অলকেশ দাস
ইতিহাস তার প্রগাঢ় সত্য অক্ষরমালায় ধরে রাখে। সেই ইতিহাস নতুন বিন্যাসে আমাদের চেনা জগতের অচেনা কিছু কোলাজ হিসাবে ফিরে আসে। এটা ১৯২৭ সালের পঁচিশে ডিসেম্বরের ঘটনা। স্থান মহারাষ্ট্রের মাহাদ। সময় ঠিক রাত ন'টা। ৯৭ বছর আগের সেই দিনের ঘটনার প্রস্তুতির পর্ব চলছিল আগের দু'দিন ধরে। ছয়জন মানুষ একটা গর্ত খুঁড়ছিল। দেড় বর্গফুটের। যার গভীরতা ছয় ইঞ্চি। গর্তের মধ্যে চন্দন কাঠ রাখা। গর্তের চারদিকে চারটে খুঁটি । সেখানে তিনটে ব্যানার লাগানো। সেখানে লেখা-মনুস্মৃতি দহন ক্ষেত্র। অস্পৃশ্যতা ধ্বংস হোক। ব্রাহ্মণ্যবাদকে কবর দাও। স্বেচ্ছাসেবকেরা ততক্ষণে শপথ নিয়ে ফেলেছে। সেই শপথের মূল মর্মবস্তু ছিল— জন্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা চতুর্বর্ণ মানি না। জাত ভেদে বিশ্বাস করি না। অস্পৃশ্যতা হিন্দুত্বের এক অভিশাপ, আমি সততার সঙ্গে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়ে তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করব। ব্রাহ্মণ্যবাদ আরোপিত খাবার এবং পানীয় সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা মানবো না। আমি বিশ্বাস করি যে অস্পৃশ্যদের সমান অধিকার আছে, মন্দিরে প্রবেশ করার, জলাধারে, বিদ্যালয়ে ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ইত্যাদি। আম্বেদকর অবশেষে এলেন। তার আশঙ্কা ছিল। যে মনুস্মতির বিরুদ্ধে তিনি লড়ছেন তাকেই সামনে রেখে ব্রাহ্মণ্যবাদ 'ছোটজাত' এর নামে পায়ের তলায় পিষে দিচ্ছে এক বড় অংশের শ্রমজীবী মানুষকে। এই মর্মন্তুদ ইতিহাসের স্মৃতিসঞ্জাত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার তার ছিল বিস্তৃত। তিনি জানতেন দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কের সমাধান সংঘাতে -লড়াইতে। সমাজটা উপরে সরল জল মনে হলেও আসলে নিচে ঘুর্ণি। সেইজন্যে মনুস্মৃতি দহনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এত সহজ হবে না। রাস্তায় বাধার কাঁটার জাল বিছানো হবে। সেই জন্য সড়ক পথ পরিহার করে 'পদ্মাবতী' নৌকার শরণাপন্ন হওয়া। বোম্বে থেকে নৌকায় দাসগাও বন্দর হয়ে নামলেন মাহাদে। তারপর মনুস্মৃতি দহনের তৈরি হওয়া বেদীতে মনু স্মৃতির একটা একটা করে পাতা ছিড়ে আগুনে নিক্ষেপ করলেন। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো বৈষম্যের মনুস্মৃতি। আম্বেদকর পরে বলেছিলেন মনুস্মৃতি সামাজিক সমতার একেবারেই বিপরীতে। বরং সামাজিক বৈষম্যের জনক, উৎসাহ দাতা। মনুস্মৃতি দহন আসলে একটা প্রতিবাদ। বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে। যে মনুস্মৃতিকে ধারণ করে সে কিছুতেই অস্পৃশ্যের স্বার্থে কল্যাণে ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না। গান্ধীজী যেমন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হিসাবে বিদেশি বস্ত্র পোড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন মনুস্মৃতি দহনও ঐরকম একটি প্রতীকী কার্যক্রম। সমতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে। বর্ণ ব্যবস্থার অবসানের লক্ষ্যে।
কিন্তু যে মনুস্মৃতি নিয়ে এত বিতর্ক আসলে সেটা কি? একটি প্রাচীন আইনি গ্রন্থ— যা মানুষের জাতি ও লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে বিধি ও আচরণবিধি প্রতিষ্ঠা করেছে। মনুসংহিতা বলেছে মানুষের কর্তব্য সম্পর্কে। সেদিক দিয়ে এটা নীতিশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ। অন্যদিকে এটা আইনি বিষয়ক একটি গ্রন্থ যাতে ধর্ম ও নীতিকথা একাকার করা হয়েছে। মনুসংহিতা বলেছে জাতপাত সম্পর্কের কথা।
