ভোটে সাফল্য আসলেও শিক্ষা দপ্তরের নিয়োগ কেলেঙ্কারি যে তাঁর সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে, প্রশাসনিক বৈঠকে তা এড়াতে পারলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘরে বিভিন্ন দপ্তরের সচিবদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মণীশ জৈনের ওপর। সূত্রের খবর, মণীশ জৈনকে উদ্দেশ্য করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, আপনি তো দুই নৌকাতে পা দিয়ে চলেছেন। প্রধান সচিব কিছু বলার চেষ্টা করলে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে বলেন, যে সব ফাইল আপনি করছেন তাতে সব সময় এটা লিখে দিচ্ছেন, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে’। এটা করছেন কেন? দপ্তরের প্রধান সচিব হিসাবে আপনার তো দায়িত্ব আছে। নিজে যা ভালো বুঝবেন সেটা করুন। তা না করে সব ফাইল নোট দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, উচ্চতর কমিটির নির্দেশে লেখার দরকার কী?
প্রসঙ্গত, এরাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এর আগে বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে গিয়ে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মনীশ জৈনকে। আবার এটাও ঘটনা যে, দুর্নীতিকে আড়াল করতে সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে নির্দেশ আকারে লেখার সময় দুঁদে আমলা মনীশ জৈন নিজের দায় এড়িয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষ কথাটি বারেবারে উল্লেখ করে গেছেন। আগামী দিনে তদন্ত সঠিক পথে এগলে সরকারের শীর্ষস্তরে সমস্যা হতে পারে বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন বৈঠকে কড়া কথা শুনিয়েছেন মণীশ জৈনকে। কিন্তু শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘‘ এত কিছুর পরেও মণীশ জৈনকে এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার শিক্ষা দপ্তর থেকে সরাতে পারেনি। টানা প্রায় ছ’বছর ধরে শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব পদে থেকে গেছেন মণীশ জৈন। ফলে এর দায় মুখ্যমন্ত্রী এড়াতে পারেন না।’’
এদিন বৈঠকে সমবায় দপ্তরের প্রধান সচিব কৃষ্ণ গুপ্ত মমতা ব্যানার্জির কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন। তাঁকে লক্ষ্য করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, প্রতি সপ্তাহে শনিবার, রবিবার দিল্লি চলে যাচ্ছেন। তাহলে পাকাপাকিভাবে দিল্লি চলে যান। রাজ্যে আপনার আর থাকার দরকার নেই।’’আসলে গত দু’মাস ধরে লোকসভা নির্বাচন পর্বে যেভাবে সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকে গুরুত্বপূর্ণ খবর বাইরে চলে গেছে, এদিন তা নিয়েই বৈঠকে একাধিকবার সরব হতে দেখা গেছে মমতা ব্যানার্জিকে। বৈঠকে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের সতর্ক করে বলেছেন, দু’দিকে তাল মিলিয়ে যারা চলেছে, তাদের সব খবর আমার কাছে আছে।
Comments :0