Tipra Motha

ইস্তফার এক ঘণ্টার মধ্যে বিরোধী দলনেতা মন্ত্রী ত্রিপুরায়, মথা ঢুকল বিজেপি সরকারে

জাতীয়

মথা নেতা প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা


ইস্তফার এক ঘণ্টার মধ্যে বিরোধী দলনেতা
মন্ত্রী ত্রিপুরায়, মথা ঢুকল বিজেপি সরকারে

নিজস্ব সংবাদদাতা: আগরতলা, ৭ মার্চ তিপ্রা মথার দুই বিধায়ক অনিমেষ দেববর্মা ও বৃষকেতু দেববর্মা মন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন। বৃহস্পতিবার সকালে বিরোধী দলনেতার পদে পদত্যাগ করার এক ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন অনিমেষ দেববর্মা। শেষ বাজেট অধিবেশনেও সরকার বিরোধী কৌশল নেওয়া তিপ্রা মথা ডুবে গেল শাসক দলের ভেতরে। রাজভবনের দরবার হলে শপথ বাক্য পাঠ করালেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা, তিপ্রা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা সহ মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্য। তবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান যেমন হয় তেমন মনে হয়নি। যেন দায়সারা গোছের ছিল গোটা অনুষ্ঠান। লোকজন ছিল না। 
তিপ্রা মথার অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে ত্রিপুরা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ। বৃহস্পতিবার দশরথ দেব ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নরেশ জমাতিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রাধাচরণ দেববর্মা। তাঁরা বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি এবং বিজেপি জোটের সরকারে ঢুকে যাওয়ায় মথার প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারে তিপ্রা মথার যাওয়া এবং ত্রিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নরেশ জমাতিয়া ও রাধাচরণ দেববর্মা বলেছেন, সবটাই ছিল সাজানো নাটক। সেই নাটকের যবনিকাপাত হলো। মথা নেতৃত্ব নিজেরাই নিজেদের মুখোশ উন্মুক্ত করে দিলেন। জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বুধবার গণমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে পরাস্ত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে জিএমপি।  নির্বাচনকে সামনে রেখে বুথ, সেক্টর, অঞ্চল, বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক জমায়েত করা হবে, সাধারণ মানুষের কাছে যাবেন জিএমপি কর্মীরা। 
শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। সাংবাদিকরা এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে। শপথ গ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে একাই বেরিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। অপেক্ষারত সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের জবাব দিলেন না। শুরুর দিকে ‘নো কমেন্ট’ বলে এড়িয়ে গেলেন। যদিও গাড়িতে উঠে যাওয়ার পর বললেন মুখ্যমন্ত্রী, ভালোই হলো। যখন যা হয় সবটাই আপনারা জানতে পারবেন। জাতি জনজাতি সবাই মিলে শান্তিতে আমরা বসবাস করব যেটা ভেবেছি তার একটা ঝলক আজকে দেখতে পেলেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে ফিরে দপ্তর বণ্টন করবেন বলেও জানালেন। 
নয়া দিল্লিতে চারদিন আগেই নাটকীয় ভঙ্গিতে ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা সই করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা সরকার ও  তিপ্রা মথা। দ্বিতীয় বিজেপি জোট সরকারের এক বছরের মাথায় দুই মন্ত্রীর শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে তিপ্রা মথাকে বোতলবন্দি করে নিলো শাসক দল। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হওয়া বিজেপি তিপ্রা মথার গোপন আঁতাত রাজভবনের দরবার হলে আনুষ্ঠানিকভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে বিজেপি আইপিএফটি সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল ৯ জন মন্ত্রী নিয়ে। এক বছর হওয়ার একদিন আগেই দুই তিপ্রা মথা মন্ত্রীর শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণ হলো। বোতলবন্দি হওয়ার পুরস্কার হিসাবে দেড় জন মন্ত্রী পেল তিপ্রা মথা। একজন পূর্ণ মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী। অনিমেষ দেববর্মা পূর্ণ মন্ত্রী এবং বৃষকেতু দেববর্মা প্রতিমন্ত্রী হলেন। কোনও বিরোধী দলনেতা পদত্যাগের এক ঘণ্টার মধ্যে সরকারের মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন, এই ঘটনা ত্রিপুরায় প্রথম। ডাঃ মানিক সাহার নেতৃত্বে ১১ সদস্যক বিজেপি, আইপিএফটি এবং তিপ্রা মথা সরকার হলো।
২০২১ সালে এনজিও থেকে দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল তিপ্রা মথা। পয়লা জাতি উলোপার্টির স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ আগে জাতি, পরে পার্টি। গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবি করা হয়। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের মানুষ যখন বিজেপি’র পরাজয় নিশ্চিত করতে তৈরি তখন ফের শাসক দলকে সরকারে ফিরিয়ে আনতে গোপন আঁতাতের ভিত্তিতে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয় তিপ্রা মথা। বিজেপি’র পরিকল্পনা কৌশল অনুযায়ী সরকার বিরোধী জিগির তুলে ৪২ আসনে প্রার্থী দেয়। এর সুফল পেয়ে ৪০ শতাংশের কম ভোট পেয়েও ৬০ সদস্যক ত্রিপুরা বিধানসভায় ৩২ আসন নিয়ে কোনোক্রমে সরকার গড়ে বিজেপি। একবছর ধরে সরকার ও বিরোধী দল দুই সুবিধায় নিচ্ছিল মথা। অবশেষে গোপন আঁতাত রাজভবনে প্রক্যশ্যে এল দুই মন্ত্রীর শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে। আড়ালের বোঝাপড়া জনসমক্ষে এল।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা সেই পুরানো রেকর্ড বাজালেন। বললেন, সরকারের ভেতরে মন্ত্রীরা এবং বাইরে তাঁর নেতৃত্বে মথা উপজাতিদের জন্য লড়াই করবেন। তিনি হয়তো ধারণা করছেন এখনো সেই পুরানো রেকর্ড শোনেন মানুষ। প্রথম বারের মতো মন্ত্রী হিসাবে  শপথ নিয়ে অনিমেষ দেববর্মা বললেন, দায়িত্ব আগেও ছিল। দায়িত্বের ধরন আলাদা হয়েছে। দল যে লক্ষ্য নিয়ে মন্ত্রী করেছে সেই দায়িত্ব পালন করব। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করার পর বৃষকেতু দেববর্মা বললেন, তিন বছরের আন্দোলনে সফল হয়েছে মথা। গ্রেটার তিপ্রাল্যন্ডের দাবি থাকবে। গোপন আঁতাত ও প্রকাশ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে যে কৌশল নিয়ে বিজেপি তিপ্রা মথা চলছিল তার ষোলকলা পূর্ণ হলো মথার বিজেপি সরকারের বোতলে ঢুকে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।

Comments :0

Login to leave a comment