছে সাপের উপদ্রব। সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আট জন। ঘটনায় চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য দপ্তরের।
তিস্তা নদীর নদীর জল হু হু করে ঢুকছে মাল ব্লকের টটগাও বস্তির গ্রামের ভিতরে। কোথাও হাটু আবার কোথাও কোমর জল। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাড়ি, পানীয়জলের ট্যাঙ্ক ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তিস্তার গর্ভে চলে গেছে। বিপর্যস্ত মানুষ জিনিসপত্র গুটিয়ে পরিবার সহ অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বাসস্থানের সন্ধানে। পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবরকম ত্রানের ব্যবস্থা করলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন টটগাওবাসী।
মাল ব্লকের তিস্তা পাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম টটগাও বস্তি। প্রায় ৩৫০ পরিবারের বাস। বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা কৃষিকাজ ও পশুপালন। এই এলাকায় তিস্তার নদীর পার বরাবর কোন বাঁধ নেই। মাঝেমধ্যে তিস্তায় জল বাড়লে গ্রামের আবাদি জমিতে জল ঢুকে যায়।
চলতি বছর বর্ষা শুরু হতেই তিস্তার জল গ্রামে ভিতরে প্রবেশ শুরু করে। বর্ষা যতই প্রবল হয়েছে তিস্তার আগ্রাসন ততই বেড়েছে। গত ১৫ দিন ধরে গ্রামের বাড়িঘরের মধ্যে জল রয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে বেশকিছু বাড়িঘর তিস্তার গর্ভে চলে গেছে। শুক্রবার দুপুরে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দেখা গেল আস্তে আস্ত জলের ট্যাংক, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র জলের তলায় তলিয়ে গেল।
সবে শ্রাবণ মাস বর্ষা আরও বেশ কিছুদিন রাজ করবে সেই ভয়েই অনেকেই ট্যাক্টারে জিনিসপত্র চাপিয়ে অন্যত্র পাড়ি দেওয়া শুরু করেছে।
গ্রামের বাসিন্দা ভীমবাহাদুর শর্মা জানান, গ্রামের মানুষ বহু কষ্টে বেঁচে আছে। তিস্তার যা রূপ তা দেখে মনে হয় গোটা গ্রামই নদীর গ্রাসে চলে যাবে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অনুপ শর্মা ও ভীমা উপাধ্যায় জানান, নদী ক্রমাগত ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ। অর্ধেক বাসিন্দাদের এলেনবাড়ি স্কুলে সরিয়ে আনা হয়েছে। পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান-সাহায্য করা হচ্ছে। তবে গ্রাম রক্ষা করা না গেলে সমস্যা আরও বাড়বে।
একটানা বৃষ্টির কারণে ডুয়ার্সে জলমগ্ন হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। চাষের ক্ষেত সমস্তটাই জলমগ্ন। এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ জায়গার খোঁজে ঘরের ভেতরে, গোডাউনে, উঁচু জায়গায় ঢুকে পড়ছে সাপ। আর অসাবধানতায় সাপের কামড়ে অসুস্থ একাধিক। ময়নাগুড়িতে সাপের কামড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আট জন। ধূপগুড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে গত সাত দিনে উদ্ধার হয়েছে কম করে ৫০ টি সাপ। সেই সাথে সাপে কামড়ের রোগীর সংখ্যা ও প্রতিদিন বাড়ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে সাপে কাঁটা রোগীর!
লোকালয়ে সাপের উপদ্রব বাড়ায় সাধারণ মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন সর্প বিশারদ এবং পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। সর্প বিশারদ মিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘‘যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে ডুয়ার্সের এই কারণে সমস্ত খাল বিল ডোবা পুকুর ইঁদুরের গর্ত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তাই সাপ নিরাপদ উঁচু জায়গার খোঁজে গোডাউন ঘর গোয়ালঘর অফিসের ভেতরে অন্ধকার জায়গায় শোবার ঘরে রে ঢুকে পড়ছে। তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। রাতে ঘুমতে যাবার সময় ভালো করে লাইট দিয়ে খাটের তলা দেখে নেওয়া। অন্ধকার জায়গায় হাত না দেওয়া, রাতের বেলা ঘর থেকে বের হলে লাইট সাথে নেওয়া। আর কোন ব্যাক্তিকে যদি সাপে কামড়ে দেয় তাহলে ওঝা কবিরাজের কাছে না গিয়ে সোজা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসক সাধন সরকার বলেন, ‘‘হাসপাতালে বর্তমানে আটজন ভর্তি রয়েছেন। একজনকে জলপাইগুড়ি রেফার করা হয়েছে। সকলকেই সাপে কামড়াচ্ছে এটা বলা যাবে না। কিছু অপরিচিত প্রাণীর কামড় রয়েছে। কারণ অনেকেই দেখেনি কিসে কামড়াচ্ছে এমনও কয়েকজন রয়েছেন।’’
Teesta River Flood
তিস্তার জলে বিপর্যয় মাল ব্লকের টোটগাও, সাপের আতঙ্ক ধূপগুড়িতে
×
Comments :0