MODI DEMOCRACY WORLD

সম্মানহানির দায়

সম্পাদকীয় বিভাগ

গোটা বিশ্বের কাছে ‘গণতন্ত্রের জননী’কে হাসির খোরাকে পরিণত করে ফেলছেন স্বঘোষিত বিশ্বগুরু। ভারতের বুকে একদলীয় হিন্দুত্ববাদী স্বৈরাচার কায়েম করার উদগ্র কামনায় ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণের জন্য যেভাবে মুসলিম বিদ্বেষের চাষ চলছে এবং বিরোধী শক্তিকে নির্মূলীকরণের যে বেপরোয়া অভিযান শুরু হয়েছে তাতে দে‍‌শের ভেতরে তো বটেই দে‍‌শের বাইরেও সমালোচনায় মুখর হচ্ছে অনেকে। এমাসের গোড়ায় সিএএ চালু করার পর এবং কয়েকদিন আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বিশ্ব রীতিমতো উদ্বিগ্ন। তারা তাদের উদ্বেগের কথা চাপা না রেখে প্রকাশ্যে উগড়ে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে জার্মানি আমেরিকা সরাসরি মুখ খুলে মোদী সরকারকে শুধু অস্বস্তিতে ফেলেনি, মোদী জমানায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ এবং স্বাধীন বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। খোদ আমেরিকা-ইউরোপ থেকে এভাবে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হবে এমনটা কল্পনাও করতে পারেননি মোদীরা। বিশেষ করে যে আমেরিকাকে মোদী সেরার সেরা বন্ধু বলে মনে করেন সেই আমেরিকা যে ভোটের মুখে তাঁকে এমন প্যাঁচে ফেলে দেবে সেটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। যে গুরুতর বিষয়টি নিয়ে জার্মানি বা আমেরিকা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তার মুখের মতো জবাব দেবার জায়গায় নেই মোদীরা। অথচ খোঁচা খেয়ে নীরবে হজম করা আত্মসমর্পণের শামিল। তাও আবার ভোটের মুখে। বিরোধীরা তো চেপে ধরবে। তাই দু’দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিদের ডেকে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দেশ দুনিয়াকে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে বিশ্বগুরু কতটা শক্তিমান। যে প্রশ্নগুলি উঠেছে সেগুলিকে যুক্তিগ্রাহ্যভাবে খণ্ডন না করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভিন্ন দেশের নাগ গলানো সহ্য করা হবে না। আসলে প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গেলে বিপদ আরও বাড়বে। তাই বার্তা দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে আমরা ক্ষমতায় আছি। যা খু‍‌শি তাই করতে পারি তোমাদের অধিকার নেই সেটা নিয়ে কথা বলার। অনেকটা মাতাল স্বামীর বউ পেটানোর মতো। আমার বউকে আমি পেটাচ্ছি তুমি বলার কে হে!
এটা ঠিক একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যদের নাগ গলানো অনধিকার চর্চা। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে। আধুনিক সভ্য মানব সমাজে সর্বজনীন কিছু বিষয় থাকে যেগুলিকে নিছক অভ্যন্তরীণ বলে দায় এড়ানো যায় না। মানবাধিকার প্রশ্নে বিভিন্ন দে‍‌শের সমালোচনা হয়। অর্থনীতি-বাণিজ্য বিষয়েও একে অন্যের সমালোচনা ও বিরোধিতা করে থাকে। এমন অনেক সর্বজনীন বিষয়-ভাবনা-মূল্যবোধ আছে যেগুলি কোনও দেশের একার নয়। তেমনি কোনও দেশের ঘোষিত নীতি-অবস্থান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় স্বাধীনতা যদি লঙ্ঘিত হয় তবে দেশের অভ্যন্তরে মানুষ যেমন সরব হন তেমনি বাইরেও সেটা আলোচ্য হয়ে উঠতে পারে। যেমন সিএএ এবং কেজরির গ্রেপ্তার নিয়ে আমেরিকা সরব হয়েছে, কেজরির গ্রেপ্তার নিয়ে মুখ খুলেছে জার্মানি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ করা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। এই বিষয়গুলো নিয়ে ভারত সরকারের পদক্ষেপকে যে খোদ রাষ্ট্রসঙ্ঘও ভালো চোখে দেখছে না। সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও অনেক দে‍‌শের সংবাদে মানুষের আলোচ্য হয়ে উঠেছে বিষয়গুলি। চোখ রাঙিয়ে দুনিয়াকে থামানো যাবে না। দাম্ভিক সরকার নিজেদের ঔদ্ধত্য জাহির করতে গিয়ে ভারতের সম্মান ও আত্মমর্যাদাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। ভারতের জনগণ এটা বরদাস্ত করবেন না। ভোটে তার জবাব তারা দেবেন।

Comments :0

Login to leave a comment