বেআইনি নিয়োগ বরদাস্ত করবে না আদালত। প্রয়োজনে কমিশন ভেঙে দিন। বৃহস্পতিবার এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। বেআইনিভাবে যাঁরা শিক্ষকতার কাজ করছেন তাঁদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা আগেই বলেছে। কিন্তু এই বেআইনি নিয়োগকে বৈধতা দিতে চাইছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। চলতি বছরে ১৯ মে এসএসসি একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল শিক্ষকপদের জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই শূন্যপদ সৃষ্টি করেছে এসএসসি। বৃহস্পতিবার এসএসসি’র আইনজীবী আদালতকে বলেন, যে সমস্ত শিক্ষক চাকরি করছেন, তাঁদের পরিবার রয়েছে, কারুর কারুর তিন চার বছর চাকরি হয়ে গেছে। এই শিক্ষকদের চাকরি থেকে সরানো যাবে না। আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনেই বিচারপতি বলেন, যাঁরা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের শিক্ষাকতা সরিয়ে অন্য চাকরি দিন। এই শিক্ষকরা বহাল থাকলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা কী শিখবে? বিচারপতি বসু অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করেন এই অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি হয়েছে অবৈধ চাকরির বৈধতা দিতে সেব্যাপারে রাজ্য সরকারের বক্তব্য কী? এজি আদালতকে জানান, রাজ্য সরকার এভাবে চাকরি বৈধতা দিতে শূন্যপদ সৃষ্টি হয়েছে তা জানে না। রাজ্য সরকার অবৈধভাবে নিয়োগের বিরোধিতা করছে। আদালতে প্রকাশ্যেই আসে এসএসসি এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এরপরই বিচারপতি বলেন, রাজ্য সরকার জানে না কমিশন কী কাজ করছে। এমন কমিশন ভেঙে দিন। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের বক্তব্য শুক্রবারই হলফনামা আকারে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই দিনই মামলাটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এসএসসি সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। এসএসসি’র গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-সি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। কমিশন এই অবৈধ নিয়োগকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে কমিশনের পক্ষ থেকে চারটি হলফনামা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেধা তালিকায় রয়েছেন এমন যোগ্যপ্রার্থীদের নিয়োগের ব্যাপারে কার্যকরী সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
সিবিআই তার তদন্তে প্রাথমিক ভাবে কলকাতা এবং দিল্লি থেকে যে হার্ডডিক্সগুলি উদ্ধার করেছে তার ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যেই দিল্লি এবং গাজিয়াবাদে গিয়ে সিবিআই হার্ডডিক্সের তথ্য উদ্ধার করেছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, পরীক্ষায় শূন্য পেয়েছেন এমন প্রার্থীদের খাতায় ৫২ এবং ৫৩ নম্বর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাঁরা ২ বা ৩ নম্বর পেয়েছিলেন তাঁদেরও ৫২ থেকে ৫৩ নম্বর দেওয়া হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েছেন এমন বেশ কিছু প্রার্থীর খাতায় পাশ নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের কম্পিউটার থেকে যে হার্ডডিক্স পাওয়া গিয়েছে সেখান থেকেই কারসাজির বেশি তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি যখন এসএসসি’র চেয়ারম্যান ছিলেন সেই সময়ই এই বেআইনি ঘটনা বেশি ঘটেছে। সেই সুবীরেশ ভট্টাচার্য এখন জেলে রয়েছেন।
সিবিআই তার রিপোর্টে জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যে তথ্য উদ্ধার করা গেছে সেখানে জানা গেছে নবম ও দশম শ্রেণির ৯৫২ জন, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ৯০৭ জন শিক্ষক এবং স্কুল শিক্ষাকর্মী, গ্রুপ-ডি পদে ২ হাজার ৮২৩ জনের পরীক্ষার নম্বরে কারসাজি করা হয়েছে। এছাড়া গ্রুপ-সি পদে ৩ হাজার ৪৮১ জনের উত্তরপত্রে বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার সন্ধান মিলেছে। মোট ৮১৬৩ জনের তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। শুধু শিক্ষাকর্মীদের পরীক্ষার খাতা নয় এসএসসি’র নবম দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ এবং একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের খাতায় এই কারসাজির অভিযোগ বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে সিবিআই। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলিকে জানতে হবে, এইভাবে খাতায় কারসাজি করার নির্দেশ কে দিয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে আপনাদের সত্য জানাতে হবে।
এই রিপোর্ট জমা পড়ার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, যারা বেআইনিভাবে নিয়োগপত্র পেয়েছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় ইস্তাফা দিন। তা না হলে মামলাকারীর আইনজীবীরা অবৈধ নিয়োগের তথ্য সংগ্রহ করে তাঁদের খুঁজে বের করবেন। আদালত বাধ্য হবে তাঁদের বরখাস্ত করতে। এমনকি, তারা আর কোনোদিন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও এই অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করলেন।
Comments :0