EC Nomination

সেকেন্ডে তিনটি করে, তৃণমূলের মনোনয়ন ঘিরে গুরুতর প্রশ্ন

রাজ্য

EC Nomination

শেষ ২ দিনে মোট ৮ ঘণ্টায় ৭৬ হাজার ৪৮৯ টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩টি করে মনোনয়ন জমা দিয়েছে শাসক দল। বলা যায় রকেট গতিতে শাসকদলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার। গত ৬ দিনে তৃণমূল মোট ৮৫ হাজার ৮১৭টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে যা মোট আসনের থেকে ১১ হাজার ৯৩০টি বেশি। তার মধ্যে প্রথম চার দিনে ৯ হাজারের কিছু বেশি। বাকিটা শেষ দু’দিনে। তৃণমূলের মনোনয়ন জমার এই পদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে। যদিও শুক্রবার রাতে কমিশনের সূত্র জানিয়েছে তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়েছে ৮৪ হাজার ১০৭ টি ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বামফ্রন্টের এক বিক্ষোভ জমায়েতে মনোনয়ন দাখিল নিয়ে  শাসক দলের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তখনও পর্যন্ত তাঁর কাছে যে তথ্য ছিল তার ভিত্তিতেই তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন। স্ক্রুটিনির সময়ে বিষয়টি তোলার এবং আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। 
  সেলিমের বক্তব্য, নিয়োগ দুর্নীতিতে যেমন ফাঁকা ওএমআর শিট বেরিয়েছে, অনুসন্ধান করলে এখানেও তেমনই মনোনয়নপত্রে অনিয়ম বের হবে। তিনি বলেন, তৃণমূলের হামলার মোকাবিলা করে প্রাণ বাজি রেখে যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়েছে, সেখানে কেবল ১৪ জুন তারিখে ৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল ৪০ হাজার মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এখানেই বেনিয়মের অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, কোন ম্যাজিকে তৃণমূলের হাজার হাজার মনোনয়ন মুহূর্তের মধ্যে জমা হয়ে গেল? প্রতিটি মনোনয়ন জমায় কত সেকেন্ড লাগলো? নাকি এজেন্সি দিয়ে হোম ডেলিভারির মতো ব্যবস্থা হয়েছিল? সেলিমের অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিতে যেভাবে ফাঁকা ওএমআর শিট বেরিয়েছিল এখানেও তেমনই আগে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে গেছে।
  

তারপর ডিসিআর কাটা হয়েছে। কমিশনের নিয়ম মানা হয়নি। 
  কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের বিডিও অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় নথি এবং টাকা জমা দিলে পাওয়া যায় ডিসিআর। সেই ডিসিআর দেখিয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে হয়। এখন প্রশ্ন, কমিশনের এই আইন মেনে প্রতি সেকেন্ডে ৩টি করে মনোনয়ন জমা দেওয়া বাস্তবে সম্ভব কি না। 
  এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপর্বে ১২ জুন তৃণমূলের পক্ষ থেকে ত্রিস্তরে ৩৪৬৯টি মনোনয়ন জমা পড়ে। সূত্রে জানা যায়, ১৩ জুন ত্রিস্তরে শাসক দলের মোট মনোনয়ন হয় ৯৩২৮। অর্থাৎ ওই দিন তৃণমূল ৫৮৫৯টি মনোনয়ন জমা দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। ১৪ জুন রকেট গতিতে এগোতে থাকে শাসক দল। ওই দিন ৪০ হাজার ১৬৩টি মনোনয়নপত্র জমা দেয় তৃণমূল। প্রতিদিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য মাত্র ৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ এক দিনে ১৪,৪০০ সেকেন্ডে হাজার হাজার মনোনয়ন জমা পড়ে যায় শাসক দলের। শেষদিন অর্থাৎ ১৫ জুনও একইভাবে ৩৬ হাজার ৩২৬টি মনোনয়ন ত্রিস্তরে জমা দিয়েছে শাসকদল। অর্থাৎ শেষ ২ দিনে ৮ ঘণ্টায় (২৮৮০০) সেকেন্ডে ৭৬ হাজার ৪৮৯ টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ফেলেছে তৃণমূল!
  

  প্রার্থী বা প্রস্তাবকের উপস্থিতিতে এত অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলেছে। কমিশন অবশ্য এই প্রশ্নে নীরবই থেকে গেছে। মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ব্লকে ব্লকে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সিসিটিভি-তে ধরে রাখার কথা। কমিশনকে অঙ্কের হিসাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে এত কম সময়ের মধ্যে তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়লো কীভাবে। হয়তো দেখা যাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছে আগে, পরে কাটা হয়েছে ডিসিআর। 
  এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে লাগাতার অশান্তি হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিজি দামোদর সারাঙ্গি ১৯ জুন কলকাতায় আসছেন বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। তিনি প্রথমে রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন। তারপর রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা আছে। পাশাপাশি এদিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আইন শৃঙ্খলার  বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করতে কমিশনে আসেন স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা এবং এডিজি জাভেদ সামিম। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কোথায় কীভাবে কাজে লাগানো হবে তা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হবে তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। এছাড়া স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করার নির্দেশ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে দেওয়া হয়েছে এবং দুই ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদ জেলার উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজও চলছে বলে এদিন জানা গেছে।  

অন্যদিকে, এদিন সেভ ডেমোক্র্যাসি পশ্চিমবঙ্গ’র পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধিদল দেখা করেন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার সঙ্গে। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী সহ ডাঃ গৌতম মুখার্জি, অপর্ণা বর্মণ প্রমুখ। একটি মিছিল করে সেভ ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্ব ও কর্মীরা কমিশনের দপ্তরের সামনে উপস্থিত হন। হিংসা ও অশান্তি রুখে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন  কমিশনারের কাছে ডেপুটেশন দেন প্রতিনিধিরা। প্রতি ভোট কেন্দ্রে অন্তত ২ জন সশস্ত্র পুলিশ, এবং নির্বাচনে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান তাঁরা। নির্বাচনের দিন এলাকায় এলাকায় ক্লাবগুলি যাতে বন্ধ রাখা হয় সেই দাবি জানান। এছাড়া গত ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর হিংসা ও অশান্তি ছড়িয়ে যে পরিবারগুলিকে ঘরছাড়া করা হয়েছিল, তাদের ভোটের আগে ঘরে ফেরানোর দাবিও নির্বাচন কমিশনারের কাছে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চঞ্চল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বিশেষত হাওড়া বাগনানে হাটুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৪০টি পরিবার এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই পরিবারগুলিরও ভোটাধিকার আছে। সুতরাং অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে, নীরব দর্শক থাকলে চলবে না।
                             

 

Comments :0

Login to leave a comment