শুভঙ্কর দাস
এই মুহূর্তে বঙ্গ ফুটবলে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে খেপের মাঠ। ক্যানিংয়ে খেপের ম্যাচ খেলতে গিয়েই গুরুতর চোট পেয়েছেন মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলার অভিষেক হালদার। তবে তিনি ছাড়াও অভিযোগের তীর রয়েছে আরও দুই ফুটবলারের দিকে। এই তিনজন ফুটবলারকে সাসপেন্ড করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্লাব কর্তারা।
কিন্তু এই খেপের মাঠে ফুটবলারদের নিরাপত্তা কোথায়? ক্লাবের হয়ে সই করেও কেন তাঁরা যাচ্ছেন খেপের মাঠে? এই ঘটনা সামনে আসার পরেই উঠছে এই প্রশ্ন।
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন ফুটবলার এবং কোচ সায়ন্তন দাস রায় জানাচ্ছেন, ‘‘অভাব এবং স্বভাব। অভাব মেটাতে গিয়ে বহু ফুটবলার এখন এটিকে স্বভাবে পরিণত করে ফেলছে। অভিষেক হালদার দীর্ঘদিন ধরে মহামেডানে আছে। তার আগে আইএসএল-এর দলে ছিল। ফলে, ওর যাওয়া উচিৎ হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘একজন ফুটবলারকে এটা বুঝতে হবে যে, অভাবের জন্য প্রাথমিকভাবে খেপ খেলতে গিয়ে সেটা যেন স্বভাবে পরিণত না হয়ে যায়। কারণ, খেপ ভবিষ্যৎ নয়। লক্ষ্য আরও বড় হওয়া উচিৎ। সাময়িক লোভের জন্য সেটিকে স্বভাবে পরিণত করলে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর।’’
ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, খেপের মাঠে প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার থাকলেও তাঁরা কলকাতার মাঠে আসার সুযোগ পাননা। তাই তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। নাহলে এই প্রতিভাগুলো একসময় হারিয়ে যাবে।
তাঁদের বক্তব্য, এক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার পরিসর রয়েছে রাজ্যের ক্রীড়াদপ্তরের।
কিন্তু এই ‘কাহানী’ তে রয়েছে ‘টুইস্ট’ও। ভারতের তৃণমূলস্তরের ফুটবলে বিদেশিদের খেলানো নিষিদ্ধ। তবুও খেপের খেলার মূল আকর্ষণ নাইজেরিয়া কিংবা লাইবেরিয়া থেকে আসা কোনও চার্লস কিংবা কিংসলে। রাজ্যের বিধায়কদের উদ্যোগে হওয়া এমএলএ কাপেও খেলতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, নিষিদ্ধ হলে তাঁরা মাঠে নামার ছাড়পত্র পাচ্ছেন কিভাবে?
সায়ন্তন দাস রায়ের কথায়, ‘‘খেপের মাঠে বিদেশিদের প্রবেশ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। একটা টুর্নামেন্টে নাইজেরিয়ানরা দিনের পর দিন খেলে যাচ্ছে। এইরকম চলতে থাকলে আগামীদিনে বাঙালি ফুটবলারদের আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। রাত ১২টা, ১টা, ২টোয় সারা বিশ্বের কোথাও ফুটবল হয়? আসলে সেটা ফুটবল নয়, বিনোদন।’’
প্রাক্তন ফুটবলারদের কথায়, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উগ্রতা বাড়ে খেপের মাঠের সমর্থকদের। সেই মেজাজ ছড়িয়ে পড়ে মাঠে। তারফলেই শিনবোনের হাড় ৩টুকরো হয় কোনও অভিষেক হালদারের।
এই অংশের বক্তব্য, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খেপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশি ফুটবলাররা। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলে অনেক প্রভাবশালীকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
সায়ন্তন দাস রায় বলছেন, ‘‘সঠিক সার্ভে হলে, এইসব বিদেশি খেলোয়াড়দের কোমরে দড়ি পড়বে। অধিকাংশ বিদেশি বেআইনিভাবে খেলছে, কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। স্টুডেন্ট ভিসায় এদেশে এসে বেআইনি ভাবে ফুটবল খেলে টাকা রোজগার করছে একটা চক্র। এর ফলে রাজ্যের ফুটবল রসাতলে যাচ্ছে। নতুন ছেলে উঠে আসছে না। টুর্নামেন্ট কমিটির মুনাফা হচ্ছে কিন্তু ফুটবলের কোনও উন্নতি নেই।’’
এই প্রসঙ্গে আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত জানান, ‘‘সারা রাজ্যে প্রচুর খেপ ফুটবলের ম্যাচ হয়। আইএফএ-র পক্ষে এত নজরদারি সম্ভব নয়। তবে অনেকক্ষেত্রেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আসলে খেপের মাঠে প্রচুর টাকা ওড়ে। তাই ফুটবলাররা প্রলোভনে পা দিয়ে দিচ্ছে।’’
আইএফএ’র দাবি, প্রশাসন যদি কোনও নিয়ম তৈরি করে যে, আইএফএ-র অনুমোদন ছাড়া টুর্নামেন্ট করতে দেবো না। তাহলেই একমাত্র এই ধরণের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
সেক্ষেত্রে ঘুরেফিরে আসছে রাজ্যের ক্রীড়াদপ্তরের ভূমিকা। তাঁরা কি শীতঘুম থেকে জেগে উঠবেন? উত্তরপূর্ব ভারত, ওড়িশার মত বাংলাতেও কি ফুটবলের সুদিন ফেরানোর কোনও উদ্যোগ নেবে সরকার? সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে ময়দান।
Comments :0