এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার বামফ্রন্টের গণ কনভেনশনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে লুট করা যায় না। মানুষের ঐক্য ভাঙতে আক্রমণ চলছে। আবাসন থেকে শুরু করে গ্রাম, কেউ সুরক্ষিত নয়। নিউটাউনের আবাসনে ঢুকে পুলিশ চাপ দিচ্ছে জুবি,শাওনের মত মিড ডে মিলের আন্দোলনকারীদের ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করার জন্য।’’
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে নাগাদ। আইএসএফ সমর্থক ও নাগরিক আন্দোলনের কর্মী নাতাশা খান একটি ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তিনি ওয়ারেন্টে তাঁর নিউটাউনের ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টা করছে সাদা পোষাকে পুলিশ। ফ্ল্যাটে ঢোকার জন্য প্রথমে পুলিশের তরফে বলা হয় তাঁরা সমীক্ষা করতে এসেছেন। কিন্তু কিসের সমীক্ষা সেই উত্তর দিতে না পারায় ক্রমে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে পুলিশকর্মীরা।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় ফেসবুক লাইভ করেন নাতাশা খান। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ হুমকি দিয়ে বলেছে আমার বাড়িতে বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদীরা লুকিয়ে রয়েছে।’’
আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের তরফে তাঁদের উপর চাপ দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা নাতাশাকে বাধ্য করেন জুবি সাহাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আবাসিকরা জানান, তাঁরা এরকম কোনও কাজ করবেন না। পুলিশের গ্রেপ্তার করার হলে তারা আইনি কাগজ নিয়ে আসুক।
এরপর আবাসনের সমস্ত গেটে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। আবাসনের বাসিন্দাদেরও বাইরে বেরোতে বাধা দেওয়া হয়। নাতাশা খানের ফ্ল্যাটের সামনে, সিড়ির ল্যান্ডিংয়ে সাদা পোষাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নাতাশা খানের ২ আত্মীয়কেও বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ঘটনার খবর পেয়ে ওই আবাসনে হাজির হন উত্তর ২৪ পরগণা জেলা ডিওয়াইএফআই’র সম্পাদক সপ্তর্ষি দেব সহ বামপন্থী কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গেও অসহযোগিতা করে পুলিশ।
পরবর্তীকালে শুক্রবার ভোরবেলা আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢোকে পুলিশ, এবং জুবি সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আইএসএফ’র তরফে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়। আইএসএফ বলেছে, ‘‘শাহজাহান শেখের মতন অপরাধীদের দিনের পর দিন আড়াল করে রেখেছিল, সেখানে পুলিশের এমন অতি সক্রিয়তা কেন? গণ আন্দোলনের কর্মীদের জেলে ঢুকিয়ে তারা ভাবছেন শাসকদলের সেবা করছেন। তারা সরকারী উর্দি পরে আছেন, সেটা ভুলে যাচ্ছেন।’’
নিউটাউন থেকে জুবি সাহাকে গাড়ি করে বসিরহাটে নিয়ে আসা হয়। বসিরহাট আদালতে পেশ করার সময় তাঁর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান আইএসএফ কর্মী সমর্থকরা। আদালত সূত্রে খবর, দলবদ্ধ ধর্ষণ, জমি লুটের অভিযোগে জেলবন্দি তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার অভিযোগের ভিত্তিতে জুবি সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রসঙ্গত, একই অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জামিন পাওয়ার পরে জুবি সাহাকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত মিছিল করেন আইএসএফ কর্মী সমর্থকরা। জুবি সাহাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়।
Comments :0