ছয়দিন পেরিয়েছে। শক্তিগড় শুট আউট কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত একজনকেও গ্রেপ্তার করে উঠতে পারেনি পুলিশ। বারোজন আধিকারিককে নিয়ে গঠিত সিট এখনও ‘ব্রেক থ্রু’র খোঁজে। এরই মধ্যে দুর্গাপুরে রাজু ঝা’র বাড়িতে এসে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে তৃণমূল সাংসদ অর্জুন সিং দাবি করলেন, ‘এটা পরিকল্পিত খুন। বড় মাথা রয়েছে। পরিণত মাথা পিছনে রয়েছে’।
গত বিধানভা ভোটের পরেই বিজেপি থেকে ফের তৃণমূলে ঢুকে পড়েছিলেন বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। রাজু ঝা’র হত্যাকাণ্ডের পরে এই কয়লা মাফিয়া বিজেপির লোক বলে তৃণমূলের তরফে প্রথম থেকেই দাবি করা হয়। রাজু ঝা খুনের ঘটনায় তৃণমূল মুখে কুলুপ আঁটে। এমনকি যেভাবে রাজু ঝা’র সঙ্গেই গোরু পাচারে সিবিআই-এর চার্জশিটে অভিযুক্ত আবদুল লতিফের প্রসঙ্গ সামনে আসে, যেভাবে পুলিশের উপস্থিতিতেই সেদিন শক্তিগড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় লতিফ তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনও রীতিমত বেকায়দায়।
এদিন তৃণমূল নেতা, সাংসদ অর্জুন সিং দুর্গাপুরে এসে সরাসরি দাবি করেন দোষীরা দ্রুত গ্রেপ্তার না হলে, আব্দুল লতিফকেও খুন করা হতে পারে। ষড়যন্ত্র করে রাজুকে খুন করা হয়েছে! রাজু ঝা’র বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের কাছে অর্জুন সিং বলেন, ‘‘ আমার মনে হয় এই ঘটনায় লতিফ একটা লিঙ্ক হিসাবে কাজ করেছে। এখন আমার লতিফকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। লতিফকেই না রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, তদন্ত যখন এগবে, লতিফের কাছে পৌঁছবে, মাস্টার মাইন্ডরা লতিফকেই হয়তো সরিয়ে দেবে।’’ একইসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘রাজু ঝা কবে কী করেছিল আমি জানি না। তবে ও এখন গুড বিজনেসম্যান ছিল। তাঁর পাশে দাঁড়ানো উচিত। যেভাবে খুন হয়েছে ২০০ শতাংশ নিশ্চিত পরিকল্পনা করে রাজুকে এনে মারা হয়েছে। এটা ছোট মাথার কাজ না। এসব কেসে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীই থাকে না।’’
ফের সেই প্রভাবশালীর তত্ত্ব। এবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি নয়, খোদ তৃণমূলের সাংসদই রাজু ঝা খুনের ঘটনায় ‘প্রভাবশালী’ যোগ সামনে এনেছেন। অর্জুন সিংয়ের কথায় স্পষ্ট রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। যে কোনও সময় যে কেউ খুন হয়ে যেতে পারেন, যে কোনও জায়গায় শুট আউটের ঘটনা ঘটতে পারে। তৃণমূল সাংসদের এমন মন্তব্যে রীতিমত অস্বস্তিতে পুলিশ প্রশাসনও। তৃণমূলের তরফে রাত পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
এদিকে গোরু পাচার কাণ্ডে ফেরার আবদুল লতিফ কোথায়? পুলিশ প্রশাসনও যেমন মুখে কুলুপ এঁটেছে তেমনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-এর তরফে কোনও তথ্য মেলেনি। যদিও আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি সূত্রে জানা গেছে আগামী সপ্তাহেই গোরু পাচার কাণ্ডে দিল্লির সদর দপ্তরে তলব করা হয়েছে ইলামবাজারের শেখ আবদুল লতিফকে। রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডেই প্রশ্ন উঠছে গত আট মাস ধরে খাতায় কলমে ‘ফেরার’ সিবিআই-এর গোরু পাচার মামলার মোস্ট ওয়ান্টেড আব্দুল লতিফ শুটআউটের পর কোথায় নিমেষের মধ্যে গায়েব হয়ে গেল? আদৌ গায়েব হয়েছে লতিফ, নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবেই গুম করা হয়েছে? লতিফের গাড়ি চালককে হাতে পেয়েও পুলিশ নাকি এখনও লতিফের কোন খোঁজই পায়নি!
Comments :0