প্রতীম দে
গাড়ি ধরার তাড়ায় ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নামলেই আসছেন ওঁরা। সিগনালের সাথে তাল মিলিয়ে কখনও দড়ি ফেলছে তো আবার তুলছে।
খাকি জামা পড়া, বলছেন, ‘ফুট দিয়ে যান’।
প্রথম মনে হবে কলকাতা পুলিশের কর্মী।
না, এঁরাও 'পুলিশের লোক', তবে এই পাঁচ দিনের জন্য।
বছর ১৭‘র রোহিত পুরকাইত। বাড়ি চাম্পাহাটি। বাবা দিনমজুর। চাম্পাহাটির স্কুলে পড়লেও, এনসিসি করেন গড়িয়াহাট আইটিআই-তে। তাই পুজোর সময় তাদের কলকাতা পুলিশ ‘ডিউটিতে’ নেয়। এটা রোহিতের প্রথম বছর।
-"আগে বন্ধুদের সাথে আসতাম পুজো দেখতে কলকাতার। আর এবার ট্রাফিক সামলাচ্ছি।"
সকাল ৮ টা থেকে বেলা ৩ টে পর্যন্ত কাজ করতে হয় ওদের। রোজ ৬২৬ টাকা হাতে পায়।
কাজ কী?
পুলিশের সঙ্গে ট্র্যাফিক সামলাতে হবে তাঁদের। পুজোয় আনন্দে মেতে ওঠা মানুষের কোন বিপদ যাতে না হয়। গাড়ি চলাচল যাতে ঠিক থাকে এই পাঁচ দিন, সেদিকে নজর রাখা তাঁদের কাজ।
ভিড় সামাল দিতে থাকা সুমিত প্রথমে খুব একটা কথা বলতে চাননি। তারপর কিছুটা ‘চাপ’ মুক্ত হওয়ার পর রাজি হলেন কথা বলতে।
ভালো লাগে পুজোর সময় কাজ করতে?
- না লাগে না। কিন্তু করতে হবে। শুধু পুজো নয়, গঙ্গাসাগর মেলার সময়েও আমরা ডিউটি করি বাবুঘাটে।
বোঝা গেলো কাজে ফাঁক রাখতে রাজি নন একেবারেই।
শুধু রোহিত একা নন। কলকাতা শহরের প্রতিটি রাস্তায় অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের দেখা যায় এই সময়। তাঁরা কেউ হয়ত জানেন না পরে পুলিশে কাজ করবেন নাকি সেনায়। কিন্তু যে সময় গোটা শহর জুড়ে তাদের বয়সী ছেলে মেয়ে রাস্তায় আনন্দে মাতছে তখন তাঁরা ব্যস্ত থাকছে তাদের সুরক্ষার জন্য।
রোহিত এর সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখা হলো আরও একজনের সঙ্গে। না। তিনি এনসিসি করেন না। তাঁর বয়স রোহিতের থেকে বেশি। নাম রাহুল রায়।
রাহুল যে জামাটা পড়ে আছেন তাতে লেখা কলকাতা পুলিশের স্বেচ্ছাসেবক। এঁরা এনসিসি সদস্য নন।
কলকাতা পুলিশ পারিশ্রমিক দেয়। কত, জানা যায়নি। বলা ভালো দু'জনের মধ্যে কেউ সেটা বলতে চাইলেন না।
রাহুলের এই কাজে এটা দ্বিতীয় বছর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমবার মনটা খারাপ হয়েছিল। এবার আর সেটা নেই। সব সময় তো আর ডিউটি করতে হয় না। যখন ফাঁকা থাকি তখন একটু ঘুরে নেই।’’
একটু থেমে সে তার পকেট থেকে ফোটা বের করে বলে, ‘‘এই যে এটা তো আছে, ফেসবুকে তো সব দেখতি পাই।’’
রোহিত, রাহুল দুজনের ইচ্ছা সেনায় যুক্ত হওয়া। কিন্তু ওরা দুজন জানে এই লড়াই অত্যন্ত কঠিন। রোহিত বেশ উৎসাহের সাথে বলে যদি ফৌজি না হতে পারি তবে এসএসসি দিয়ে মাস্টার হব।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এত দুর্নীতি সে কথা জানো?
কিছুটা থেমে ১৬ বছর বয়সের ছেলেটা আবার একটা আকারে বলতে শুরু করলো, "হ্যাঁ কাগজ পড়ি খবর দেখি সব জানি।"
Comments :0