শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের পরিণতি যেন অতীতের সারদা কাণ্ডের মতো না হয়। নিয়োগ দুর্নীতির মামলার শুনানি চলাকালীন এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
সিবিআই’র আইনজীবীকে এবিষয়ে সতর্ক করেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তিনি চান না আরেকটা সারদার মতো পরিণতি হোক।
২০১৪ সালে এপ্রিল মাসে সারদা-রোজভ্যালি সহ ৪৫টি চিট ফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। চারটি আলদা মামলা করে এরাজ্যে তদন্তও শুরু হয়। যদিও গত নয় বছরে সিবিআই একাধিক অতিরিক্ত চার্জশিট দায়ের করলেও এখনও চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করতে পারেনি। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর সহযোগী দেবযানী মুখোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউই জেল হেপাজতে নেই। লক্ষ লক্ষ প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টরাও কেউ টাকা ফেরত পাননি। সারদার কাণ্ডের এই পরিণতির কথা মাথায় রেখেই বিচারপতি শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত বুধবারই সিবিআই প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির মূল মামলার তদন্তে ৫৪ পাতার রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে জমা দিয়েছে। আদালত এদিন জানিয়েছে এ রিপোর্টে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সকলের সামনে আনা সম্ভব নয়।
বিচারপতি কাছেই জমা দেওয়া প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির এই বিস্তারিত চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দেখার পরে এদিন শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘সিবিআই রিপোর্টে এমন কিছু আছে যা এই মুহূর্তে সবার সামনে আনা সম্ভব নয়! সবটাই নাকের নিচে হয়েছে। রাজ্যের মানুষ এতটাই ফুল (বোকা) নয় যে তা বুঝতে পারবেন না।’
এরপরেই বিচারপতি সিবিআইয়ের সিট’র প্রধান অশ্বিন শেনভিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বেশ কিছু না নেই দেখা যাচ্ছে। আপনাদের সঙ্গে কি ইডি’র সমন্বয়ের অভাব রয়েছে? ইডি’র সঙ্গে কথা বলেন তৈরি করুন চূড়ান্ত রিপোর্ট।’
এরপরেই সিবিআই’র তরফে আদালতে জানানো হয়, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় প্রথম চার্জশিট দায়ের হয়েছে। দ্বিতীয় চার্জশিটও খুব দ্রুত জমা দেওয় হবে। তারপরেই বিচারপতি ফের বলেন ইডি’র সঙ্গে কথা বলুন তা প্রস্তুত করার আগেই। তারাও বিস্তারিত তদন্ত করেছে। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পেতে পারেন।’ দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, তা অন্তত স্পষ্ট হয়েছে এদিন বিচারপতির পর্যবেক্ষণে। সিট’র প্রধানকে ইডি’র সঙ্গে তদন্তের বিষয়ে কথা বলারও পরামর্শ দেন। আগামী ২১ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আলিপুর আদালতে সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে চার্জশিট পেশ করে। তাতে অভিযুক্তের তালিকায় ১৬ জনের নাম ছিল। তালিকার ছয় নম্বরে ছিল পার্থ চ্যাটার্জির নাম।
প্রথম পাঁচজনের বিরুদ্ধে সিবিআই আগেই এফআইআর রুজু করেছিল। তাঁরা হলেন; শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল্যাণময় গাঙ্গুলি, সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা এবং সমরজিৎ আচার্য। এছাড়াও সুকান্ত মল্লিক, দীপঙ্কর ঘোষ, সুব্রত খাঁ, অক্ষয় মণি, সমরেশ মণ্ডল, ইদ্রিস আলি মোল্লা, অভিজিৎ দলাই, অজিত বর, ফরিদ হোসেন লস্কর সহ ১৬ জনের নাম রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে ৫৪ পাতার তদন্ত রিপোর্টে সিবিআই এমন কী উল্লেখ করেছে, কোন প্রভাবশালীদের নাম এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এমন মন্তব্য করলো? ইডি’র সঙ্গে সমন্বয় রেখেই সিবিআই-কে দ্বিতীয় চার্জশিট তৈরির করার কথা বলছে আদালত।
Comments :0