REGA WAGE AREAR DEMONESTRATION

বকেয়া মজুরি প্রাপকের তালিকা প্রকাশের দাবিতে শুরু হচ্ছে বিক্ষোভ

রাজ্য

বুধবার সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে নিরাপদ সর্দার, তুষার ঘোষ ও অমিয় পাত্র।

‘সন্দেশখালির দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকার, পুলিশ প্রশাসনই বারেবারে এই শেখ শাহজাহানদের মত দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, আগলে রেখেছে’। স্পষ্ট অভিযোগ সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দারের।
মিথ্যা মামলায় মঙ্গলবার রাতে জেল থেকে মুক্ত হয়ে বুধবার দুপুরেই সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে নিরাপদ সর্দার বলেন, গত বিধানসভা ভোটেও মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে বলেছিলেন তাঁকে দেখেই ভোট দিতে, ২৯৪টা কেন্দ্রেই উনি নিজেই প্রার্থী। তাহলে সেই সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রেই জমি লুট থেকে নারী নিগ্রহ, তৃণমূলী সন্ত্রাসের দায়ও ওঁর ওপরেই বর্তায়। এখন অস্বীকার করলে হবে? বিধানসভায় ২০১৩-১৪ সালে যা বলেছিলাম তা তো সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তখন সরকার কর্ণপাত করেনি আমাদের অভিযোগে। এখন সন্দেশখালিতে জমি ফেরতের নাটকেই তো স্পষ্ট জমি দখল করা হয়েছিল। চাষের জমিতে লোনাজল ঢুকিয়ে ভেড়ি করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন, এখন সেই লোনাজলের জমি ফেরত দিয়ে কী হবে? ভোটের আগে এই প্রতারণা, লুট, অত্যাচারের জবাব শুধু সন্দেশখালিতে নয়, রাজ্যের যেখানে তৃণমূল এইভাবে শাসন চালিয়েছে, সেখানেই পাবে।
সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা ভেঙেই রাজ্যের দুই মন্ত্রীর যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খেতমজুর ইউনিয়ের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ এদিন বলেন, সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসু। ওঁর নিজের বিধানসভা এলাকাতেই ৭০০বিঘার বেশি জমি তৃণমূলীরা লুট করেছে। নারকেলতলা ভেড়ির ৬০০বিঘা জমি থেকে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর সেই মন্ত্রীই গেছেন সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর দখলের জমি ফেরত দিতে!
সন্দেশখালিতে বিঘার পর বিঘা শাহজাহান বাহিনীর দখলীকৃত জমি ফেরতের প্রক্রিয়া যেমন স্রেফ ভোটের কথা মাথায় রেখে তেমনই নিজেদের দলীয় বাহিনীর চুরি, লুট আড়াল করতে ভোটের মুখে একশো দিনের কাজ টাকা রাজ্য সরকারের দেওয়ার এমন তৎপরতাও ভোটবাক্সের কথা মাথায় রেখেই বলে অভিযোগ তুললো সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতা অমিয় পাত্র, তুষার ঘোষ এবং নিরাপদ সর্দার একযোগে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার আইন বিরুদ্ধ কাজ করেছে এভাবে কয়েক বছর ধরে গরিবের টাকা আটকে রেখে। তা করতে পারে না। তৃণমূলের চুরি আর কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতির খেলায় বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ গরিব, মানুষই। রাজ্য সরকার এখন ভোটের মুখে বলছে টাকা ফেরত দেবে। কিন্তু সেখানেও স্বচ্ছ্বতার অভাব রয়েছে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই ২১লক্ষ টাকা থেকে বকেয়া মজুরের সংখ্যা ৫৯লক্ষে পৌছে গেছে!
