‘দুর্গাপুরের সভা থেকে বাঙালি আবেগকে’ শান দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে নীরব থেকেছেন অন্য রাজ্যে এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিয়ে। একশো দিনের কাজের মতো প্রকল্পে বঞ্চনা সম্পর্কেও কথা বলেননি। দুর্গাপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘বামপন্থীরা এবং তৃণমূল এখানে সরকার চালিয়েছে কেন্দ্রে কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়ে। কিন্তু বাংলা ভাষা নিয়ে ভাবেনি। বিজেপি সরকার বাংলাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। বিজেপির কাছে বাংলা অস্মিতা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে বিজেপি আছে সেখানে বাঙালিদের গুরুত্ব আছে।’’ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে এরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে। যাকে কেন্দ্র করে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুই সরকারের সমালোচনা করে পথে নেমেছেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘শ্রাবনের পবিত্র মাসে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পেয়েছি। পাঁচ হাজার চারশো কোটি টাকা প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। বিজেপি এক সমৃদ্ধ বাংলা বানাতে চায়, বিকশিত বাংলা তৈরি করতে চায়। এই সব প্রকল্প এই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। এই রাজ্যের মাটি প্রেরণায় ভরা। এই মাটি শ্যামাপ্রসাদের মাটি। ভারতের উন্নয়নের জন্য তিনি কাজ করেছেন। বিধান চন্দ্র রায়ের মাটি এই রাজ্য যিনি দুর্গাপুরকে তৈরি করেছেন। এই রাজ্য দেশকে দ্বারকানাথের মতো সমাজসংস্কারক দিয়েছেন। একটা সময় দেশের উন্নয়নের কেন্দ্র ছিল এই রাজ্য। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকে আসতেন এখানে কাজের জন্য। এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। যুব সমাজ অন্য রাজ্যের চলে যাচ্ছে কাজের জন্য।’’ এদিনের সভায় প্রধানমন্ত্রী জয় শ্রী রাম, জয় মা কালী এবং জয় মা দুর্গা’ স্লোগান তুলে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকশিত বাংলার গ্যারেন্টি দাবি করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘আসামে বিজেপি সরকার গঠন করেছে। সেখানে উন্নতি হচ্ছে। ত্রিপুরাও উন্নতি করছে। ওড়িশাও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। কামদার সরকার দরকার। বিকশিত বাংলা মোদীর গ্যারেন্টি। পশ্চিমবঙ্গের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।’’ উল্লেখ্য প্রধানমন্রীন্ যখন বলছেন তার দল বাঙালি অস্মিতার গুরুত্ব বোঝে তখন দেখা যাচ্ছে আসামে আদানির স্বার্থে বাঙালি উচ্ছেদ করছে বিজেপি সরকার। ওড়িশায় বিজেপি সরকারের আমলে বেড়েছে নারী নির্যাতনের ঘটনায়। ত্রিপুরায় তৃণমূলের কায়দায় বামপন্থীদের ওপর আক্রমণ করে পঞ্চায়েত দখল করছে বিজেপি। আক্রমণ হচ্ছে বিরোধীদের ওপর। সরকারি নিয়োগ বন্ধ রাখায় প্রতিবাদ তীব্র। বিহারে চলছে একের পর এক খুন, এমনকি হাসপাতালে ঢুকে।
এদিনের সভা থেকে বিহারের মতো এ রাজ্যেও ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলে নিজের স্বার্থে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। এই কাজ দেশ এবং বাংলার জন্য ক্ষতি। কিন্তু তৃণমূল এই কাজ করে যাচ্ছে। তৃণমূল অনুপ্রবেশকারিদের সমর্থন করছে। এই সভা থেকে বলতে চাই যে ভারতের নাগরিক নয় যারা অনুপ্রবেশ করেছে তার সাথে সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এটা মোদী গ্যারেন্টি।’’ বিহারে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে ২০০৩ সালের পর ভোটার তালিকায় যাদের নাম তোলা হয়েছে তাদের ১১টি নথি জমা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তারা দেশের নাগরিক। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
রাজ্যের শিল্পায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার তৈরি হলে বাংলা শিল্প কারখানার দিক থেকে প্রথম সারিতে পৌঁছাবে। আমদানি রপ্তানির কেন্দ্র থেকেছে এই রাজ্য। প্রাকৃতিক সম্পদ আছে রাজ্যের। তৃণমূল সরকার বাংলার উন্নতি আটকে রেখেছে। যেদিন তৃণমূল সরকার থাকবে না সেদিন থেকে বাংলা উন্নয়নের পথে পা বাড়াবে।’’ ঘটনা হলো দেশে প্রতি বছর ২ কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেকারির হার স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ স্তরে উঠেছে মোদীর মেয়াদেই।
তিনি আরও বলেন, ‘‘দুর্গাপুর বর্ধমান আসানসোল ভারতের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে এখন এখানে কারখানায় তালা পড়ছে। আমাদের বাংলাকে এই পরিস্থিতি থেকে বাইরে আনতে হবে। বাংলা বদল চায়, বিকাশ চায়, বাংলা পরিবর্তন চায়, বাংলা উন্নয়ন চায়। দুর্গাপুর-কলকাতা গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে শিল্পপতিদের সুবিধা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের জন্য টাকা দিয়েছে। যাতে সিএনজি গাড়ি চালু হয়। নতুন কারখানা হয় এবং যুবকদের কাজের সুযোগ হয়।’’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘যেখানে মুর্শিদাবাদের মতো দাঙ্গা হয়, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে হিংসা হয়। পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে। রাজ্য সরকার মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে না। শিল্পপতিরা ভয় পায় আসতে। তৃণমূলের গুন্ডা ট্যাক্সের জন্য শিল্প আসে না। তৃণমূল শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। হাজার হাজার শিক্ষক কাজ হারিয়েছেন তার জন্য দায়ী তৃণমূলের দুর্নীতি। স্কুলের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সমস্যার মুখে এই সরকারের জন্য।’’ উল্লেখ্য, মোদীর মেয়াদে দেশেও বন্ধ হচ্ছে হাজার হাজার স্কুল। স্কলারশিপ থেকে বাদ পড়ছে ছাত্রদের নাম, কমছে গবেষণার সুযোগ।
নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তা নেই এই রাজ্যে। চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সরকার অপরাধীদের আড়াল করতে ব্যস্ত ছিল। অন্য একটি কলেজেও তৃণমূল অভিযুক্ত ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায়।’’ প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্যেই ধর্ষণে শাস্তিপ্রাপ্তদের জেল থেকে ছাড়ানো হয়েছে সরকারি তৎপরতায়। তারপর বিজেপি মালা দিয়ে বরণ করেছে সেই অপরাধীদের। উত্তর প্রদেশের হাথরসে দলিত যুবতী নিপীড়নে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়েছে। সম্প্রতি ওড়িশায় নির্যাতিতা ছাত্রীর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই রাজ্য বাঁচতে চায়, মুক্তি চায়। ঘরের ছেলেকে ঘরের ভাত খাওয়াতে চায়। শিল্পায়ন চায়। এক বছরের মধ্যে বিজেপি এই রাজ্যকে শিল্পায়ন হবে। আমাদের সব আছে কিন্তু ছেলে মেয়েরা অন্য রাজ্যে যাচ্ছে কাজের জন্য। নতুন পশ্চিমবঙ্গ চাই।’’
Modi Durgapur
চুপ পরিযায়ী হেনস্তায়, মোদীর মুখে ‘বাঙালি আবেগ’, ইঙ্গিত বিহারের মতো ভোটার তালিকা ‘সংশোধনের’

×
Comments :0