Pushback

বীরভূমের বাসিন্দাদের ‘পুশব্যাক’ বাংলাদেশে, তীব্র প্রতিবাদ সিআইটিইউ’র

জাতীয় রাজ্য জেলা

বাংলাদেশের নাগরিক সন্দেহে মহিলা শিশু সহ বীরভূমের ছয় বাসিন্দাকে আটক করেছিল দিল্লি পুলিশ। তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েও দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এই খবর জানালেন বীরভূম জেলার সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী। 
মুরারই-১ ব্লকের মুরারই পঞ্চায়েতের ধিতোড়া গ্রামের দানিশ শেখ জানিয়েছেন যে তাঁর মেয়ে সুইটি বিবি, জামাতা তাঁদের পাঁচ বছরে শিশু সন্তানকে নিয়ে দিল্লিতে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। সেখানে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য পুলিশ তাঁদের আটক করে। নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নানা প্রমাণপত্র দেখালেও ছাড়া হয়নি। এমনকি তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মুরারই-২ ব্লকেও এই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ, কোচবিহারের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের এভাবেই হেনস্তা করছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিজেপি সরকার। দিল্লির পাশাপাশি ওড়িশাতেও সম্প্রতি এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবে ছড়াচ্ছে ক্ষোভ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে কোন কাজ না পেয়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যের এই পরিযায়ী শ্রমিক এবং পরিবারকে হেনস্তা করছে প্রশাসন। তাঁদের বাংলাদেশী বলে আটক করা হচ্ছে। কাজ করতে গিয়ে অত্যাচারের মুখে পড়ছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুধুমাত্র সংখ্যলঘু মুসলিম ও বাংলাভাষী হওয়ার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশী তকমা দিয়ে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন ও চরম হেনস্তা করছে। এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার নির্বাক এবং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন।’’ 
চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘‘বীরভূম জেলার মুরারই ও পাইকর এলাকার যে ৬ বাসিন্দাকে বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে তাঁদের অবিলম্বে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে। সিআইটিইউ বিজেপি’র এই জঘন্য রাজনীতির তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে।’’
মুরারই-১ ব্লকের মুরারই পঞ্চায়েতের ধিতোড়া গ্রামের দানিশ শেখ অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে সুইটি বিবি, জামাই সহ তাদের একটি পাঁচ বছরে শিশুকে নিয়ে দিল্লিতে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। সেখানে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য  পুলিশ তাদের আটক করে। তাঁরা নিজেদের সমস্ত নাগরিকের প্রমান পত্র দেখালেও তাদের ছাড়েনি। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।’’ 
মুরারই-২ ব্লকের পাইকর গ্রামের একজন বয়স্ক বিধবা মহিলা মঙ্গলবার অভিযোগ করে জানান, ‘‘আমরা খুব গরিব মানুষ। গ্রামে একশো দিনের কাজ না থাকায় কয়েক বছর ধরে আমার ছেলেরা সেখানে ভাঙাচোরা জিনিসের ব্যবসা করে। তাদের বাংলাদেশী বলে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সমস্ত প্রমাণ দেখালেও কোন কথা শোনেনি দিল্লি পুলিশ। আমরা এই দেশের গরিব মানুষ। এখন কোথায় কার কাছে যাব তাদের উদ্ধার করতে, ভেবে পাচ্ছি না।’’
উল্লেখ্য মুরারই-২ ব্লকের পঞ্চহর গ্রামের দু'জন ও নলহাটি-২ ব্লকের শুকরাবাদ গ্রামের ১৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ওড়িশা পুলিশ বাংলাভাষী ও সংখ্যালঘু হওয়ায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার। গত ২৬ মে ওড়িশা পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশী বলে গ্রেপ্তার করেছে। আধার, ভোটার কার্ড সহ স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র দেখালেও শোনেনি। ১৯ জনকেই বালেশ্বরের ডিটেনশন ক্যাম্পে দেড়মাস ধরে আটক করে রাখে। তার পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ওড়িশা পুলিশ গত ৩ জুলাই তাঁদের ছেড়ে দেয়।
বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে বিশেষ করে বাংলাভাষী সংখ্যালঘু পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে পুলিশের জুলুম বাজির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সিউড়িতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা সিআইটিইউ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী, শ্রমিক কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন পেটের তাগিদে পরিবাররের মানুষগুলির মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে। জেলার প্রচুর মানুষ ভিন রাজ্যে বিশেষত নয়ডা, ওড়িশা, বেঙ্গালুরু, রাজস্থান, দিল্লিতে কাজ করেন। এখন সেখানে পুলিশ প্রমাণপত্র চাইছে। ভোটের কার্ড, আধার কার্ড দেখেও সন্তুষ্ট হচ্ছে না সেখানকার পুলিশ। পঞ্চায়েতের, বিডিও’র কাগজ চাইছে। আর তাতেই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ও তাদের পরিবারের মানুষের রাতের ঘুম উবে গেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি’র এই ‘পুশব্যাক’ নীতি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন দীপঙ্কর চক্রবর্তী।

Comments :0

Login to leave a comment