Election Commission

কড়া বন্দোবস্তের আশ্বাস কমিশনের, শঙ্কা ফস্কা গেরোয়

রাজ্য

election commission congress cpim bjp bengali news সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। কলকাতায় অচ্যুৎ রায়ের তোলা ছবি।

বজ্র আঁটুনি তৈরির কথা দিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সেই আঁটুনি কেটে বেরিয়ে অবাধ দুষ্কৃতি দৌরাত্মের সাক্ষী থাকবে না তো পশ্চিমবঙ্গ? সেই আশঙ্কা থেকেই যায়। 

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। রবিবার বেঞ্চের সদস্যরা রাজ্যে আসেন। সোমবার কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যস্তরের দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং রাজ্য প্রশাসনের বড় অংশের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে একপ্রস্থ বৈঠক হয় সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে। সাড়ে ন’টার সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তাঁরা। 

সোমবার সিপিআই(এম) সহ রাজনৈতিক দলগুলির তরফে নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখা হয় কমিশনের কাছে। এদিন কমিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে সেই প্রস্তাবগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। 

সোমবার সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধিদলের তরফে ১২দফা দাবি তুলে ধরা হয় কমিশনের কাছে। সিপিআই(এম)’র তরফে শমীক লাহিড়ী, কল্লোল মজুমদার এবং পলাশ দাস বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করলেও, জেলাশাসক কিংবা পুলিশ সুপাররা সেটা করার প্রয়োজন বোধ করেন না। এই প্রসঙ্গে কমিশন বলেছে, রাজ্য প্রশাসনকে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই বৈঠকে সিইও, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরাও থাকবেন। 

কমিশন জানিয়েছে, এবার থেকে সর্বদলীয় বৈঠকে তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা লিখিত আকারে জানানো হবে। 

যদিও ভোটার লিস্টকে মৃত, ভুয়ো ও স্থানান্তরিত ভোটার মুক্ত করার দায় রাজনৈতিক দলগুলির উপরে চাপিয়েছে কমিশন। কমিশনের বক্তব্য, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ভোটার লিস্ট ত্রুটিমুক্ত করার কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন স্তরে হওয়া গোটা প্রক্রিয়া কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ছিল। অধিকাংশ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। তারপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে। 

কমিশনের কথায়, ‘‘গোটা প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছতা মেনে করা হয়েছে। সবাই দেখতে পেয়েছে তালিকায় কোন কোন নাম রয়েছে। সেই সংক্রান্ত অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও সুনির্দিষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে।’’

সোমবার সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, ভোটার তালিকায় কয়েক লক্ষ ভুয়ো নাম রয়েছে এখনও। সেগুলিকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কমিশনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ২০২৪’র নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির আমূল বদল সম্ভব নয়। 

সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ বিরোধীদের দাবি ছিল,২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল রাজ্য প্রশাসনের বড় অংশ। তাঁদের হাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছাড়লে অবাধ নির্বাচন সংগঠিত করা সম্ভব নয়। 

কমিশন যদিও এদিন জানিয়েছে, জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁদের। ভোট করানোর মূল দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের। প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন জানিয়েছে,‘‘আমরা রাজ্য প্রশাসনের ঘোষণাকে বিশ্বাস করছি। কিন্তু তাঁরা যদি কর্তব্যে গাফিলতি দেখান তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের।’’

কমিশন এদিন জানিয়েছে, জেলায় জেলায় কোথায় কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হচ্ছে তা রাজনৈতিক দলগুলিকে জানানো হবে। একইসঙ্গে ছাপ্পা দিতে এসে কেউ ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী, কিংবা চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা যাতে নির্বাচনী কাজে যুক্ত না থাকেন, তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। 

কমিশন জানিয়েছে, সুবিধা পোর্টালের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারের অনুমতি পাওয়া যাবে। কোনও ময়দান কিংবা অন্য কোথাও সভা করার জন্য এই পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। যে দল প্রথমে আবেদন জানাবে, তাদের অনুমতি দেওয়া হবে। কোনও পক্ষপাতিত্ব দেখানো হবেনা। কোথায় দুষ্কৃতিমূলক কাজ হলে সি-ভিজিল অ্যাপের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ জানানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের জিও লোকেশন ট্র্যাক করে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যাবে। এক্ষেত্রে নাম গোপন রেখেও অভিযোগ জানানো যাবে। 

যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ১০০ মিনিট শুনতে কম সময় লাগলেও আসলে সেটা দেড় ঘন্টারও বেশি সময়। বোমা বাঁধা, বোমা ছোঁড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য অসামাজিক কাজের জন্য দেড় ঘন্টা যথেষ্ট। তাই ঘটনার দেড় ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে কতটা সুবিধা করে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় বাহিনী, সেই প্রশ্ন থাকছেই। একইসঙ্গে আশঙ্কা থাকছে, স্থানীয় থানাও কোনও ঘটনার ‘রেসপন্স টাইম’ বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় হিসেবে দেড় ঘন্টাকে কাট-অফ সময় ধরে নিতে পারে। 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment