মুকুন্দপুরের আকাশ ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। বাবা পীযুষ অধিকারি পেশায় টোটো চালক। বাবার ক্ষমতা ছিল না বেশি টাকা দিয়ে কোচিং সেন্টারে পড়ানোর। তাই আকাশের পড়াশোনা বিকল্প পাঠশালায়।
আকাশ অংক, ফিজিক্যাল সাইন্স, লাইফ সাইন্স, ইতিহাস আর ভূগোলে লেটার পেয়েছে। যাদবপুর এনকে পাল স্কুলের ছাত্রের সাথে যখন কথা বলা হচ্ছে তখন আশপাশ থেকে বাড়ির লোকদের উচ্ছাস ভেসে আসছে। মা ফোন ধরে বলেন, ‘‘খুব খুশি হয়েছি। ও সায়েন্স নিয়ে পড়বে বলছে। আরও বড় হোক তাই চাই।’’
আকাশ বলেন, ‘‘ভালো লাগছে ভালো রেজাল্ট করে। পাঠশালার শিক্ষক, শিক্ষিকারা প্রতি মুহুর্তে পাশে থেকেছেন, কি ভাবে কি করতে হবে তার পরামর্শ দিয়েছেন।’’
রেজাল্টের পর তাদের সাথে সরাসরি দেখা হলেও ফোনে কথা হয়েছে বলে জানালেন মুকুন্দপুরের এই কৃতি ছাত্র।
আকাশের মতো ঋতম চক্রবর্তীও বিকল্প পাঠশালার এক কৃতি ছাত্র। যাদবপুর হাই স্কুলের এই ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৫০৭। ইতিহাস এবং ভূগোলে লেটার পেয়েছে। ঋতম ভালো একটি সংস্থায় চাকরি করতে চায়।
স্কুল থেকে ফোনে ঋতম বলেন, ‘‘কম্পিউটা শিখছি। ইচ্ছা আছে স্পোকেন ইংলিশ শেখার। তাহলে ভবিষ্যতে একটা ভালো চাকরি করতে পারবো।’’ পাঠশালার বিষয় জানতে চাওয়া হলে উচ্ছাসের সাথে ঋতম বলে, ‘‘খুব ভালো পরিবেশ। আনন্দ করে পড়তাম ওখানে। টিচাররা খুন ভালো। যারা এই পাঠশালা চালাচ্ছেন তারা সকালে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’’
মডার্ন পার্ক সেন্টারের ছাত্র অমিত সরকারের প্রাপ্ত নম্বর ৫১৭। ইতিহাস, ভূগোলে লেটার পেয়েছে।
‘মিশন ৩৬০’। মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে বিকল্প একটা ভাবনার ডাক দিয়েছিল সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটি। ২০২২ সালের জুলাই মাস। পূর্ব যাদবপুরে শুরু হলো নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ‘বিকল্প পাঠশালা’। ঐদিন থেকে আলাদা ভাবে দু'টি সেন্টারে পাঠশালার কাজ শুরু। একটি ১০৯-নং ওয়ার্ডের মুকুন্দপুরে অপরটি ১০৩-নং ওয়ার্ডের মডার্নপার্কে।
এবছর বিকল্প পাঠশালা থেকে ২২-জন ছাত্র-ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। প্রত্যেকেই পরীক্ষাব ভালো ফলাফল করেছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা।
এরিয়া কমিটির সম্পাদক ধ্রুব দাশ বলেন, ‘‘এসএফআই করার সময় থেকে আমরা এই ধরনের বিকল্প পাঠশালা বা কোচিং করে এসেছি। সেই গুলো বেশিদিন চালানো যায়নি। তবে যেদিন থেকে পার্টি মিশন ৩৬০ ঘোষনা করলো সেদিন থেকে আমরা এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করে এই বিকল্প পাঠশালা চালু করি। বিভিন্ন নামি স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকারা এই পাঠশালায় পড়ান। কেউ মথুরাপুর থেকে স্কুল করে এসে পড়ায়, কেউ লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের যেই ঐকান্তি চেষ্টা তার ফল আজ আমরা পাচ্ছি।’’
প্রতিদিন সামান্য টিফিন থাকে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। ছাত্র ছাত্রীদের স্বাস্থ্যের দিকটাও খেয়াল রাখা হয় এখানে। এমনটাই জানিয়েছেন ধ্রুব দাশ। তিনি বলেন, ‘‘যেই সব কমরেডরা গুরুত্ব দিয়ে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা।’’
Comments :0