EDITORIAL

বাঃ মোদী বাঃ

সম্পাদকীয় বিভাগ

GANASHAKTI EDITORIAL

উত্তরকাশীর সিলকিয়ারায় আধ্যাত্মিক ভ্রমণের চারধাম প্রকল্পের নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে ১৪ দিন ধরে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিকের জীবিত অবস্থায় বের করে আনার এপর্যন্ত গৃহীত যাবতীয় প্রয়াস ব্যর্থ হবার পর উদ্ধারকারীরা যখন পরবর্তী বিকল্প হাতড়ে বেড়াচ্ছে আর সুড়ঙ্গের গভীরে গাঢ় অন্ধকারে আটকে থাকা শ্রমিকদের বাইরে বেরনোর আশা যখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে তখন এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রধান হোতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমানে চেপে আকাশ পথে প্রমোদ ভ্রমণে মেতে উঠেছেন। 

তাঁর সেই মহান কীর্তি ভারতের সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে। আর সেটা দেখে আরএসএস-বিজেপি’র কর্তাব্যক্তিরা এবং মোদীভক্তরা মহানন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছেন। যুদ্ধ বিমানের পাইলটের পোশাক পরে পাইলটের হেলমেট হাতে নিয়ে তিনি বিমানে চাপলেন। হাত নাড়তে নাড়তে বিমান ভ্রমণ করলেন। মুহুর্মুহু ছবি উঠলো। মোদীর এহেন কীর্তি স্থাপনের জন্য এই বিশেষ ইভেন্টের আ‍‌য়োজন করতে বাধ্য হয়েছে বিমানবাহিনী।


মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশ গড়ের দলীয় নির্বাচনী প্রচার শেষ হবার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য উত্তরকাশীতে যাবার কথা ভাবেননি। কিন্তু ভীষণভাবে ভেবেছেন এবং অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছেন গুজরাটে নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালে হাজির থেকে ভারত জিতলে পুরো কৃতিত্বটাই নিজের দিকে কেড়ে নেবার। সেটাই রাজস্থানের নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগাবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। 

কিন্তু তার সে আশা পূর্ণ হয়নি। খেলা সেরে ছুটলেন রাজস্থানে ভোট প্রচারে। ৪১ জন শ্রমিকের কাছে যাবার তাঁর সময় কোথায়? প্রচার শেষেও উত্তরকাশী যাবার কথা তিনি ভাবেননি। মাথায় তাঁর যেভাবেই হোক ভোটে জেতা। তাই রাজস্থানে ভোট গ্রহণ শুরু হতে না হতেই যাবতীয় সংবাদ মাধ্যম ও সমাজ মাধ্যমে ভেসে ওঠে যুদ্ধ বিমানে পাইলট সাজে মোদীর ছবি। ভোটারদের মনে মোদী কেন্দ্রিক সময় শক্তি নির্ভর জাতীয়তাবাদী আবহ সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত ভেবেচিন্তে আ‍য়োজন হয় এই ইভেন্টের।


এরপরও তাঁর মনে হয়নি একবার উত্তরকাশী ঘুরে আসা দরকার। তিনি বেঙ্গালুরু থেকে পাড়ি দিলেন তেলেঙ্গানায়। সেখানেও ভোট প্রচারে বিজেপি’র তিনিই একমাত্র মুখ। তাঁর ভাবনার বাইরে পড়ে রইলো উত্তরকাশী-এমনকি মণিপুরও।


এর আগে সব প্রধানমন্ত্রীই রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে দেশ-বিদেশ যেতেন। সেই বিমান মোদীর নাপছন্দ। এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করে দিয়ে দেশের প্রধান সেবক ফকির মোদী নিজে চড়ার জন্য অঢেল মূল্যে নতুন বিমান কিনলেন। ফকিরের বিলাসিতার বহর এতটাই উচ্চ যে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকার রাষ্ট্রপতি যে বিমানে চাপেন তার থেকে কম বিলাসী বিমানে তাঁর মন ভরে না। 

ভাবা যায় যে দেশে বিশ্বের সর্বাধিক হত দরিদ্র মানুষের বাস সে দেশের প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে ধনী দে‍‌শের রাষ্ট্রপতির মতো বিলাস বহুল বিমানে ঘুরে বেড়ান। তা তিনি যত দামি ও বিলাসি বিমানে চডুন, দিনে ১৪ বার পোশাক বদল করুন, ভোগের চরম পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যান সেটা তার নিজের রুচি। তবে ভাবতে হবে এই উচ্চ বিলাসের খরচ জোগাতে হয় দেশের জনগণকে। এটাও ভোট আসবে যাবে, কেউ হারবে কেউ জিতবে। কিন্তু ৪১ শ্রমিকের জীবন গেলে আর ফিরবে না।

Comments :0

Login to leave a comment