মনুসংহিতায় শুদ্রের শিক্ষায় কোনও অধিকার রাখা হয়নি। বলা হয়েছে যে এরা শিক্ষা গ্রহণের উপযুক্তই নয়। এদের সৃষ্ট ভগবানকে দিয়ে নিদান দেওয়া হয়েছে যে শুদ্রের জন্ম আসলে সমাজে পদপিষ্ট হওয়ার জন্যই। একে আশ্রয় করেই জাত-বর্ণ ভিত্তিক সমাজ বিন্যাসের স্থায়ী অসাম্য সৃষ্টি করে চিরন্তর শোষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মনুসংহিতা ছিল উচ্চবর্ণের মানুষের কলমের ফসল। আম্বেদকার মনুসংহিতাকে বলেছিলেন ব্রাহ্মণ্যবাদের বিজয় উৎসব।
আম্বেদকার মনে করতেন যে মনুস্মৃতি জাত প্রথাকে মহিমান্বিত করেছে। বর্ণপ্রথাকে সংহত করেছে। তথাকথিত উচ্চ বর্ণের মানুষের বৈষম্যকে বৈধতা দিয়েছে। আর সেই বৈষম্যের জয়গান করেছে। দলিতদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করার বিধান মনু সংহিতার। পিতৃতান্ত্রিক নিয়মকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। কিনে নিয়েছে দলিতের মৌলিক অধিকার। মনুস্মৃতি দহন দিবস পালনে আম্বেদকরের লক্ষ্য ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদের পরিকল্পনায় যারা নিপীড়িত তাদের জাগ্রত করা। অযৌক্তিক বৈষম্যের সমাজের উদ্বাহু স্তুতির নিন্দা করা। অসমতা তৈরি করার অন্যতম উৎস ধ্বংস করা।
মনু বলেছেন-লোকানাস্তু বিবৃদ্ধ্যর্থং মুখবাহুরুপাদত: । মুখ, বাহু, উরু, পা থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্রর সৃষ্টি হয়। ব্রহ্মার পা থেকে সৃষ্ট— এই অনুষঙ্গে শুদ্রকে করা হলো ইতরতর। এইভাবে পরবর্তীতে সমাজের তথাকথিত ছোট জাতের উপর মনুসংহিতা উদগীরণ করেছে সীমাহীন ঘৃণা। বৈষম্য। প্রশ্ন করার ক্ষমতা ও সাহসকে দমন করেছে ধর্মের নাগপাশে। সেই বঞ্চনার ধারাবাহিকতা আজও প্রসারিত। জন্ম থেকে মৃত্যু ব্রাহ্মণ্যবাদকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সমাজে লৌকিকতা, সংস্কার সৃষ্টি করে। তৈরি করেছে জন্মান্তর। লোক -পরলোক। পরলোকেও ব্রাহ্মণ্যবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার আয়োজন করে রেখেছে।
অর্ধেক আকাশে নারী— এই বক্তব্য তাচ্ছিল্যে বর্জন করেছে মনুস্মৃতি। এখানে পুরো আকাশেই বিরাজমান পুরুষেরা। মনুসংহিতা প্রজননের প্রয়োজনে নারীকে পশুর সঙ্গেও তুলনা করেছে। নারীগর্ভকে জমির সঙ্গে তুলনা করেছে। নারীরা যাতে 'গৃহদীপ্তি' হয় তার উপায় বাতলেছে মনুস্মৃতি। নারীকে রূপচর্চা, শিশু পালন, ধাত্রীবিদ্যা ইত্যাদিতে বেঁধে রাখো। যাতে সে বাইরের জগতে পুরুষের অংশীদারিত্বের ধারেকাছে যেতে না পারে। প্রতিমুহূর্তে মনুসংহিতা নারীকে স্মরণ করিয়েছে-তুমি পুরুষের পদানত। তোমার স্বাধীন কোনও মন নেই। তোমার কোনও ইচ্ছা থাকতে পারে না। মনুস্মতিতে নারীর বেদনাময়, বঞ্চনাময় অবস্থান। নারীদের স্বভাব হলো পুরুষদের দূষিত করা। জ্ঞানী গুণী মানুষকে স্ত্রী লোকেরা বিপথগামী করতে পারে— মনুস্মৃতি শিখিয়েছে। পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা -এর উৎস মনুস্মৃতি। অর্থাৎ স্ত্রীর কাজ শুধু সন্তান উৎপাদন করা। নারীকে অপবাদ দিয়েছে মনুস্মৃতি, বলেছে নারী কখনো কোনও কিছু গোপন করতে পারে না। সেজন্য সে বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিচার কাজে নারীর ভূমিকা নেই, এমনকি সাক্ষী দেওয়ার অধিকারও তার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যাকে বলা হয়েছে বুদ্ধির স্থিরতা নেই-সে কিভাবেই বা সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হবে?
