World disability day

যেভাবে ওঁরা লড়ছেন

সম্পাদকীয় বিভাগ

World disability day kanti ganguly বাধা পেরিয়ে এগোনোর লড়াই

৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। আন্তর্জাতিক মানবতাবোধের এই বর্ণময় লগ্নটিকে আমরা পালন করতে চাই অমলিন বিশ্বাসের শুদ্ধতায়, আন্তর্জাতিকতাবোধের প্রজ্বল সৌভ্রাতৃত্বে। করোনা পরবর্তী সমাজ জীবনে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের পূর্ণ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিতকরণ তথা সমতাময় (ইকোয়ালিটি) সুগম্য সমাজ নির্মাণের ব্রতী হবার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের লগ্নটিকে আমরা পালন করবো।

 গত ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, সংসদের উভয় কক্ষে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাশ হয়েছে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার আইন- ২০১৬ এবং ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিজ্ঞাপন-পূর্বক তা আইনে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ এবং ২০১৮ থেকেই আমরা এই আইন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমস্ত দপ্তরে কার্যকর করার দাবিতে পথে নেমেছি। এবছর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের মূল থিমটি ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ— ‘‘সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দৃশ্যমান হয় না’’ অর্থাৎ লার্নিং ডিসেবিলিটি, মানসিক-সামাজিক সমস্যা, বধিরতা, অটিজম, সিকসসেল অ্যানিমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন অবস্থার প্রতিবন্ধকতা সব সময় দৃশ্যমান হয় না। যার ফলে সরকারি দপ্তরে, অথবা সচেতন নন এমন জনসমাজের কিছু অংশের কাছে এই ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হেনস্তার শিকার হন। এই বিষয়টি নিয়েও সাধারণ জনসমাজে সচেতনতার প্রসার একটি জরুরি বিষয়।


এবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রানি রাসমণি রোডে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এক সুবিশাল বর্ণাঢ্য সমাবেশ থেকে আমরা কেন্দ্র এবং রাজ্য— উভয় সরকারের কাছে নিম্নলিখিত দাবির ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার আইন ২০১৬ অবিলম্বে সমস্ত সরকারি দপ্তরে উপযুক্তভাবে কার্যকর করার দাবিতে সোচ্চার হব। দাবিগুলি হলো—প্রতিবন্ধী মানুষদের কাজ অথবা ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। ‍‌ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সমস্ত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের বিপিএল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আইন মোতাবেক সমস্ত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের অন্তদ্যয়-অন্ন-যোজনা ও ইন্দিরা গান্ধী আবাস যোজনা, একশো দিনের কাজ সহ সমস্ত দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে ৫ শতাংশ সংরক্ষণ এবং ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত বরাদ্দ কার্যকর করতে হবে। আইন অনুযায়ী সারা দেশে একই ধরনের প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র ও পরি‍চিতি পত্র প্রদান করতে হবে। 

আইন মোতাবেক প্রতিটি জেলায় বিশেষ আদালত গঠন করতে হবে। প্রতিবন্ধী অধিকার আইন ২০১৬ মোতাবেক প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড পুনর্গঠন (বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন— নির্দিষ্ট শিখন ক্ষমতা, মানসিক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, অটিজম, মাসকুলার, ডেসট্রফি, দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুগত সমস্যা, মালিটপল স্ক্লেরোসিস, পার্কিনসানস রোগাক্রান্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রে) কার্যকরী তথা ব্লকে ব্লকে ক্যাম্প করে পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে।  প্রতিবন্ধী অধিকার আইন মোতাবেক সমস্ত সরকারি বেসরকারি ভবনকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ গম্য করে গড়ে তুলতে হবে এবং ইতিমধ্যেই জুন, ২০২২ সালেই এই নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে একীভূত শিক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আইন মোতাবেক নারী ও শিশু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বি‍‌শেষ সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। 


শুধু নৈমিত্তিক অনুষ্ঠানের শীর্ণ প্রথা নয়, বিগত ২৯ বছরের মতো প্রতিবন্ধী দিবসে আমরা উপস্থিত হবো শহরের রাজপথে। ৩ ডিসেম্বর রানি রাসমণি রোডে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নম্র পরিবেশনের সঙ্গে আমরা চেষ্টা করবো উচ্চশিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে পাশে থাকার ও সংবর্ধনা প্রদানের। সারা রাজ্য থেকে সমস্তরকম প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করে প্রায় ১০ হাজার প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষ রাষ্ট্র, সমাজ ও মূল স্রোতের জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরবে কান্না-হাসির জীবন আলেখ্য— ‘আমরাও পৃথিবী সন্তান’। 


