মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী। নারদের গোপন ক্যামেরায় যাঁকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল। তাঁকে পাশে বসিয়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে টানা লড়াই চালানোর দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মোদীর দাবি, সরকারি টাকা লুটে তৃণমূলকে বাধা দিয়ে চলেছেন তিনি। সেই জন্যই তৃণমূল তাঁকে প্রধান শত্রু মনে করে।শুক্রবার আরামবাগে নির্বাচনের মুখে ডাকা বিজেপি’র সভায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘লুটের টাকা ফেরাতে হবে। এটি মোদীর গ্যারান্টি’।
আরামবাগে ‘বিজয় সংকল্প’ সভার ঠিক আগেই সরকারি অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যের একাধিক প্রকল্পে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। রাজভবনে বৈঠক হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে। ঝাড়খন্ডেও একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করে এদিন রাজ্যে আসেন মোদী।
আরামবাগে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল শিক্ষক নিয়োগে, রেশনে দুর্নীতি করেছে। চিট ফান্ড, গরু পাচার সব কিছু দুর্নীতির সাথে যুক্ত তৃণমূল। তাদের নেতাদের বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় পাওয়া যাচ্ছে। সরকার কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত আটকানোর কৌশল নিয়েছে রাজ্য। ওরা (তৃণমূল) কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে লুঠ করতে চায়, মোদী এটা আটকাচ্ছে তাই মোদী ওদের শত্রু। যারা লুঠ করছে তাদের হারাতে হবে, মোদী এদের ছাড়বে না। মোদী এদের কুকথায় ভয় পায় না।’’
শুধু শুভেন্দু নয়, শঙ্কুদেব পান্ডাও এখন বিজেপির নেতা, নেতা মুকুল রায়ও। নারদায় টাকা নিয়েছেন শোভন চ্যাটার্জিও। মুকুল আনুষ্ঠানিকভাবে এখন তৃণমূল, বিধানসভার খাতায় বিজেপি’তে! এই বাহিনীর নেতা মোদী দু্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা করেছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যে লাগাতার লড়াই করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পাশে থেকে বামপন্থী সংগঠনগুলি। তার জেরে আদালতের নির্দেশে ইডি বা সিবিআই’র মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত চলছে। তৃণমূলের কৌশলের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছেন যে হাইকোর্টে তদন্তে ঢিলেমির জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কড়া ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে। বামফ্রন্টই কেন্দ্রীয় সংস্থার সদর দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করেছে। বারবারই দেখা গিয়েছে ‘দিদি-মোদী’ বৈঠকের পর তদন্তের গতি ঢিলে হতে।
উলটে, এদিন আরামবাগে, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টকে লক্ষ্য করে তৃণমূলকে সহায়তা করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে, শুরু থেকে যে মঞ্চকে আক্রমণ করে চলেছেন মোদী।
সন্দেশখালি প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘মা মাটি মানুষ ঢোল পেটানো তৃণমূল সন্দেশখালির মহিলাদের সাথে যা করেছে তা দেখে গোটা দেশ দুঃখী। রাজা রামমোহন রায়ের আত্মা কষ্ট পাচ্ছে। তৃণমূলের নেতা সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে অন্যায়ের সীমা পার করেছে। বিজেপি নেতারা মহিলাদের সম্মানের জন্য লড়াই করেছে, তাই বাংলার পুলিশ শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করেছে। তৃণমূল রাজত্বে তার দলের নেতা দুই মাস প্রায় লুকিয়ে ছিল। মা বোনেদের সাথে যা হয়েছে তার বদলা নিতে হবে ভোটে।’’
তৃণমূলে থাকার সময় শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে শেখ শাহজাহানের শলা পরামর্শের ছবি যদিও রাজ্যবাসী দেখে ফেলেছেন। শাহজাহান ঘনিষ্ঠরা বিজেপি’র সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সন্দেশখালির আন্দোলন কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়। গ্রামের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামেন তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। বিজেপি সেই আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বার বার। কখনও সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগুরু। বা কখনও রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি বলে সেখানকার মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করেছে। এদিন প্রধানমন্ত্রীও আন্দোলনে বিভেদরেখা টানার কৌশল নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এক অংশকে খুশি করতে এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে কেন।’’
বাস্তবে সন্দেশখালিতে ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সব অংশ লড়াইয়ে নেমেছেন, সামনে মহিলারা।
‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘আমার সব থেকে খারাপ লাগে হয় ‘ইন্ডিয়া’-র বড় বড় নেতাদের দেখে। তারা সন্দেশখালির ঘটনার ক্ষেত্রে চোখ, মুখ, নাক, কান বন্ধ করে বসে ছিল। পাটনা, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই এই সব জায়গায় তারা একসাথে বৈঠক করে। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের এখানকার সরকারের থেকে জবাব চাওয়ার ক্ষমতা নেই। সন্দেশখালির মহিলাদের পাশে এদের দেখা যায়নি।’’
সন্দেশখালির ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় সিপিআই(এম)’র প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখার্জি, অধীর চৌধুরিরা দফায় দফায় সন্দেশখালি গিয়েছেন। তাঁদের পুলিশ আটকেছে। পুলিশের নজর এড়িয়ে গ্রামের মানুষের সাথে দেখা করেছেন কথা বলেছেন মীনাক্ষী মুখার্জিরা।
রাজ্যের দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না তাই একাধিক প্রকল্পে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্য একাধিক প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। রাজ্যকে টাকা দেওয়া সত্ত্বেও আবাস যোজনার কাজ হচ্ছে না।’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে একাধিক কেন্দ্রীয় টিম এসে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে। কোনও রিপোর্ট তারা পেশ করতে পারেনি। তৃণমূলের নেতা, পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও দায়ের করেনি কেন্দ্র। মোদী তার ব্যাখ্যা এড়িয়ে গিয়েছেন।
Comments :0