নারীর উত্তরাধিকার মনুস্মৃতিতে স্বীকার করা হয়নি। মনুসংহিতাতে কোনও যুক্তি ছাড়াই মেয়েদের জ্ঞানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কারণ সে নাকি অশুদ্ধ। মনুসংহিতায় উল্লেখ হয়েছে যে বিবাহ একজন নারীর বাবা এবং তার স্বামীর মধ্যের চুক্তি। বাবার কর্তৃত্ব থেকে স্বামীর কর্তৃত্বে পৌঁছানো। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে পরিবারে যদি মহিলারা হিংসার সম্মুখীন হয় তাহলে তা মেনে নিতে হবে। এটি এমন এক ধর্মগ্রন্থ যেখানে নারী পুরুষের পায়ে নয়,পায়ের তলায়। তা বলতে পারেনি মনুস্মৃতি। ব্রাহ্মণদের বহুবিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে মনুসংহিতা। এই মেয়েদের কোনও বয়সের আগল ছিল না। এখান থেকেই এসেছে-বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা। বলা হয়েছে ব্রাহ্মণদের এমন স্থানে ভোজনে বসাতে হবে যে ভজনরত ব্রাহ্মণদের যেন চণ্ডাল, কুকুর, কুক্কুট ,শুকর ও রজস্বলা নারী দেখতে না পায়। এর অর্থ নারী কুকুর,শুকর, কুক্কুটের সঙ্গে তুলনীয়। নারী কখনো স্বাধীন নয়। এক অনিশ্চিত কাল পর্বে মেয়েদের জীবন যুদ্ধকে থামিয়ে দিয়েছে মনুসংহিতা। বলেছে- নারী কখনো স্বাধীন নয় । ন ভজেৎ স্ত্রী স্বতন্ত্র্তাম। নারীর নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, রুচিবোধের কোনও মর্যাদা নেই। শুদ্র ও নারীকে অমর্যাদা, বৈষম্যের সমাসনে বসিয়েছে মনুসংহিতা।
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টাব্দ তৃতীয় শতাব্দীর সময়কালে মনুস্মৃতি লেখা হয়েছিল। সেই সময় প্রতিবাদী বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রখর প্রভাব । প্রয়োজন ছিল নতুনভাবে হিন্দু ধর্মের প্রতিষ্ঠার। সেই প্রচেষ্টায় ও সমাজে ব্রাহ্মণদের মর্যাদা উদ্ধারের প্রয়োজনেই মনুসংহিতা গ্রন্থের অবতারণা। ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বিশেষভাবে তুলে ধরার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে সেখানে। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত। ক্ষত্রিয়দের মাথার ওপরে ব্রাহ্মণদের প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির ভিত্তি দৃঢ় করা সম্ভব হতো না। মনুসংহিতা ছিল ব্রাহ্মণদের নতুন করে হারানো জমি খুঁজে পাওয়া। ব্রাহ্মণরা মনুসংহিতার সর্বত্রই পূজিত। জন্মানো মাত্রই পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়ে যায় ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণো জায়োমানো হি পৃথিব্যামধিজয়েত। পৃথিবী বলতে গেলে ব্রাহ্মণদের। পৃথিবীর যা কিছু সম্পদ সবই ব্রাহ্মণের সম্পত্তি। নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পৃথিবীর সবকিছু ব্রাহ্মণ একাই পাওয়ার যোগ্য। একচ্ছত্র অধিকার বলে ব্রাহ্মণ যা খায় যা কিছু পরিধান করে সবই তার নিজের। আর অন্যেরা যা ভোগ করে তা একান্তই ব্রাহ্মণদের। মনুসংহিতায় শাস্ত্রে একমাত্র অধিকার ব্রাহ্মণদের। কেবলমাত্র জন্মের দাবিতেই ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন হয়।
মনুস্মৃতি জন্ম থেকেই শুদ্রকে হীন করে রেখেছে। মৃত্যুতেও তার বিরাম নেই। সমাজের দেগে দেওয়া ছোট জাতের ফল পরিণত বয়সেও বড়লোক- গরিব লোক নির্বিশেষে হয়রানি করে মানুষকে। শূদ্র কখনো দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনা। দাসত্বের জন্য তার জন্ম । দাসত্ব তাদের স্বভাবজাত। তাকে কে মুক্ত করবে? ব্রাহ্মণ এবং শুদ্রদের নিয়ে সাপ লুডো খেলেছে মনুসংহিতা। তবে এখানে শূদ্ররা সব সময় সাপের মুখে আর ব্রাহ্মণেরা মইয়ের মাথায়। লঘু পাপে গুরু দণ্ড শুদ্রদের জন্য।