তবু এই হতাশ্বাসের দীর্ণ ক্লান্ত কর্দমাক্ত সময়ে কয়েকটি দৃঢ়মুষ্টি আকাশের দিগন্তরেখা বেয়ে যেন উঠে আসে। ‘যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন’— প্রতিবন্ধকতার সেই প্রান্তিকতায় অলক্ষ্যে তৈরি হয় লক্ষ্যভেদী জীবনভাষ্যের এক অনাস্বাদিত অভিজ্ঞান। শব্দের জাদু থেকে দূরে, পূর্ব বর্ধমানের গলসির খানো গ্রামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিশোর ব্রজকিশোর  মণ্ডল এবছর সর্বভারতীয় ডাক্তারি পরীক্ষায় বসে কৃতিত্বের সঙ্গে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সুযোগ পেলেও, ব্রজকিশোর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যার পাঠ নিতে শুরু করেছে। অষ্টাশি শতাংশ শ্রবণ ক্ষমতাহীন ব্রজকিশোরের দিদিও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিক্ষার্থী, যে এখন স্নাতকোস্তরের ছাত্রী। বিষয়টা আশ্চর্যের এই কারণেই যে—পানিনি, ভূতহরি থেকে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানী হয়ে চমস্কি পর্যন্ত সকলেই মেনেছেন— যার ভাষা নেই, তার পক্ষে জ্ঞান অর্জন করা মুশকিল। কারণ ভাষা ছাড়া জ্ঞানমূলক কাজের অনুশীলন সম্ভবপরই নয়।


বড় মেয়ের শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার কারণে বাবা-মা ছুটে গিয়েছিলেন ব্যান্ডেলের প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্রে। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর শিশু কন্যাটি প্রথম ‘বাবা-মা’ বলে ডেকেছিল। দ্বিতীয় সন্তান এই ব্রজকিশোর। জন্মের কিছুদির পর থেকে ‍‌ বোঝা গেল পুত্রসন্তানটিও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ভেঙে পড়লেন বাবা-মা। এক রাতে ঠিক করলেন স্বামী-স্ত্রী বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হবেন। কিন্তু আত্মঘাতী হওয়ার পূর্বমুহূর্তে থেকে  জেগে উঠে সেই বাবা-মা ভেবেছিলেন মেয়েটি যখন কথা বলার চেষ্টা করছে, ছেলেটাও হয়তো চেষ্টা করলে পারবে। অতঃপর ব্রজকিশোরের বাবা-মা শুরু করলেন দুটি শিশুকে নিয়ে এক অসমসাহসী লড়াই। সঙ্গে যুক্ত হলেন প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্রের স্নেহাস্পদ সুব্রত ও তার লড়াকু যোদ্ধারা। অবশেষে শেষ হাসি হেসেছে ব্রজকিশোর। আমি শুধু ভাবি ব্রজকিশোরের মা তন্দ্রা মণ্ডলের কথা। ইনি কোনও সাধারণ মানবী নন, প্রায় চারদশক প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলনে যুক্ত থাকার সুবাদে এটুকু বলতে পারি। অবশ্যই কৃতিত্বের দাবিদার বাবা অসীমকুমার মণ্ডল। তবু মা, বিশেষ করে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুর মা, সেই মা একটু ভিন্ন প্রকৃতির, ভিন্ন ধাতুর, ভিন্ন ধাঁচের মানুষ। 

কিন্তু অষ্টাদশ শতাংশ শ্রবণ অক্ষমতা থেকে প্রশিক্ষণ ও আধু‍‌নিক যন্ত্রের মাধ্যমে ক্রমাগত উন্নতি করে শ্রবণ অক্ষমতাকে চল্লিশ শতাংশের নিচে নামাতে পারলে তবেই চিকিৎসক হিসাবে পাঠ নেওয়া যাবে, সে লিখিত পরীক্ষায় যে সাফল্যই আসুক না কেন! স্পিচ ট্রেনিং-এর মাধ্যমে ক্রমাগত অনুশীলন করে ব্রজকিশোর এই স্বপ্নের উড়ান আমাদের মনে করিয়ে দেয় হেলেন কেলারের কথা।

দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হেলেনকে কানের যন্ত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। তারপর তাঁর শিক্ষিকা অ্যান সুলিভান, মা কেট ও বাবা আর্থার একযোগে শুরু করলেন মানব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর যুদ্ধ। শুধুমাত্র ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’ পড়লেও হেলেন কেলারকে চেনা যাবে না। ১৯০৬ থেকে পরবর্তী দুটি বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতায় হেলেন নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে। আমেরিকার কালো মানুষদের অধিকারের লড়াইয়ে, খনি শ্রমিকদের অধিকারের সংগ্রামের সাথি হয়েছেন হেলেন কেলার। এবং শুধু তাই নয়, সোশালিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন। সদস্যা হয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রিয়ালি ওয়ার্কার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ইউনিয়নেরও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলনের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে।

