Gyanvapi Mosque

জ্ঞানবাপীতে পুজো নিয়ে মসজিদ কমিটির আবেদন শুনবে সুপ্রিম কোর্ট

জাতীয়

জ্ঞানবাপী মসজিদের পুজো করা যাবে কি না সেই বিষয় এবার মসজিদ কমিটির আবেদন শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। বারাণসী জেলা  আদালতের নির্দেশে মসজিদের কুঠুরিতে পুজো করার অনুমতি পায় হিন্দুত্ববাদীরা। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টে যায় মসজিদ কমিটি। সেখানেও খারিজ হয় তাদের আবেদন। হাই কোর্টের ধাক্কা খেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তারা। শুক্রবার প্রধানবিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়ের বেঞ্চ জানিয়েছে তারা জ্ঞানবাপীর মূল মামলার অংশ হিসাবে বিষয়টিকে বিবেচনা করবে। 
গত ১ ফেব্রুয়ারি জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেজ্ঞ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় অঞ্জুমা ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন করা হয়। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড় তাদের নির্দেশ দেন বিষয়টি এলাহাবাদ হাই কোর্টে আবেদন করার জন্য। 
মসজিদ কমিটির আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে বলেন, ‘‘বিচার আদালত সাতদিন সময় দিয়েছে তহখানায় পুজো করার জন্য। কিন্তু রাতের অন্ধকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোহার গ্রিল কেটে পুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, রাজ্য প্রশাসন পুজো করতে চায়া আদালতে আবেদন করেছে তাদের হয়ে কাজ করছে।’’
৩১ জানুয়ারি বারাণসী জেলা আদালতের বিচারপতি এ কে বিশ্বেস ম্যাজিস্ট্রেটকে এক নির্দেশে জানিয়েছেন, একজন পুরোহিত ওই তহখানা বা ভূগর্ভস্থ স্থানে পুজো দেবেন। পুরোহিত কে হবেন সেটা স্থির করবে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্ট এবং আবেদনকারীরা। জ্ঞানবাপী মসজিদের দক্ষিণ দিকের এই তহখানায় থাকা মূর্তি পুজোর ব্যবস্থা সাত দিনের মধ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এখানে একটি পরিবারের পক্ষ থেকে পুজো দেওয়া হতো। বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পরে উদ্ভূত ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তৎকালীন মুলায়াম সিং সরকার কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের থেকে জ্ঞানবাপী মসজিদকে ব্যারিকেড করে পৃথক করে। সেই সময় থেকে পুজো বন্ধ থাকে। 
১৯৯১ সালে হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয় যে জ্ঞানবাদী মসজিদ কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে। মসজিদ চত্বরে ধর্মীয় উপাচার পালনের দাবিও তাদের পক্ষ থেকে করা হয়। মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছিল যে ১৯৯১ সালে ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা আইন অনুযায়ী জ্ঞানবাপী সংক্রান্ত কোন শুনানি হওয়া সম্ভব নয়। অপর দিকে হিন্দু পক্ষের দাবি ১৯৪৭ সালেও মদজিদ চত্বরে হিন্দু উপাসনা করা হতো। ২০২১ সালে পাঁচ জন মহিলা মসজিদের ভিতর উপাসনার দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
জ্ঞানবাপী মসজিদে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা চালাচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। গত ২ নভেম্বর হাই কোর্টে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জানিয়েছিল সমীক্ষা শেষ। রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো দরকার। ১৭ নভেম্বর রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল আদালত। তারও আগে, ৫ অক্টোবর বারাণসী জেলা আদালত জানিয়েছিল রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হলো। সেই সময়সীমা আগেই পার হয়ে গিয়েছে।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিতরে বহু হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি রয়েছে। হিন্দু মন্দির ভেঙে শতাব্দী প্রাচীন এই মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। ভিডিও এবং ছবি সমাজিকমাধ্যমে প্রকাশ্যে এনে তারা আরও দাবি করেন যে, মসজিদের অজুখানায় যেই পাথর রয়েছে তা নাকি শিবলিঙ্গ। যদিও কোনও বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট এই দাবির সপক্ষে পেশ করা হয়নি। আদালতে বিষয়টি গেলে ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’-র নির্দেশ দেওয়া হয় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভেকে।  
এলাহাবাদ হাই কোর্টের নির্দেশে প্রত্নতাত্তিক সমীক্ষা শুরু হলে মসজিদ কমিটি তার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। মসজিদের বিভিন্ন স্থাপত্য এবং একাধিক জায়গা ভাঙার আশঙ্কা জানায় মসজিদ কমিটি। যদিও সমীক্ষার নির্দেশকে বহাল রাখে আদালত। 
বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংসদীয় কেন্দ্রে জ্ঞানবাপী মসজিদ এখন লক্ষ্য হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন অংশের প্রচারে। এই মসজিদ মন্দির ভেঙে তৈরি, এমন প্রচার কেবল সংবাদমাধ্যমে নয়, সামাজিক স্তরেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 
অযোধ্যায় ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের চৌহদ্দিতে রামমন্দির তৈরির অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনা হলো, শীর্ষ আদালতের রায়ে নির্দিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়নি। মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছিল, নানা পর্বে সর্বেক্ষণের পরও এমন নির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির হয়নি। ‘ভাবাবেগ’-কে প্রাধান্য দিয়েই এই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, বলা হয়েছিল রায়ে। 
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বিজেপি এবং আরএসএস স্লোগান তুলেছিল ‘ইয়ে তো সির্‌ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশি মথুরা বাকি হ্যায়।’ রাম মন্দিরের রায়ের পর জ্ঞানবাপী এবং মথুরা নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তৎপরতা বেড়েছে লোকসভা ভোটের আগে।

Comments :0

Login to leave a comment