MD SALIM on ABHJIT GANGULY

আশা করি পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন: সেলিম

রাজ্য

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে আচমকাই পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার তিনি সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, পদত্যাগ করে তিনি বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চলেছেন। রাজনীতির ময়দানেই যে তিনি আসছেন তা স্পষ্ট করে দিলেও কোন দলে তিনি যোগ দেবেন তা জানাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, ইস্তফা দিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাদের দলে যোগ দেবেন এবং লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কেউ বিজেপি’তে যোগদানের কথা বলতে রাজি হননি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন যে, ‘উনি পদত্যাগ করার পরে যা বলার বলব’। বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘অনেক বড় বড় ব্যক্তিই বিজেপি’তে যোগ দেবেন।’ 
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘যে কোনও ব্যক্তির যে কোনও পেশা বা ক্ষেত্র থেকেই নিজের ইচ্ছানুসারে মত ও পথ বাছার অধিকার রয়েছে। সংসদীয় রাজনীতি এখন বিপদের মধ্যে, এই সময়ে যারা অভিজ্ঞ এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করেন, মানুষের শ্রদ্ধার আসনে বসেন তাঁরা যদি রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান, সেটা করতেই পারেন। তবে আমরা আশা করব, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে মূল্যবোধ ও মানুষের অধিকারবোধ নিয়ে আদালতের বেঞ্চে এবং তার বাইরেও কথা বলেছেন, ভয়হীনভাবে চাকরি দুর্নীতিতে বঞ্চিতদের পক্ষে থেকেছেন, তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এই সময়ে এরাজ্যে দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষের সোচ্চার লড়াই চলছে, কারা ইনসাফ চেয়ে লড়ছে আর কারা এর বিরোধিতা করছে তা এখন স্পষ্ট। আশা করি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রেখেই তাঁর ভূমিকা নির্ধারণ করবেন।’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘উনি কোন দলে যোগ দেবেন তা আমি জানি না। কিন্তু উনি ব্যতিক্রমী চরিত্র, দুর্নীতির বিরুদ্ধে উনি মানুষের মধ্যে আলোচিত হয়েছেন। কংগ্রেস পার্টিতে আসতে চাইলে আমি উষ্ণ আহ্বান জানাবো।’ বিজেপি’তে যোগদান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘উনি লড়াকু, প্রতিবাদী, উনি বিজেপি’তে যোগ দেবেন বলে মনে করি না। কিন্তু বিজেপি’তে গেলে তো আর আমরা সমর্থন করতে পারি না। আমাদের অনুরোধ ভালো করে ভাবুন, আপনাকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। এবার বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনার।’ 
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অবসর নেওয়ার এখনও কয়েকমাস বাকি ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি পদত্যাগ করছেন। কোন দলে যোগ দেবেন তা স্পষ্ট না করে তিনি জানিয়েছেন যে পদত্যাগের পরে মঙ্গলবার তিনি বিস্তারিত জানাবেন। তিনি বলেছেন, সাতদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। সোমবার আদালতে গিয়ে আমার তালিকাভুক্ত মামলাগুলি স্থানান্তরিত করব। তারপরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে হাইকোর্টের বাইরে সূর্য সেনের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। 
তবে রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ নিশ্চিত করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে আমাকে অনেকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মাঠে আসুন বলে। আমি মাঠে আসছি। তারাই আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। আমি এর জন্য শাসকদলকে অভিনন্দন জানাতে চাই।’ 
আদালতে বসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এরাজ্যের সরকার এবং শাসকদলের অনেকগুলি দুর্নীতি মামলায় আলোড়ন ফেলে দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন, চাকরি দুর্নীতি মামলায় বেকার ও চাকরিপ্রার্থীদের মনে আশা জাগিয়েছেন। কিন্তু পদ ছেড়ে আসার আগে তিনিই বলেছেন, এখনও বহু দপ্তরে বহু দুর্নীতি উদ্‌ঘাটন হয়নি। হলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ দুর্নীতিতে রাজ্য ডুবে আছে। মৌর্য সাম্রাজ্যের কথা শুনেছিলাম, এখন চৌর্য সাম্রাজ্য দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণামাত্র তৃণমূল নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রায়দানের অভিযোগ শুরু করে দিয়েছেন। যারা মাঠে নামার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, তাঁরাই রবিবার বিকাল থেকে বলা শুরু করেছেন, উনি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কারণে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা বলেছেন। একথা শুনে কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘অদ্ভুত যুক্তি। তৃণমূল দল যে ওঁকে আতঙ্কের চোখে দেখে সেটা স্পষ্ট। উনি পদত্যাগ করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভাবছে সব ময়লা চলে যাবে এবার। কিন্তু বিচার বিভাগ আইনের পদ্ধতি মেনে চলে, ব্যক্তির ওপরে নির্ভর করে না। কাজেই ওদের তৃপ্তি পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’ 
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে দলের সঙ্গে যুক্ত হন না কেন, দুর্নীতির দুর্গন্ধময় যে বাক্স আদালতের অন্দরেই তিনি খুলে দিয়েছেন, সে গন্ধ এখন কোনও রাজনৈতিক তরজায় ঢাকা যাবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তাঁরা একথাও বলছেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আদালতে বসেই বারে বারে দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় এজেন্সি’র ধীরগতি গাফিলতি ইত্যাদিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যেসব দুর্নীতির কথা তিনি তুলেছেন তাতে কালিমালিপ্তরা শুধু তৃণমূলে নেই, বিজেপি’তেও যোগ দিয়েছেন অনেকে। কাজেই বিচারপতির আসনে বসা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কার্যকলাপের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কোনোভাবেই কেন্দ্রের শাসকদলের পক্ষে স্বস্তিদায়ক হতে পারে না। নতুন ভূমিকায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দুর্নীতি বিরোধিতার সেই পথেই থাকেন কিনা সেটাই এখন দেখার।
 

Comments :0

Login to leave a comment