Argentina

সৌদি লড়াইয়ে ছত্রভঙ্গ মেসিরা

খেলা

কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনেই বড় ‘আপসেট’। সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেল আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। তবুও শেষরক্ষা হলো না। প্রথম ম্যাচে হেরে ৩২ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো লা অ্যালবেসেলেস্তেরা। ১৯৯০ বিশ্বকাপে শেষবার প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ২-১’এ হেরেছিল। টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত ছিল লিওনেল স্কালোনির দল। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম ম্যাচে হেরে ইতালির রেকর্ড ছোঁয়া হলো না আর্জেন্টিনার। উপরন্তু, পরের পর্বে যাওয়াটা কঠিন করে ফেলল আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে হার আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের মানসিকভাবে ধাক্কা দেবে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ বের করতে হবে কোচ লিওনেল স্কালোনি ও অধিনায়ক মেসিকে। মেক্সিকো ও পোল্যান্ডেকে প্রতিপক্ষ নিয়ে কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে হয়।  


পিছিয়ে পড়ার পর সৌদি প্রাচীর ভাঙতে কালঘাম ছুটে গেল দি মারিয়া, লাউটারো মার্টিনেজদের। বলা ভালো, আর্জেন্টিনা হার মানতে বাধ্য হলো সৌদি আরবের অদম্য লড়াইয়ের কাছে। গোল খাওয়ার পর সৌদি দলটা যেভাবে ম্যাচের শেষ অবধি একটানা আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের তাড়া করে গেলেন, এছাড়া ডিফেন্সে পায়ের জঙ্গল তৈরি করে স্পেস ব্লক করে দেওয়া, নিখুঁত ফাইনাল ট্যাকল করে বল ছিনিয়ে নেওয়া, অফসাইডদের ফাঁদে ফেলা সবটাই প্রশংসনীয়। 
প্রথমার্ধে মেসির গোল ছাড়া আরও তিনটি ‘গোল’ করেছিল আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের ফরাসি কোচ হার্ভে রেনার্ডের বিশেষ পরিকল্পনা ছিল, বিপক্ষের ফুটবলারদের অফসাইডের ফাঁদে ফেলা। তাঁর দলের ফুটবলাররাও মাঠে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রয়োগ করে দেখালো সেটা, যা এককথায় অনবদ্য। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম প্রতিবেদনেই লিখেছিলাম, কোচের মস্তিষ্কের খেলা দেখবো নাকি কোনও প্রতিভাধর ফুটবলার তাঁর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ম্যাচের রং বদলে দেবেন। আর্জেন্টিনার ম্যাচে আমরা দেখতে পেলাম রেনার্ডের মস্তিষ্কের খেলা। উনি বিভিন্ন কোচদের নতুন রাস্তা দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে অফসাইডের ট্রাপে ফেলতে হয় ফুটবলারদের। এবং এই অত্যাধুনিক অফসাইড প্রযুক্তি, কোচদের অনেক চিন্তা-ভাবনা বাড়িয়ে দিল।
এত বছর ধরে ফুটবল দেখছি, চোখের সামনে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখছি ১৯৯০ থেকে। বিশ্ব মঞ্চে কোনও ছোট দলের এমন লড়াই প্রথমবার দেখলাম। আমি রীতিমতো বিস্মিত! অসাধারণ একটা ম্যাচ দেখলাম আমরা। বড় মঞ্চে সৌদি আরব দলটা যে লড়াইটা করল বিশ্ব সারাজীবন মনে রাখবে। ওঁরা এশিয়ান ফুটবলকে গর্বিত করার পাশাপাশি বিশ্বের সমস্ত ছোট দলকে অনুপ্রেরণা রসদ জোগালো। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে শেষবার কোনও ছোট দলের এরকম লড়াই দেখেছিলাম। পর্তুগালের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার। ইউসেবিও’র জাদুতে সেই ম্যাচ জিতে যায় পর্তুগাল। 


ম্যাচে ফেরা যাক, আর্জেন্টিনা যেভাবে শুরু করেছিল মনে হয়েছিল মসৃণই হবে তাদের জয়। দি মারিয়ার সেন্টার দেখে মনে হয়েছিল, খুব সহজেই সৌদিকে উড়িয়ে দেবে আর্জেন্টিনা। হলো পুরো উলটো। যদিও নিজেদের ভুলে সৌদি আরবকে পেনাল্টির খেসারত দিতে হয়। সৌদির এক ডিফেন্ডার লিওনার্দো পারদেসকে ফেলে দেওয়ায় রেফারি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই পেনাল্টি দেন। ১০ মিনিটে স্পটকিক থেকে লিও মেসি গোলকিপারকে উলটো দিকে ফেলে দলকে এগিয়ে দেন। গোল খাওয়ার পর থেকেই সৌদি ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে রেখেছিল, যাতে আর গোল না খেতে হয়। তারপর মেসিরা যতবার আক্রমণ শানিয়ে সৌদি বক্সের পৌঁছে যাচ্ছিল ততবার আটকে যাচ্ছিলো হাসান আল্টামবাকতিদের কাছে। ভালো করে লক্ষ্য করলাম, আর্জেন্টিনার ডি পলরা কিন্তু দ্রুত রান করতে গিয়ে অফসাইডের ফাঁদে পড়েছে। সৌদির ফুটবলাররা আমাদের দেশের গৌতম সরকার ও মহম্মদ হাবিবদের মতো তাড়া করে আর্জেন্টিনাকে ছত্রভঙ্গ করে দিল। 


দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের একটা ছোট্ট স্পেলে আর্জেন্টিনাকে হারালো। ৪৮ মিনিটে সালেহ আলশেহেরির গোলে সমতায় ফেরে সৌদি। ৫৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের ভুলকে কাজে লাগিয়ে দুরন্ত শটে দলকে ২-১ এগিয়ে দেন ১০ নম্বর সালেম আল দাউসারি। ম্যাচের শেষ দিকে, আল আমিরি যে গোল লাইনটা সেভ করেছেন ,সেটা আমার দেখা সর্বকালের অন্যতম সেরা সেভ। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ফুটবলার সুধীর কর্মকার এরকম একটি সেভ করেছিলেন। মেসির প্রসঙ্গে বলি, পুরো ম্যাচে অসম্ভব চেষ্টা করে গিয়েছে। সৌদি জোনাল মার্কিং করে আটকে রেখেছিল। খেলতে দেয়নি। মেসি তাঁর নিজের জাদুতে উতরে দেবেন, শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত এমন বিশ্বাস ছিল সমর্থকদের। তা হয়নি। তবে মেসিকে ফিট মনে হয়েছে। আশা করছি, এই আর্জেন্টিনা হারের ধাক্কা কাটিয়ে ঠিক ঘুরে দাঁড়াবে।

Comments :0

Login to leave a comment