Editorial

জা‍‌রিজুরি খাটলো না

সম্পাদকীয় বিভাগ


আত্মরক্ষার কোনও কৌশলই শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকলো না। সর্বোচ্চ আদালতের কড়া ধমক খেয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক যাবতীয় নির্বাচনী বন্ড তথ্য জমা দিয়ে এল নির্বাচন কমিশনের কাছে। যে স্টেট ব্যাঙ্ক কয়েকদিন আগে যুক্তির মালা সাজিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিল তাদের কাছে বন্ড সংক্রান্ত যে বিপুল তথ্যরাজি মজুত আছে সেগুলি ঠিকঠাক সাজিয়েগু‍‌ছিয়ে রিপোর্ট আকারে হাজির করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই এই কাজটা সুসম্পন্ন করার জন্য তাদের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। কিন্তু সেই আবেদনে কর্ণপাত না করে ১১ মার্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয় কোনও ওজর আপত্তি চলবে না। রিপোর্ট দিতে হবে ১২ মার্চ বিকেল পাঁচটার মধ্যে। নচেৎ আদালতের নির্দেশ অমান্য করার দায়ে সাজা পেতে হবে। আশ্চর্য কাণ্ড যে স্টেট ব্যাঙ্ক সুপ্রিম কোর্টে লিখিত আবেদন জানিয়ে রিপোর্ট তৈরির জটিলতার কথা বলে রিপোর্ট জমা দেবার জন্য ১২৫ দিন অতিরিক্ত সময় চেয়েছিল ধমক খাবার পর মাত্র ৩০ ঘণ্টার মধ্যে সেই রিপোর্ট তৈরি করে যথাস্থানে জমা দিয়ে দিয়েছে। এর থেকে প্রমাণ হয়ে গেল রিপোর্ট তৈরিতে আদৌ কোনও সমস্যাই ছিল না। ব্যাঙ্ক বি‍‌শেষ কোনও নির্দিষ্ট কারণে পরিকল্পিতভাবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভা‍‌বে নির্বাচনের আগে যাতে কোনোভাবেই বন্ড তথ্য প্রকাশ্যে না আসে তার জন্য সময় চেয়েছিল। আর এই দেরি করাটা ব্যাঙ্কের নিজস্ব মস্তিষ্ক প্রসূত উদ্দেশ্য ছিল না। তাছাড়া বন্ড তথ্য প্রকাশ্যে এলে বা গোপন থাকলে স্টেট ব্যাঙ্কের কিছু যায় আসে না। তাই তাদের মাথাব্যথার কোনও সঙ্গত কারণ নেই। কিন্তু তাদের মাথা ঘামাতে হয়েছে তাদের মালিক সরকারের চাপে ও নির্দেশে। এটা যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হতো তাহলে সরকার তাদের বাধ্য করাতে পারত না, কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বশাসিত সংস্থা। স্টেট ব্যাঙ্কের মালিক যেহেতু সরকার তাই সরকারের নির্দেশ তারা মানতে বাধ্য। বস্তুত এই কারণেই নির্বাচনী বন্ডের দায়িত্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে না দিয়ে মোদী-শাহ’রা স্টেট ব্যাঙ্ককে দিয়েছে। তারজন্য আধডজন আইন সংশোধন করতে হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো কেন স্টেট ব্যাঙ্ক বন্ড তথ্য দিতে গড়িমসি করছিল। উত্তরটা পরিষ্কার। সরকার চাইছিল না ভোটের আগে বন্ড তথ্য প্রকাশ্যে চলে আসুক। তাহলে বন্ডকে কেন্দ্র করে সরকার তথা শাসকদলের বিরুদ্ধে এতদিন ধরে বিরোধীরা যেসব অভিযোগ করে আসছে তা জনগণের সামনে হাতেনাতে প্রমাণ হয়ে যাবে। সেটা মোদীদের পক্ষে মোটেই স্বস্তির কারণ হবে না।
গণতান্ত্রিক দেশে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলি কাদের টাকায় ভোট কিনছে বা প্রচারের ঝড় তুলছে সেটা সর্বসমক্ষে আসা জরুরি। কিন্তু মোদী-শাহ’রা কোনও মতেই চান না কর্পোরেটের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত মানুষ জেনে ফেলুক। চান, আদানি-আম্বানিদের মতো বন্ধু কর্পোরেট মালিকরা তাদের ভোটে জেতানোর জন্য যে বিপুল পরিমাণ টাকা দিচ্ছে সেটা পুরোপুরি গোপন থাকুক। নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই। তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে রাজ্য সভায় বিল পাশ না হবার আশঙ্কায় ফিনান্স বিল হিসাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিলকে লোকসভায় পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করা হয়েছে। এখন ‍একে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়ায় বিপদে পড়েছে মোদীর দল। বিশেষ করে ভোটের আগে সব গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে গেলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে ভোটে। অতএব ভোটের আগে বন্ড তথ্য প্রকাশ ঠেকাতে স্টেট ব্যাঙ্ককে আদালতে পাঠিয়েছে মোদী-শাহ’রাই। কিছুটা সময় চেয়ে এবং গড়িমসি করে কোনোরকমে ভোটটা যাতে পার করে দেওয়া যায়।

Comments :0

Login to leave a comment