Editorial on Sangh parivar

সঙ্ঘ পরিবারের গেস্টাপো বাহিনী

সম্পাদকীয় বিভাগ


কর্ণাটকে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে বলা হয়েছে, ঘৃণা প্রচারকারী সংগঠনগুলিকে প্রয়োজনে নিষিদ্ধ করা হবে। এর মধ্যে বজরঙ দল এবং পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার উল্লেখ রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী গত দু’দিন ধরে ‘বজরঙবলী’ আওয়াজ তুলে চলেছেন। নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, কংগ্রেস আগে রামকে তালাবন্দি রেখেছিল ( বাবরি মসজিদের দিকে ইঙ্গিত), এখন হনুমানভক্তদের তালাবন্দি করতে চাইছে। কর্ণাটকের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত জনমত সমীক্ষার কোনোটিতেই বিজেপি-কে এগিয়ে রাখা হয়নি। মেরুকরণও যে এই বিধানসভার ভোটে বড় বিষয় নয়, তা এইসব সমীক্ষায় দেখা গেছে। নিশ্চয়ই চোরাস্রোত আছে, কিন্তু যেভাবে বিজেপি হিসেব কষেছিল সে-ভাবে নেই। জীবনজীবিকা, দুর্নীতির প্রশ্নই বড় হয়ে সামনে আসছে। এই অবস্থায় কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারে বজরঙ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কথাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে শেষ সাতদিন কাটাতে চাইছে বিজেপি। 
কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারে এই প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস মেরুকরণের অকারণ সুযোগ করে দিল কিনা, তা ভবিষ্যতই বলবে। এটি কংগ্রেসের পক্ষে কৌশলগত পদক্ষেপের ভুল হলো কিনা, তা-ও দেখা যাবে। তাছাড়া, কোনো সংগঠনকেই ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে দিলেই তার কার্যকলাপ রোধ করা যায় না। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে ১৯৯৩-তে বজরঙ দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারেরই ঘোষণায়। এক বছর পরে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয়। 
কিন্তু বজরঙ দল তার কার্যকলাপে এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে বিপদ, কোনো সন্দেহ নেই। বজরঙ দল আসলে সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ‘যুব শাখা’। ১৯৮৪ সালে তৈরি হয়েছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। সেই লক্ষ্য হলো রামমন্দির নির্মাণের অভিযানকে তীব্র করা এবং তাকে আরো হিংসাত্মক, আগ্রাসী চেহারা দেওয়া। হিংসাই বজরঙ দলের মূল কর্মপদ্ধতি। গত তিন দশকের বেশি সময়ে দেশে অসংখ্য দাঙ্গার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে এই সংগঠন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে আক্রমণ চালিয়েছে। নিজেরাই নাম বদলে বদলে সংগঠন তৈরি করেছে যারা গোরক্ষার নামে বা এই জাতীয় বিতর্ক তৈরি করে গণ্ডগোল বাধাবে। সনাতন সংস্থা বা শ্রীরাম সেনার মতো সংগঠনে বজরঙ দলের কর্মীরা যুক্ত। সনাতন সংস্থার বিরুদ্ধে গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বজরঙ দলের অনেক নেতাই ঘোষিত অপরাধী। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী যখন তাদের হয়ে খোলা সওয়ালে নেমে পড়েছেন তখনই কর্ণাটকের কোদাভু জেলায় বজরঙ দলের প্রশিক্ষণ শিবিরের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ করছে। এবং, গর্বের সঙ্গে সেই ছবি প্রকাশও করেছে। কর্ণাটকে হিজাব, হালাল নিয়ে এই সংগঠন সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরি করেছে। রাজ্যের বিজেপি সরকারের মদতে গুণ্ডামি করেছে। বজরঙ দলের সদস্যরা সংখ্যালঘুদের রাস্তায় হেনস্তা করছে এই দৃশ্য নিয়মিত। এরা গুজরাটে ২০০২-এর গণহত্যায় যুক্ত ছিল। এদের সামনের সারির নেতারা সেই গণহত্যার নৃশংসতম ঘটনাগুলিতে অপরাধী ছিল। মোদী সরকার এবং গুজরাট রাজ্য সরকারের কৃপায় এদের অনেকেই আজ জেলের বাইরে। সভ্য সমাজে যাদের জেলেই থাকার কথা। তথাকথিত লাভ জিহাদের অজুহাত তুলে একদিকে বিষাক্ত প্রচার চালানো, অন্যদিকে শারীরিক আক্রমণ করাও এদের নিয়মিত কাজ। খ্রিস্টানদের ওপরে দেশের নানা প্রান্তে এরা আক্রমণ চালাচ্ছে। এক কথায়, বজরঙ দল ধর্মের মুখোশ পরা একটি হিংসাত্মক সংগঠন। সঙ্ঘ পরিবারের গেস্টাপো বাহিনী।

Comments :0

Login to leave a comment