মনুস্মৃতির কড়া নির্দেশ— শুদ্রদের ধর্মে কোনও অধিকার থাকবে না। তপস্যাতেও নয়। তার একটাই তপস্যা ব্রাহ্মণের সেবা করা। এতেই তার স্বর্গ লাভ। উদয়াস্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে শূদ্র পাবে অন্যের পাতের ফেলে দেওয়া খাবার, ছেঁড়া কাপড়।
ব্রাহ্মণের সঙ্গে শুদ্রের এতটাই ফারাক করে রাখা হয়েছে যে মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে--শুদ্র যদি ব্রাহ্মণের সঙ্গে একাসনে বসতে চায় তার পশ্চাদ্দেশের ত্বক শলাকা দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে তাকে নির্বাসন দেওয়া হবে। ধন সঞ্চয় করলেই শুদ্রর প্রভাব বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই বলা হলো শুদ্রর কোন ধন থাকতে পারে না। তার যাবতীয় সম্পদের মালিক অন্য, ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ মানে প্রভু আর শুদ্র মানে দাস।
এখন এ'কথা স্পষ্ট যে সঙ্ঘ পরিবার, বিজেপি এবং তার শাখাপ্রশাখা মনুসংহিতাকে সংবিধান হিসাবে দেখতে চায়। যার ভিত্তি হিন্দু রাষ্ট্র। এদের গুরুর গুরু সাভারকর সেই কবে বলেছেন
"মনুস্মৃতি হলো সেই ধর্মগ্রন্থ যা আমাদের হিন্দু জাতির ভিত্তির পরে সবচেয়ে পূজনীয় এবং যা প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সংস্কৃতি-প্রথা চিন্তা ও অনুশীলনের ভিত্তি হয়ে উঠেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই বইটি আমাদের জাতির আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক যাত্রাকে সংহিতাবদ্ধ করেছে। এমনকি আজও কোটি কোটি মানুষ তাকে অনুসরণ করে চলেছে। হিন্দুদের জীবন ও অনুশীলন মনুস্মৃতির উপর ভিত্তি করে। আজ মনুস্মৃতি হিন্দু আইন এবং এটাই মৌলিক"। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রকে সরানোর প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এদের মনুসংহিতা অভিমুখ পরিষ্কার হয়েছে। মহিলাদের অধিকারের উপর বহুবিধ ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মধ্যে বোঝা যায় যে এরা মহিলাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অন্ধকারে ঠেলে ফেলতে চায়। ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় রীতির নামে। যা কিছু প্রগতিশীল এবং অগ্রসরমান তার বিরুদ্ধেই বিজেপি ভূমিকা গ্রহণ করে। কোনও যুক্তি দিয়ে নয়। বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে। বিজেপি সরাসরি পৃষ্ঠপোষণা করে নারীবিদ্বেষ, রক্ষণশীলতা, সঙ্কীর্ণতা, গোঁড়ামিকে। রাষ্ট্রপতি , মুখ্যমন্ত্রী মহিলা বা রাষ্ট্রপতি, মুখ্যমন্ত্রী তফসিলি, আদিবাসী হলেই যে মহিলা, তফসিলি, আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন হয় না বা তাদের সমস্যার সমাধান হয় না প্রচুর উদাহরণে তা স্পষ্ট। জাতের সমীকরণ, ধর্মের মেরুকরণের রাজনীতির অন্তর্নিহিত উপাদান মনুবাদ। এর নেতৃত্বে সঙ্ঘ পরিবার, বিজেপি। এরাজ্যে তার যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে তৃণমূল। ৯৭ বছর আগে আম্বেদকর মনুস্মৃতির দহনে শামিল হয়েছিলেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সমতার পক্ষে, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। সেই বৈষম্য,অসমতা, অস্পৃশ্যতা আজ ক্রমবর্ধমান। সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আম্বেদকরের লড়াই আজ এক প্রতীক। সেখানেই হিন্দুত্ববাদীদের গাত্রদাহ। আর সেকারণেই সংসদে অমিত শাহের আম্বেদকর অবমাননা।
Comments :0