Balasore tarin accident

বালেশ্বরে তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা

জাতীয়

বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনার তদন্ত করতে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছালো সিবিআই এর একটি দল। ১০ জনের এই দল ঘটনা স্থলে গিয়ে ওড়িশা পুলিশের থেকে তদন্তের সমস্ত নথি নিজেদের কাছে জমা নেয়। সূত্রের খবর সিবিআই আধিকারিকরা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখবেন। সিগনালের কারণে এই দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোন কারণ রয়েছে তা তারা খতিয়ে দেখবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্র মারফত জানানো হয়েছে।
তবে শুক্রবারের এই দুর্ঘটনার দু’দিনের মাথায় হঠাৎ করে রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সিবিআই তদন্তের কথা কেন উল্লেখ করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন যে, এই দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ি তাদের নাকি চিহ্নিত করা গিয়েছে। কি কারণে এই দুর্ঘটনা তাও নাকি তারা জানতে পেরেছে। রেলমন্ত্রক যদি সত্যি সব জানতে পারে তবে কেন তারা সিবিআই তদন্তের কথা বললেন?


শুক্রবারের দুর্ঘটনার স্বাভাবিক তদন্ত করছিলেন রেল নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা। বালেশ্বরে স্বয়ং রেলমন্ত্রী রবিবার দুপুরে বলেছিলেন, এই দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি রিপোর্ট দিলেই বিশদে জানা যাবে। মূল কারণ ও কারা এর জন্য দায়ী তা চিহ্নিত করা গেছে। আমি বিশদে বলব না তবে এটুকু বলতে পারি কারণ জানা গেছে। রেলওয়ে বোর্ডের তরফ থেকে নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বিশদে দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানানো হয় কীভাবে তা ঘটল তা জানা গেছে। বোর্ডের অপারেশন ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সদস্য জয়া ভার্মা সিনহা ও প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সন্দীপ মাথুর সাংবাদিকদের বলেন, বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসই দুর্ঘটনায় পড়েছে, বাকি তার ফলাফল। করমণ্ডল সবুজ সিগনাল পেয়েই যাচ্ছিল। তার গতিও নির্ধারিত গতির থেকে বেশি ছিল না। মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। 
দুই বোর্ড সদস্য ইন্টারলকিং ব্যবস্থার বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সবুজ সিগনালের অর্থ রেলের চালক জানেন তাঁর সামনের পথ পরিষ্কার, তিনি তাঁর অনুমোদিত গতিতেই যেতে পারেন। এই সেকশনে অনুমোদিত গতি ঘণ্টায় ১৩০  কিলোমিটার, ট্রেন চলছিল ১২৮ কিলোমিটার গতিতে। লোকো লগ থেকে তা জানা গেছে। সিগনালিং সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয়েছিল। শুধু করমণ্ডলেরই দুর্ঘটনা ঘটেছে। 


করমণ্ডল মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। করমণ্ডলের কামরা মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়। মালগাড়িতে লৌহ আকরিক ছিল, তাই ট্রেন ভারী ছিল। তাই ধাক্কার সমস্ত প্রভাব করমণ্ডলেই পড়েছে। এই দুই বোর্ড সদস্যের কথায় ইঙ্গিত মেলে, করমণ্ডলের চালকের কোনও দোষ ছিল না। 
সন্দীপ মাথুর বলেন, ট্রেনকে যদি লুপ লাইনে যেতে হয় তাহলে পয়েন্ট মেশিন চালাতে হবে। সামনের ট্র্যাক ফাঁকা কি না, তা দেখতে হয়। সিগনাল এমনভাবেই ইন্টারলক করা থাকে যে বোঝা যাবে সামনের লাইন ফাঁকা না সেখানে কোনও ট্রেন আছে। এও জানা যাবে পয়েন্ট কি ট্রেনকে সোজা নিয়ে যাচ্ছে না লুপ লাইনে নিয়ে যাচ্ছে। যখন পয়েন্ট দেখায় সোজা এবং ফাঁকা লাইন তখন সবুজ সিগনাল হয়। যদি লুপ লাইনে নেয় এবং লাইন ফাঁকা থাকে তাহলে হলুদ সিগনাল হয়। এই ব্যবস্থা ‘ফেইল সেফ’। যদি তা কোনও কারণে ঠিকভাবে না-ও চলে তাহলে সব সিগনালই আপনা থেকে লাল হয়ে যাবে এবং সব ট্রেনই থেমে যাবে। 


জয়া ভার্মা সিনহা এর পরেই একটি ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন। সিগনাল ব্যবস্থার কোনও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। এটি যান্ত্রিক ভুল নয়, তা হতে পারে। মনে করুন কেউ কোনও খোঁড়াখুঁড়ি করল অথচ কেবল কোথায় আছে তা না দেখেই করল। 
সিনহা অবশ্য এই সঙ্গেই দাবি করেন, কেউ কেউ বলছেন বন্দে ভারতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে রেল নিরাপত্তার প্রশ্ন অবহেলা করছে। এটি ঠিক নয়। রেলের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিরাপত্তাই। 
সোমবার সিপিআই(এম)’র টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। সেখানে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, সিবিআই তদন্ত সাধারণত হয় ক্রিমিনাল কেসে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠছে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে। যাত্রী সুরক্ষার বিষয়ে কি কি খামতি রয়েছে, কি কি দুর্বলতা রয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখার কথা রেল বোর্ডের। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা, সেদিক থেকে নজর ঘোরাতেই সিবিআই তদন্তের কথা বলা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment