নিজস্ব প্রতিনিধি: ডানকুনি, ২৪ ফেব্রুয়ারি— আগামী কর্মসূচি নির্ধারণ করতে সোমবার বিশেষ অধিবেশন হলো সিপিআই(এম)’র ২৭তম রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে। ১৯৩৪ থেকে ২০২৫– প্রথম সম্মেলন থেকে এই ৯১ বছরের চলার পথে এই প্রথম আগামী কর্মসূচি নির্ধারণ করতে এমন অধিবেশনের সাক্ষী রইল রাজ্য সম্মেলন। বিশেষ অধিবেশনের পরে সম্মেলনে তিন বছরের জন্য ‘আগামী কাজ সম্পর্কিত প্রস্তাব’ পেশ হয়। ২০ দফা এই প্রস্তাব প্রতিনিধিদের মতামতের পর মঙ্গলবার চূড়ান্ত হবে।
এই আগামী কর্মসূচির প্রস্তাব পেশের আগে বিশেষ অধিবেশনে রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বুথ থেকে রাজ্য, মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো লেবেলে রাজ্যের নানা ক্ষেত্রের বাস্তব অবস্থার বিভিন্ন উপাদান তুলে ধরেন রাজ্য সম্পাদক। তিনি এই সংক্রান্ত তথ্য এবং আনুষঙ্গিক বিষয় তুলে ধরেন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে। কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন পার্টিকর্মীদের একটি টিম এই পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছিলেন। মহম্মদ সেলিম বলেন, এই প্রয়াস শুধু নির্বাচনের জন্য নয়। আমাদের রাজ্যের বুথগুলিতে বসবাসকারী মানুষের সামাজিক অবস্থান, আর্থিক অবস্থা, পার্টি সম্পর্কে মানুষের বক্তব্য, ধারণা, আশা আমরা তুলে এনেছি সমীক্ষার মাধ্যমে। তার ভিত্তিতে আগামী দিনের কাজ আমরা নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করেছি।
সমীক্ষার ভিত্তিতে তথ্য, মানুষের বক্তব্য তুলে আনা হয়েছে গ্রাম, শহর থেকে। সেগুলিকে প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে ফের পার্টি কর্মীদের কিছু দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রধানত ৬টি পর্যায়ে পার্টি কর্মীদের কাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই ৬টি পর্যায়কে প্রয়াত ছয় পার্টি নেতার নামাঙ্কিত করা হয়েছে। এই পর্যায়ের মধ্যে এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করা, সেই সমস্যাগুলি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা, জনগোষ্ঠীর চরিত্র অনুসারে সেই সমস্যাগুলির ভিত্তিতে সেই এলাকার জন্য পার্টির ভাষ্য কী হবে, তা নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া নেওয়া হবে। বিবিধ বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অর্থাৎ পরিবেশ সংক্রান্ত সঙ্কট যেমন থাকবে, তেমনই স্থানীয় মানুষের বিভিন্ন পেশার সমস্যাও থাকবে। সেই অনুযায়ী ভাষ্য পার্টিকর্মীদের সরবরাহ করা হবে। আবার একটি পর্যায়ে আছে সময়ের নিরিখে উদ্ভূত স্থানীয় অথবা রাজ্য ভিত্তিক সঙ্কটের মুখে পার্টির ভাষ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য পার্টিকর্মীদের মানোন্নয়নে, সময়োপযোগী করে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগও থাকবে এই পর্যায়ে। এই কাজের জন্য বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে।
মহম্মদ সেলিম উপস্থাপনার সময় বলেন, আমরা ৬টি প্রোজেক্টের ভিত্তিতে এই কাজ করব। কারণ আমাদের লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই কাজ শেষ করা। সেই কাজের চেক আপ হবে। তাও সময়সীমা মেনেই হবে। একেকটি প্রোজেক্ট আর একটির সম্পর্কযুক্ত। ফলে কাজ করতে হবে সময়সীমার মধ্যে। আমাদের এলাকায় যে কোনও সমস্যায় মানুষের পাশে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যেতে হবে। ইতিবাচক হস্তক্ষেপ করতে হবে। মানুষ চান কে তাঁর পাশে আছেন। তাঁর সুরক্ষার প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই সময়ে। অতীত থেকেই আমাদের স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা, বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। সেগুলিই ভিত্তি। সমীক্ষার সময় মানুষ তা বলেছেন। বলেছেন, আমাদের সময়ে দুর্নীতি এমন ছিল না। আমাদের ভরসা করা যেত। এই ‘যেত’ কে ‘যায়’ করে তুলতে হবে। তার জন্য নতুন পথে নতুন দিশা দেখাতে হবে। বাংলার ভবিষ্যতের জন্য আমাদের মানুষের সময়ে আজকের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের দৃশ্যমানতা, বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাস্তব বিকল্প হাজির করতে হবে একদম তৃণমূল স্তরে। এই ক্ষেত্রে আমাদের সেই জায়গায় নির্দিষ্ট বিকল্প, নাছোড় আন্দোলন করতে হবে। কিছু সাফল্য অর্জন করতে হবে। যেমন শুধু বিভাজনের কথা বললে হবে না। রাজ্যে দাঙ্গা বেড়েছে তৃণমূল শাসনে। দাঙ্গার পরে শান্তি মিছিল করতে হবে। কিন্তু তার আগে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগেই এলাকায় ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে।
এই বিশেষ অধিবেশনে প্রতিনিধিরা পার্টির এই নবতম উদ্যোগ সম্পর্কে অনেকগুলি প্রশ্ন করেন। মহম্মদ সেলিম সেগুলির উত্তর দিয়েছেন।
Comments :0