 
নদীয়ার শান্তিপুরের পিয়াশা মহলদার, উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বক্ষেত্রেই বিস্তর বাধার পাহাড় ঠেলে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা মাস্টার্স করেছে এবং নেট পরীক্ষায় ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে চমকে দিয়েছে। পিয়াসা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার মহম্মদ রহমান, ৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পলসির শিকার। ভাঙা-ভাঙা, আধো-আধো কথা। দুই হাত চলে না। দেহ কাঁপে, মাথা দোলে। তবু পায়ের দু’আঙুলে কলম ধরে লিখে আলম রহমান ছটি লেটার সহ মাধ্যমিকে নব্বই শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছে। যাদের অনেক কিছু আছে, তবু মনে মনে দুঃখ বিলাস করেন, রবীন্দ্রনাথ তাদের কটাক্ষ করেছেন — ‘অভাবের অভাব’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে। একইভাবে হাওড়ার রুকসানা খাতুন, বিটা থ্যালাসেময়ায় আক্রান্ত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে একাধিকবার দীর্ঘ সময়ের অপারেশন, সঙ্গে নিয়মিত রক্ত নেওয়া। তবু সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করেও রুকসানা জাতীয় স্তরের ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন।


প্রতিবন্ধী অধিকার আইন-২০১৬-তে থ্যালাসেমিয়া, ‍‌হিমোফিলিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া ইত্যাদি স্থায়ী রক্তের সমস্যাকে প্রতিবন্ধকতা বলে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারিস্তরে সামান্য একটু উদ্যোগ নিলে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে পারলেই, থ্যালাসেমিয়া মুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন বিবাহের আগে বাধ্যতামূলক রক্ত পরীক্ষার আইন। পৃথিবীর অনেক দেশ এই ধরনের আইন তৈরি করে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী’র পক্ষ থেকে মুকুন্দপুর প্রতিবন্ধী ভিলেজের কেন্দ্রীয় দপ্তরে থ্যালাসেমিয়া চিহ্নিত করার জন্য অতি আধুনিক সেট-আপ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নামমাত্র মূল্যে, আর্থিকভাবে অনগ্রসর অংশের জন্য বিনামূল্যে থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া নির্ণয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অত্যাধুনিক অডিওলজি ল্যাবরেটরি ও চিকিৎসা পরিষেবা। এই কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে।


একইভাবে নিম্নাঙ্গ অস্থি প্রতিবন্ধী রিমো সাহা একাধারে ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটলিনা চ্যানেল ও নর্থ চ্যানেল অতিক্রম করেছে। এই রকম অনেক কৃতী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে আমরা এই পাঁচজনকে বেছে নিয়েছি, এদের সংবর্ধনা প্রদান করে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের লগ্নটিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে। কারণ এই জীবন জয়ের বহুবিচিত্রমুখী আত্মজাগরণের জীবনজয়ের অনেকান্ত প্রেরণা রয়ে গেছে, যা আমাদেরও প্রাণীত করে, হলুদ-রক্তিম নতুন আকাশ খুঁজে নেওয়ার উজ্জীবনে। আর প্রায় আশি বছরের বিলীয়মান শুভকেশের নগন্য এই ব্যক্তিটির এক জীবনের জমে ওঠে কত স্মৃতির শস্য। বিচিত্র এ‍‌ই মানব সংসারে নানান ফসলের সমারোহের মধ্যে আমাদের প্রিয় সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী যেন বলতে চায়— নীরব, অবনত, মর্যাদাহীন এই মানুষগুলোকে নিয়ে গৌরব করার দিন এসেছে গেছে।

 সামাজিক এলিটবর্গে এরা হয়তো মূল্যবান নয়, তবুও এই পাঁচজন, পাঁচ দিক দিয়ে যেন এক দিগন্তপ্রসারী সংহত, অন্তর্লীন ছন্দোমুগ্ধ সনেট তৈরি করতে চেয়েছে। প্রতিবন্ধকতার প্রকৃষ্টরূপ বন্ধন থাকলেও, তারা কি নান্দনিকভাবে, স্বাধীন; কারো পরবশ নয়, এমনকি ঈশ্বরেরও নয়। 

এই পাঁচজনকে যথাক্রমে ওয়াসিম কাপুর স্মারক সম্মান, সাধন গুপ্ত স্মারক সম্মান, মাইক অলিভার স্মারক সম্মান (মাইক অলিভার প্রতিবন্ধকতার সোশ্যাল মডেলের তাত্ত্বিক), স্টিফেন হকিং স্মারক সম্মান, মাসুদুর রহমান বৈদ্য স্মারক সম্মান প্রদান করা হবে। মঞ্চস্থ হবে কৃতী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকবেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখো‍‌পাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সালমা রহমান সহ বিশিষ্ট সুধীজন। অন্যদিকে সপ্তাহখানেক আগে, রাজ্যের এক মন্ত্রী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ঘৃণার অযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য ভাষা ব্যবহার করে ছাড় পেয়ে গেলেও সেই ঘৃণা যোগ্য অশ্লীল ভাষাকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ক্ষমার অযোগ্য বলেই বিচার করেছেন। আসলে প্রান্তিক মানুষদের যাপনের অভিজ্ঞতা আবিষ্কার করা তো কমিউনিস্টদেরই আত্ম কর্তব্য। আমাদের আহ্বান, আসুন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাবেশে আর ভাগ করে নিন হৃদয়ের উষ্ণতার আলেখ্য।

Comments :0

Login to leave a comment