GLOBAL FARMERS MOVEMENT

কৃষক সংগ্রামের সরণিতে মিলে যাচ্ছে দিল্লি থেকে ব্রাসেলস

জাতীয় আন্তর্জাতিক

FARMERS PROTEST BRUSSELS INDIA WTO WORLD BANK BENGALI NEWS

বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরে সোমবার বৈঠকে বসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষিমন্ত্রীরা। সেই বৈঠক চলাকালীন ব্রাসেলস শহর জুড়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখালেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কৃষকরা। কৃষকরা ট্র্যাক্টর দিয়ে একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান শহরের ইউরোপীয় কোয়ার্টারের দিকে। এখানেই বৈঠক চলছিল কৃষিমন্ত্রীদের। রাস্তায় টায়ার জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন ইউরোপের কৃষকরা। জ্বালিয়ে দেন খড়ের স্তূপ। 

ব্রাসেলসের বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ মূলত ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গনাইজেশন বা ডব্লিউটিও’র নয়া উদারবাদী কৃষিনীতির বিরুদ্ধে। আবুধাবিতে ফের বৈঠক ডব্লিউটিও’র।  আলোচ্য নীতির মূলে রয়েছে কর্পোরেট এবং বিশাল আয়তনের বহুজাতিক কৃষিব্যবসার স্বার্থ। সেই নীতিতেই সঙ্কটের মুখে কৃষকরা। মিলছে না দাম। বাড়ছে খরচ। ঋণগ্রস্ততা বাড়ছে লাফিয়ে। খোলা আমদানি নীতির নামে কোণঠাসা হচ্ছেন ক্ষুদ্র, প্রান্তিক এমনকি বড় কৃষকও।

সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর আবু ধাবিতে ডাব্লুউটিও’র বৈঠক রয়েছে। ইউরোপের পাশাপাশি এদিন ভারতের কৃষকরাও ডব্লিউটিও’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। নয়ডা থেকে দিল্লির দিকে ট্র্যাক্টর মিছিলের ডাক দেয় ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন। কালাদিবস পালনের ডাক দেয় সারাভারত কৃষকসভা সহ সংযুক্ত কিষান মোর্চা।

আন্দোলনের সরণীতে মিলে যাচ্ছে ব্রাসেলস থেকে দিল্লি। 

কৃষক আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, সারা বিশ্বজুড়ে কৃষিক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এবং এর মূলে রয়েছে ডব্লিউটিও, বিশ্বব্যাঙ্কের মত সংস্থাগুলির প্রস্তাবিত নয়া উদারবাদী কৃষি নীতি। 

ইউরোপীয় ক্ষুদ্র কৃষকদের সংগঠন ইউরোপিয়ান কো-অর্ডিনেশন ভায়া ক্যাম্পেসিনা বা ইসিভিসি’র নেতৃত্ব মর্গান ওডি এবং ভিনসেন্ট ডেলোবেল ‘আল জাজিরা’ পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘নয়া উদারবাদী নীতির ফলে কৃষককে বৃহৎ খাদ্য কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে অসম প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। একদিকে কৃষিখাতে খরচ বাড়ছে। কিন্তু খোলা বাজারে প্রতিযোগিতার নামে মিলছে না ফসলের ন্যূনতম দাম। অভাবী বিক্রির ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে ইউরোপীয় কৃষকদের।’’ 

ইসিভিসি নেতৃত্বের বক্তব্য, বিশ্ব উষ্ণায়ন রোখার নামে কৃষিক্ষেত্রে একাধিক কঠিন বিধি নিষেধ লাগু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু তার বোঝা বইতে হচ্ছে কেবলমাত্র ক্ষুদ্র কৃষককে। বৃহৎ সংস্থাগুলি সেই আইন না মানলেও তাঁদের আইনের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। তারফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছেন ক্ষুদ্র কৃষকরা। 

মর্গান ওডি এবং ভিনসেন্ট ডেলোবেল বলছেন, ‘‘৮০’র দশক থেকে কৃষিক্ষেত্রে সহায়তা কমিয়েছে একের পর এক সরকার। সবটাই হয়েছে ডব্লিউটিও কিংবা বিশ্ব ব্যাঙ্কের সুপারিশে। বর্তমানে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মত লাতিন আমেরিকার দেশগুলি থেকে সস্তায় মাংস আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। একইসঙ্গে ইউক্রেন থেকে সস্তায় চিনি, ভুট্টা, গম এবং মুরগী আমদানিতেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সর্বস্বান্ত হবেন ক্ষুদ্র কৃষকরা।’’

ইউরোপীয় কৃষি সংগঠকদের অভিযোগ, তাঁরা পরিবেশ বিধির বিপক্ষে নন। কিন্তু ইউরোপে তাঁদের যেই নিয়মগুলি মানতে হয়, বৃহৎ খাদ্য কর্পোরেট সংস্থাগুলি সেই নিয়মগুলিকে অগ্রাহ্য কিংবা লঙ্ঘন করে বাজারে সস্তা পণ্য ঢোকাচ্ছে। এরফলে ভবিষ্যতে ইউরোপের খাদ্য সুরক্ষা ধ্বংস হতে চলেছে।

ইউরোপের কৃষকদের দাবি, সমস্ত কৃষিপণ্যের ন্যূনতম আয়ের সুনিশ্চয়তা দিতে হবে আইন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিক একই দাবিতে ভারতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। এদিন বহু জায়গায় ডব্লিউটিও’র কুশপুতুল দাহ করেছেন কৃষকসভার কর্মীরা। ভারতীয় কৃষকদের স্পষ্ট দাবি, কৃষিপণ্যের ন্যূনতম দাব বা এমএসপি’র আইনি নিশ্চয়তা প্রয়োজন। একইসঙ্গে কৃষি ঋণ মুকুব সহ একাধিক দাবি তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে তুলে ধরেছেন। কেন্দ্র যদিও অনমনীয় মনোভাব নিয়ে চলছে। তার পালটা বিক্ষোভের পথ থেকে সরে আসতে নারাজ কৃষকরা। 

ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের মাধ্যমে দেশের কৃষিক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজিকে ঢোকার রাস্তা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। সবটাই হয়েছে ডব্লিউটিও এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের ছক মেনে। আন্দোলনের চাপে সেটা আটকানো গেলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। কৃষিক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটলে কি হতে পারে, ইউরোপীয় ক্ষুদ্র কৃষকদের অভিজ্ঞতা থেকেই তা স্পষ্ট। তাই নাছোড়বান্দা হয়ে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি’র আইনি বৈধতার দাবিতে পথে রয়েছেন ভারতীয় কৃষকরা। 

Comments :0

Login to leave a comment