রাজ্য সরকার ১ মার্চ থেকে বকেয়া মজুরির টাকা নিজেরাই মিটিয়ে দেবে বলে ঘোষণা করেছে। সেখানেও রয়েছে সন্দেহ। কতজন প্রকৃত বকেয়া মজুরি পাবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তৃণমূলের তৈরি করে দেওয়া ভুয়ো জব কার্ড তালিকা ধরে টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে একাধিক জায়গায়। এই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যের সমস্ত ব্লক অফিসের সামনে অবস্থান, ডেপুটেশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। অন্যতম দাবি- পঞ্চায়েত ভিত্তিক বকেয়া মজুরির প্রাপকের তালিকা পঞ্চায়েত অফিসে বা ব্লক অফিসে প্রকাশ্যে টাঙানো হোক। মানুষ জানতে পারুক কারা প্রকৃত প্রাপক। যদি প্রকৃতদের নাম সেখানে না থাকে তাহলে তাঁরা আবেদন জানাক। ভুয়ো জব কার্ডের ভিত্তিতে টাকা বিলি করতে দেওয়া যাবেনা। 
অমিয় পাত্র বলেন- কেন্দ্রীয় আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এভাবে মজুরির টাকা আটকে রাখা যায়না। আইনে বলা আছে কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি দিতে হবে। নতুবা সেই প্রাপ্য বকেয়া মজূরির ওপর দুবছরের সুদ সহ টাকা মেটাতে হবে।  আইনী সুযোগ থাকলেও তৃণমূল সরকারে আদালতে গেলো না কেন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে? এখানেই ধরা পড়ে যাচ্ছে দুই দলই। নিজেদের বোঝাপড়ায় খেলায় মরছে গরিব মানুষরা।
সাংবাদিক বৈঠকে খেতমজুর আন্দোলনের নেতা তুষার ঘোষ বলেন - মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে জানালেল ২১ লক্ষ মজুরের বকেয়া দেওয়া হবে। এখন সংবাদপত্রে ঢাউস বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে সেটা বেড়ে হলো ৫৯ লক্ষ। কিসের ভিত্তিতে? ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের ৮২ লক্ষের বেশি জব কার্ড নিষ্ক্রিয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এছাড়াও ২০ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন তাঁদের বকেয়া মজুরির টাকা পরিবারের কোন উত্তরাধিকার পাবেন না বলে সরকার জানিয়েছে। তাহলে কোন অঙ্কে বেড়ে গেলে সংখ্যা? আদৌ প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডাররা টাকা পাবে নাকি তৃণমূলের ভুয়ো জব কার্ডের তালিকা অনুযায়ী ভোটের আগে একাংশের দুষ্কৃতীদেরর হাতে কাঁচা টাকা পৌছে দেওয়া হবে?
এই প্রসঙ্গেই এদিন সাংবাদিক বৈঠকে নিরাপদ সর্দার বলেন- গরিব মানুষ গতর বিক্রির টাকা পাচ্ছেনা দুই সরকারের রাজনীতির নোংরা খেলায়, এটা আমাদের কাছে যন্ত্রনার। এতদিন চুপ থেকে এখন মমতা ব্যানার্জি বলছেন তিনি টাকা দেবেন! কার টাকা এটা? কোথা থেকে পাচ্ছেন তা আমরা জানিনা। চুরির টাকা বাজেয়াপ্ত না করে, চোরদের বহাল তবিয়তে রেখে চুরির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রকৃত জবকার্ড হোল্ডার যারা তাঁরা টাকা পেলে আমাদের কিছু বলার নেই। গরিব মানুষ টাকা পাবেন। কিন্তু এটা ভোটের আগে পরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে।
সন্দেশখালি নিয়ে এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নিরাপদ সর্দার বলেন, অনুব্রত-শাহজাহানরা থাকবে আর গরিব মানুষের জমি লুট হবে না, অত্যাচার হবে না তা তো নয়। গোটা রাজ্যেই একাধিক প্রান্তে সন্দেশখালি তৈরি করেছে তৃণমূল। আজকের সন্দেশখালি প্রতিরোধের নতুন পথ দেখাচ্ছে। মা বোনেরা ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করছে তৃণমূলকে রোজ। 
শাহজাহান কী গ্রেপ্তার হবে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- শাহজাহানের গতিবিধির তো আমি প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলাম মিডিয়ার কাছে। পুলিশ সব জানে। পুলিশের পাহারায়, পুলিশের নিরাপদ আশ্রয়েই আছে ঐ দুষ্কৃতী। মুখ্যমন্ত্রী যেদিন চাইবেন সেদিনই গ্রেপ্তার হবে নতুবা হবে না।

Comments :0

Login to leave a comment